‘প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে চুরি হয়েছে সাগর সম’,নথি নিয়ে আদালতের পথে ফিরদৌস

রাজ্যে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে সিবিআইয়ের নিশানায় প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। টাকার বিনিময়ে অযোগ্যদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে মনে করছে সিবিআই। আর এই কাজের সঙ্গে পর্ষদের লোকজনের একাংশই জড়িত। ফলে প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের অজ্ঞাতপরিচয় কর্মী/অফিসারদের উল্লেখ করে এফআইআর করেছে সিবিআই।

এর আগে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বাগদার চন্দন মন্ডলকে হেফাজতে নিয়ে জেরা করতে নতুন করে এফআইআর করার নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশ মেনে সিবিআই যে এফআইআর করেছে, তাতে মূল অভিযোগ করা হয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের বিরুদ্ধে। অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, প্রতারণা, নথি জাল, গুরুত্বপূর্ণ নথি জালিয়াতি করে হাতানো, সরকারি অফিসারদের ঘুষ নেওয়া-সহ মোট ৯টি ধারায় অভিযোগ দায়ের করেছে সিবিআই।

ওই মামলায় অভিযোগকারীর আইনজীবী ফিরদৌস শামিম শনিবার বলেন, ‘প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে যে সাগর চুরি হয়েছে, সেই সংক্রান্ত নথি আছে আমাদের কাছে। সেই সব সমযমতো আমরা আদালতে পেশ করবো।’

এই মামলায় এখনও পর্যন্ত কয়েক ধাপে বিজ্ঞপ্তি জারি করে যথাক্রমে ৬৮ জন, ১৮ জন, ১ জন, ১৩জনকে বেআইনি ভাবে নিয়োগ করা হয়েছে, এমন অভিযোগ তুলে নথি জমা দেওয়া হয়েছে। সিবিআইয়ের বক্তব্য, ২০১৪ সালের টেট অনুযায়ী ২০২১ সালের শারদোৎসবের আগে যে ১৬ হাজার ৫০০ জনকে নিয়োগ করা হয়েছিল, সেই তালিকা ধরে প্রথমে তদন্ত শুরু হচ্ছে। আপাতত এফআইআর করে তদন্তে কিছু কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই তদন্তকারীদের লক্ষ্য বলে সূত্রের খবর। কারণ, আগামী সপ্তাহে এই তদন্তের প্রাথমিক অগ্রগতি নিয়ে সিবিআই-কে রিপোর্ট দিতে হবে আদালতে।

রাজ্যের শিক্ষা দফতরের একাধিক আধিকারিক এখন সিবিআইয়ের আতস কাঁচের তলায়। প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতি তদন্তে একাধিক নজির সামনে এসেছে সিবিআইয়ের কাছে। দেখা যাচ্ছে প্রার্থীরা সাদা খাতা জমা দিয়েছিলেন। শুধু নাম ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর লিখে ফাঁকা খাতা জমা দিয়েছিলেন প্রার্থীরা। এরপর একটি উত্তরও না লিখেই চাকরি পেয়ে গিয়েছেন একাধিক প্রার্থী। এমন ঘটনাও জানতে পেরেছে সিবিআই।

সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে এক সিবিআই আধিকারিক জানিয়েছেন, একাধিক আধিকারিক ও জুনিয়র লেবেলের কর্মী, এমনকী ক্লার্করা এই প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। ওই আধিকারিকের অভিযোগ, এমন একাধিক খাতা পাওয়া গিয়েছে যেগুলি একেবারে ফাঁকা অবস্থায় জমা দেওয়া হয়েছিল। শুধুমাত্র নাম আর রেজিস্ট্রেশন নম্বর লেখা হয়েছিল। সেই প্রার্থীরাও নিয়োগপত্র পেয়ে গিয়েছেন।

এদিকে এই ঘটনায় শিক্ষা দফতরের আধিকারিক ও কর্মপ্রার্থীদের মধ্যে বিপুল টাকার লেনদেন হয়েছে বলে অভিযোগ। এমনকী তার একাধিক প্রমাণও পেয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।

সিবিআইয়ের অনুমান, এই ঘটনার সাথে একাধিক আধিকারিক এবং জুনিয়র লেভেলের কর্মী, এমনকি ক্লার্করাও জড়িয়ে রয়েছে। কার্যত বিপুল টাকার লেনদেন হয়েছে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে বলে অভিযোগ করা হচ্ছে।  শিক্ষক নিয়োগে যে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে তা ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে এবার সিবিআই কী পদক্ষেপ নেয় সেদিকে নজর থাকছে ওয়াকিবহাল মহলের।

Related Posts

© 2024 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy