
বিশ্ব প্রযুক্তি জগতে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করে চলেছে চিন। সম্প্রতি দেশটি বিশ্বজুড়ে 10G নেটওয়ার্ক পরিষেবা চালু করে এক নতুন মাইলফলক স্থাপন করেছে, যা বর্তমানের দ্রুততম গিগাবিট ব্রডব্যান্ডের থেকেও কয়েক গুণ বেশি গতিসম্পন্ন। এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মূল বৈশিষ্ট্য হলো এর অবিশ্বাস্য ডাউনলোড গতি – জানা গেছে, চিনের নতুন 10G ক্লাউড ব্রডব্যান্ড হাই-স্পিড ইন্টারনেটের সাহায্যে মাত্র ২ সেকেন্ডের মধ্যে 90GB আকারের একটি বিশাল ফাইল ডাউনলোড করা সম্ভব।
চিনের প্রথম সারির মোবাইল নির্মাতা সংস্থা হুয়াওয়ে এবং সে দেশের প্রধান টেলিকম অপারেটর চায়না ইউনিকম যৌথভাবে এই যুগান্তকারী পরিষেবাটি চালু করেছে। এই উচ্চ-গতির নেটওয়ার্কটি নির্মিত হয়েছে সর্বশেষ 50G PON (প্যাসিভ অপটিক্যাল নেটওয়ার্ক) প্রযুক্তির উপর ভিত্তি করে। এই বিশেষ প্রযুক্তি প্রচলিত ফাইবার অপটিক পরিকাঠামোর তুলনায় অনেক দ্রুত তথ্য আদানপ্রদান করতে সক্ষম এবং এটি নেটওয়ার্কের গতিকে গিগাবিট স্তর থেকে সরাসরি 10G স্তরে উন্নীত করেছে। এর ফলে ডেটা স্থানান্তর বা ডাউনলোডের সময় (ল্যাটেন্সি) কমে মাত্র কয়েক মিলিসেকেন্ডে নেমে এসেছে, যা প্রায় তাৎক্ষণিক যোগাযোগের সমান।
স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় চায়না টেলিকম ইতিমধ্যেই সাংহাইয়ের ইয়াংপু জেলায় পরীক্ষামূলকভাবে এই পরিষেবা চালু করেছে। রুশ মিডিয়া আউটলেট আরটি-র এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, একটি আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে ব্যক্তিগত ব্যবহারের ক্ষেত্রে এই নতুন নেটওয়ার্ক সংযোগের মাধ্যমে 9834Mbps ডাউনলোড গতি এবং 1008Mbps আপলোড গতি রেকর্ড করা হয়েছে। ল্যাটেন্সি ছিল মাত্র ৩ মিলিসেকেন্ড।
এই অবিশ্বাস্য নেটওয়ার্ক গতি ব্যবহারকারীদের ডিজিটাল অভিজ্ঞতাকে সম্পূর্ণ নতুন স্তরে নিয়ে যাবে। ক্লাউড গেমিং, রিমোট সার্জারি, 8K ভিডিও স্ট্রিমিং, এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) নির্ভর স্মার্ট হোম অ্যাপ্লিকেশনের মতো অত্যাধুনিক প্রযুক্তিগুলি এর উচ্চ-ব্যান্ডউইথ এবং অত্যন্ত কম ল্যাটেন্সির কারণে আরও মসৃণ ও কার্যকরভাবে কাজ করতে সক্ষম হবে। স্মার্ট সিটিগুলির পরিকাঠামো উন্নয়নেও এই পরিষেবা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
একদিকে যখন চিন 10G প্রযুক্তির যুগে প্রবেশ করে ফেলেছে, ঠিক তখনই ভারত ২০৩০ সালের মধ্যে নিজস্ব 6G পরিষেবা আনার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। ভারতের লক্ষ্য হলো এই 6G নেটওয়ার্ককে দেশের প্রতিটি প্রান্তে সহজলভ্য, টেকসই এবং নিরবচ্ছিন্নভাবে উপলব্ধ করা। যদিও বর্তমানে ব্রডব্যান্ড গতির নিরিখে ভারত বিশ্বের বহু উন্নত দেশ থেকে কিছুটা পিছিয়ে আছে, কিন্তু ২০৩০ সালের মধ্যে 6G নেটওয়ার্ক চালু হওয়ার পর ডিজিটাল যোগাযোগের ক্ষেত্রে ভারত বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতায় আর পিছিয়ে থাকবে না বলেই আশা করা হচ্ছে। চিনের এই 10G লঞ্চ বিশ্বজুড়ে অন্যান্য দেশকেও উচ্চতর গতির নেটওয়ার্ক গবেষণায় আরও মনোযোগী হতে উৎসাহিত করবে বলে মনে করা হচ্ছে।