চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে পণ্যের দাম আট শতাংশের বেশি বাড়ানোয় বিক্রি কমেছে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান ইউনিলিভারের। ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বছরের দ্বিতীয় ভাগে তাদের ব্যয়স্ফীতি আরও বাড়তে পারে। তবে মানুষ এখন তুলনামূলক সস্তা পণ্যের প্রতি বেশি আগ্রহী হয়ে ওঠায় বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ডটি বাজার হারাতে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা। খবর রয়টার্সের।
ইউনিলিভারের ধারণা ছিল, চলতি বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর মাসে ব্যয়স্ফীতি ১৫০ কোটি ইউরো হতে পারে। তবে প্রতিষ্ঠানটি এখন বলছে, বছরের দ্বিতীয়ার্ধে তাদের ব্যয়স্ফীতি ২৭০ কোটি ইউরো, অর্থাৎ পূর্বানুমানের প্রায় দ্বিগুণ হতে চলেছে।
করোনাভাইরাস মহামারি বৈশ্বিক অর্থনীতির যে ক্ষতি করেছে, তার ক্ষত না শুকাতেই ইউক্রেন যুদ্ধ নতুন বিপদ ডেকে এনেছে। বিদ্যুৎ, শ্রম ও পরিবহনে বাড়তি খরচের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্য বা সেবার দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছে। আর তার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বিক্রির পরিমাণে।
রয়টার্সের খবর অনুসারে, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ইউনিলিভারের মোট বিক্রি অন্তত এক শতাংশ কমেছে। এটিকে খরচ-সংবেদনশীল ক্রেতারা সস্তা পণ্যে আগ্রহী হওয়ার প্রাথমিক লক্ষণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
ইউনিলিভারের প্রধান নির্বাহী অ্যালান জোপ বলেছেন, মূল্য ও পরিমাণের যে ব্যবধান তাতে মনে হয়, আমরা অপরিচিত কোনো অঞ্চলে রয়েছি। যদিও ভোক্তাদের ওপর তীব্র চাপ সম্পর্কে আমরা সচেতন, তবু আমাদের বিশ্বাস, বাড়তি খরচের মারাত্মক চাপের মুখে ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ানোই সঠিক সিদ্ধান্ত।
লাক্স, ডাভ, সানসিল্ক, ক্লিয়ার, রেক্সোনা, লাইফবয়, ভ্যাসলিন, ক্লোজআপ, পেপসোডেন্ট, সার্ফ এক্সেল, এক্স, ম্যাগনাম, নরের মতো জনপ্রিয় অসংখ্য ব্র্যান্ড রয়েছে ইউনিলিভারের। বিশ্বের ১৯০টি দেশের কোটি কোটি মানুষ প্রতিদিন তাদের পণ্যগুলো ব্যবহার করে।
বিশ্লেষকদের মতে, এ ধরনের ভোগ্যপণ্যের দাম আরও বাড়বে। ব্রিটিশ বহুজাতিক ব্যাংক বারক্লেস’র বিশেষজ্ঞ ওয়ারেন আকারম্যান বলেন, ইউনিলিভারের বার্ষিক খরচ এক বছর আগের তুলনায় চারগুণ হয়ে যাচ্ছে। সে কারণেই দাম অনেক বেশি হওয়া দরকার। এটিই সর্বোচ্চ দাম নয়। কথা হচ্ছে, দাম বাড়লে বিক্রির পরিমাণের ওপর কী প্রভাব পড়বে?
বছরের প্রথম প্রান্তিকে লাতিন আমেরিকা অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি ১৬ দশমিক ৪ শতাংশ দাম বাড়িয়েছে ইউনিলিভার। তাদের পণ্যের দাম বেড়েছে অন্যান্য উদীয়মান বাজারগুলোতেও।
গড়ে ৮ দশমিক ৩ শতাংশ দাম বাড়ানোর পর ইউনিলিভারের বিক্রির পরিমাণ কমেছে অন্তত এক শতাংশ। অবশ্য বিশ্লেষকরা ৬ দশমিক ৩ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি ও ১ দশমিক ৭ শতাংশ বিক্রি কমার পূর্বাভাস দিয়েছিলেন।
উৎপাদন ব্যয় বাড়ায় প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় বেশি চাপের মুখে পড়েছে ইউনিলিভার। পিঅ্যান্ডজি কোনো খাদ্যপণ্য বিক্রি করে না। কিটক্যাট উৎপাদক নেসলে তাদের পণ্যগুলোর দাম বাড়ালেও তাতে বিক্রি কমেনি। তবে উদীয়মান বাজারগুলোর ওপর বেশি নির্ভরশীল হওয়ায় সমস্যায় পড়েছে ইউনিলিভার। তাছাড়া চলতি বছর যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দর কমেছেও প্রায় নয় শতাংশ।