ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন এবং আই সি এম আর-এর প্রকাশ করা রিপোর্ট অনুসারে গত এক দশকে আমাদের দেশে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে চোখে পরার মতো। আর এখন তো পরিস্থিতি প্রায় হাতের বাইরেই চলে যেতে বসেছে। পরিসংখ্যান বলছে বর্তমানে প্রতি তিন জন ভারতীয়র মধ্যে এক জন হাইপারটেনশনের শিকার। এখানেই শেষ নয়, এই সংখ্যাটা আগামী দিনে যে আরও বাড়বে, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই চিকিৎসক মহলের। তাই তো নিয়মিত ২ টো করে কাঁচা টমাটো খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। কিন্তু টমাটোর সঙ্গে রক্তচাপের কী সম্পর্ক?
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে উচ্চ রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে টমাটো দারুন ভাবে কাজে আসে। আসলে এই সবজিটিতে রয়েছে লাইকোপেন এবং বিটা ক্যারোটিন নামে বিশেষ কিছু উপাদান, যা শরীরে উপস্থিত ক্ষতিকর টক্সিক উপাদানদের যেমন বের করে দেয়, তেমনি স্ট্রেস লেভেলও দ্রুত কমিয়ে ফেলে। ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে চলে আসতে সময় লাগে না। এখানেই শেষ নয়, টমাটোতে উপস্থিত ভিটামিন ই, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং পটাশিয়ামও রক্তচাপকে দূরে রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই তো বলি বন্ধু, সুস্থ জীবন পেতে আজ থেকেই কাঁচা অথবা রান্না করা অবস্থায় টমাটো খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন উপকার পাবেই পাবেন! এবার বুঝতে পারছেন তো ব্লাড প্রেসারের মতো রোগের বিরুদ্ধে যদি লড়াই চালাতে হয়, তাহলে টমাটোকে সঙ্গে রাখাটা কতটা জরুরি!
প্রসঙ্গত, এই সবজিটি নিয়মিত খাওয়া শুরু করলে যে কেবল রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে, এমন নয়, সেই সঙ্গে মেলে আরও অনেক উপকার। যেমন ধরুন…
১. কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়: শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়তে থাকলে হার্টের কতটা ক্ষতি হতে পারে, তা নিশ্চয় আর বলে দিতে হবে না! তাই তো বলি বন্ধু যারা বেজায় অনিয়ন্ত্রিত জীবন-যাপন করে থাকেন, তারা যদি হঠাৎ করে হার্ট অ্যাটাকের শিকার হতে না চান, তাহলে রোজের ডায়েটে কাঁচা টমাটোকে অন্তর্ভুক্ত করতে ভুলবেন না যেন! আসলে এই সবজিটির অন্দরে উপস্থিত ফাইবার শরীরে প্রবেশ করেই খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে শুরু করে। ফলে হার্টের কোনও ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা যায় কমে। ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের পর এবার হোয়াইট ফাঙ্গাসের হানা! কতটা ভয়ঙ্কর এই সংক্রমণ?
২. হাড় শক্তপোক্ত হয়: একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে টমাটোর অন্দরে উপস্থিত ক্যালসিয়াম, শরীরে প্রবেশ করে এমন খেল দেখায় যে হাড় শক্তপোক্ত হয়ে উঠতে সময় লাগে না। সেই সঙ্গে অস্টিওআর্থ্রাইটিসের মতো হাড়ের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও যায় কমে। এবার নিশ্চয় বুঝতে পরেছেন বন্ধু, নিয়মিত কেন টমাটো খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা! ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি কাদের? সংক্রমণ হলে কী করতে হবে? নয়া নির্দেশিকা প্রকাশ করল AIIMS
৩. ভিটামিন এবং খনিজের ঘাটতি মেটে: নিয়মিত ২ টো করে কাঁচা টমাটো খাওয়া শুরু করলে ভিটামিনের মোট চাহিদার প্রায় সিংহভাগই মিটে যায়। সেই সঙ্গে প্রয়োজনীয় খনিজের ঘাটতিও মিটতে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই দেহের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে সময় লাগে না। শুধু তাই নয়, একাধিক রোগও দূরে থাকতে বাধ্য হয়। ত্বক ভাল রাখতে ডায়েটে থাকুক ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ এই খাবারগুলি, দেখুন এর উপকারিতা ৪. ডায়াবেটিসের প্রকোপ কমে: রক্তে শর্করার মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রেখে টাইপ ১ এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিসকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে টমাটোর কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। আসলে এতে উপস্থিত ফাইবার এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৫. ক্যান্সারের মতো মারণ রোগ দূরে থাকে: টমাটোতে উপস্থিত অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি শরীরে ক্যান্সার সেলের জন্ম আটকাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। ফলে প্রতিদিন যদি ১-২ টো করে টমাটো খাওয়া যায় তাহলে এই মারণ রোগ নিয়ে আর চিন্তার থাকতে হবে না, এমনটাই দাবি চিকিৎসকদের। বিশেষত প্রস্টেট এবং কলোরেকটাল ক্যান্সারকে দূর রাখতে টমাটোর কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে।
৬. হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে: ফাইবার, পটাশিয়াম, ভিটামিন সি এবং কোলিন হার্টের কর্মক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আর এই সবকটি উপাদানই প্রচুর মাত্রায় রয়েছে টমাটোতে। তাই হার্টকে যদি দীর্ঘদিন সুস্থ রাখতে চান, তো রোজের ডায়েটে এই সবজি রাখা মাস্ট!
৭. দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটে: টমাটোয় উপস্থিত লাইকোপেন, লুটেন এবং বিটা-ক্যারোটিন দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটানোর পাশাপাশি ছানির মতো রোগকে দূরে রাখতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৮. কনস্টিপেশনের মতো সমস্যা মেটে: প্রতিদিন সকালে প্রকৃতির ডাক মানেই জ্বালা-যন্ত্রণা-কষ্ট? তাহলে তো আপনাকে টমাটা খেতেই হবে। কারণ এতে উপস্থিত ফাইবার কনস্টিপেশনের সমস্যা দূর করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সঙ্গে হজম ক্ষমতার উন্নতিতে এবং আরও নানা ধরনের পেটের রোগের উপশমেও বিশেষ ভূমিকা নেয়।