দেশের সংকট কাটাতে কৃষকদের বেশি করে ধান চাষের অনুরোধ করলো শ্রীলঙ্কা

তীব্র খাদ্য সংকট কাটাতে আমদানি নয়, স্থানীয় কৃষকদের ওপরই ভরসা করতে হচ্ছে শ্রীলঙ্কাকে। এ কারণে কৃষকদের আরও বেশি ধান চাষের অনুরোধ জানিয়েছে দেশটি। মঙ্গলবার (৩১ মে) লঙ্কান সরকারের এক শীর্ষ কর্মকর্তা এ কথা জানিয়েছেন। খবর রয়টার্সের।

প্রায় ৭০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে ভুগছে শ্রীলঙ্কা। বৈদেশিক মুদ্রার অভাবে খাদ্য, জ্বালানি, ওষুধের মতো অতিজরুরি পণ্য আমদানি করতে পারছে না দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপরাষ্ট্রটি। এরই মধ্যে নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করেছে শ্রীলঙ্কা।

লঙ্কান কৃষিমন্ত্রী মাহিন্দা অমরাবিরা এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এটি স্পষ্ট যে, দেশে খাদ্য পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে। আমরা আগামী পাঁচ-দশ দিনের মধ্যে সব কৃষককে ক্ষেতে নেমে ধান চাষ করার অনুরোধ জানাচ্ছি।

এর আগে শ্রীলঙ্কার নতুন প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে আগামী আগস্ট মাস নাগাদ দেশটিতে ভয়াবহ খাদ্য সংকট হতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। তিনি বলেছেন, কৃষিকাজের জন্য প্রয়োজনীয় সার আমদানি করতে ৬০ কোটি মার্কিন ডলার দরকার হতে পারে, যা জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছে সরকার।

তবে কৃষি বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, এই মুহূর্তে সার আমদানি করলেও তা পৌঁছাতে পৌঁছাতে অনেক দেরি হয়ে যাবে। দেশটিতে পরবর্তী চাষের মৌসুম শুরু হতে চলেছে কিছুদিনের মধ্যেই। ফলে আগামী দুই মৌসুমে ধান, চা ও ভুট্টার মতো প্রধান ফসলগুলোর পুষ্টি জোগাতে পর্যাপ্ত সার পাওয়া যাবে না বলে জানিয়েছেন তারা।

পেরাদেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অধ্যাপক বুদ্ধি মারাম্বে বলেছেন, ব্যবস্থা নেওয়ার পরেও কিছু এলাকায় ধানের ফলন ৫০ শতাংশ কমে যেতে পারে। তার কথায়, আমরা যদি আজকেও সার আনি, তবু তা ভালো ফলনের জন্য দেরি হয়ে যাবে।

অমরাবিরা বলেছেন, ৬৫ হাজার টন সার সংগ্রহের জন্য ভারতের সঙ্গে তাদের আলোচনা চলছে এবং আরও সাতটি দেশে আবেদন করা হয়েছে। তবে সেসব সারের চালান কবে পৌঁছাবে সে বিষয়ে কিছু জানাননি তিনি।

সম্প্রতি বিদেশি ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করেছে শ্রীলঙ্কা। গত এপ্রিলে দেশটিতে খাদ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৬ শতাংশ, ফলে আকাশচুম্বী হয়ে গেছে সব পণ্যের দাম।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবর অনুসারে, শ্রীলঙ্কায় চালের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রতি কেজি ২২০ শ্রীলঙ্কান রুপি। এক কেজি গুঁড়ো দুধ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৯০০ রুপিতে। এছাড়া চিনির দাম কেজিপ্রতি ২৪০ রুপি, নারিকেল তেল ৮৫০ রুপি প্রতি লিটার, এমনকি একেকটি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৩০ রুপি করে।

স্থানীয় এক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, প্রায় ৫০ বছর পর হঠাৎ বেড়ে গেছে কোরোসিনের বাতি ও কাঠ-কয়লার আয়রনের ব্যবহার, তার সঙ্গে বেড়েছে দামও। একেকটি কাচের চিমনির দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫শ রুপি আর কাঠ-কয়লার আয়রন বিক্রি হচ্ছে ৯০০ রুপিতে। বেড়েছে হারিকেনের চাহিদাও। সেখানে হারিকেনের দাম এখন ১ হাজার ৫০০ রুপি পর্যন্ত হাঁকাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

অর্থনীতির এমন নাজুক এমন পরিস্থিতির জন্য লঙ্কান সরকারের ওপর ক্ষোভ বাড়ছে মানুষের। বিক্ষোভকারীরা প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসের পর তার ভাই গোতাবায়া রাজাপাকসেরও পদত্যাগ দাবি করছেন।

Related Posts

© 2024 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy