পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ফের কারফিউ জারি শ্রীলঙ্কায়

দেশের বিক্ষুব্ধ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাজধানী কলম্বোয় কারফিউ জারি করেছে শ্রীলঙ্কার ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহের নেতৃত্বাধীন সরকার।

বুধবার বিশেষ এক সরকারি গেজেটে দেওয়া হয় এ ঘোষণা। গেজেটে বলা হয়, বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) বেলা ১২ টা থেকে শুক্রবার (১৫ জুলাই) বিকেল ৫ টা পর্যন্ত কারফিউ চলবে রাজধানী ও তার আশপাশের এলাকায়।

গেজেটে বলা হয়েছে, শ্রীলঙ্কার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, জননিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক বা তাদের সুপারিশকৃত কোনো কর্মকর্তার স্বাক্ষরিত অনুমোদনপত্র যাদের রয়েছে, তারাই কেবল কারফিউকালে চলাচল করতে পারবেন।

১৯৪৮ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ আর্থিক সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে শ্রীলঙ্কা। বর্তমানে দেশটিতে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ বলতে আর কিছুই নেই। ফলে ২ কোটি ২০ লাখ মানুষ অধ্যুষিত শ্রীলঙ্কা খাবার, ওষুধ, জ্বালানির মতো অতি জরুরি আমদানিও করতে পারছে না।

বর্তমান এই দুরাবস্থার জন্য দেশটির অধিকাংশ মানুষ প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে এবং তার বড়ভাই ও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসের নেতৃত্বাধীন সরকারকে দায়ী করে তাদের পদত্যাগের দাবিতে গত মার্চ থেকেই শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিলেন শ্রীলঙ্কার সাধারণ জনগণ।

প্রায় চার মাস মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবে চললেও গত কয়েকদিন ধরে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে আন্দোলন পরিস্থিতি। ৯ জুলাই পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের সরকারি বাসভবনে ঢুকে পড়েন একদল বিক্ষোভকারী। গোতাবায়া অবশ্য একদিন আগেই রাজধানীর কাছে একটি সামরিক ঘাঁটিতে গা-ঢাকা দিয়েছিলেন।

গোতাবায়াকে না পেয়ে বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে তার সরকারি বাসভবনে ঢুকে পড়েন। এখনও সেখানেই অবস্থান করছেন তারা।

মঙ্গলবার দিবাগত রাতে সামরিক বাহিনীর বিমানে প্রতিবেশী দেশ মালদ্বীপে পালিয়ে যান গোতাবায়া রাজাপাকসে। তার কয়েক ঘণ্টা পর, বুধবার সকালে নিজেকে শ্রীলঙ্কার ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা করেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে।

রনিল বিক্রমাসিংহের এই ঘোষণার পর তার পদত্যাগের দাবিতে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে হামলা করেন আরেক দল বিক্ষোভকারী। সেখানে পুলিশের সংঙ্গে সংঘাত হয় তাদের এবং এখনও সেই কার্যালয়ে তারা অবস্থান করছেন।

বুধবার পুলিশের সঙ্গে সংঘাতে আহত হয়ে অন্তত ৮৫ জন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানিয়েছে এএফপি।

ওই হামলার পর টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন শ্রীলঙ্কার ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট। সেখানে দেশের শৃঙ্খলা ফেরাতে সেনাবাহিনী ও পুলিশকে বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। বুধবারের ভাষণে রনিল বিক্রমাসিংহে বলেন, ‘আমরা সংবিধানকে পদদলিত করতে পারি না। কোনো ফ্যাসিবাদী শক্তি দেশের ক্ষমতা নিয়ে নেবে— তা আমরা হতে দিতে পারিনা। গণতন্ত্রের জন্য হুমকি হয়ে ওঠা প্রতিটি ফ্যাসিবাদী তৎপরতা অবশ্যই দমন করা হবে।’

Related Posts

© 2024 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy