“দেরিতে হলেও শুভবুদ্ধির উদয়…”-নওশাদের TMC-যোগের জল্পনায় ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য শওকত মোল্লার

গত ১০ মার্চ নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ভাঙড়ের আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকির বৈঠকের এক সপ্তাহের মাথায় ফুরফুরা শরিফে পৌঁছে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী। এই ঘটনাপ্রবাহে রাজনৈতিক মহলে জল্পনা তুঙ্গে উঠেছে। ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে কি তৃণমূল কংগ্রেস (TMC) ও ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট (ISF) নতুন কোনও সমীকরণে জড়াতে চলেছে? এই প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে রাজ্য রাজনীতির অলিন্দে।

এই জল্পনাকে আরও উসকে দিয়েছেন ক্যানিং পূর্বের তৃণমূল বিধায়ক শওকত মোল্লা। আজতক বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “যাঁরা এক সময় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে অসম্মান করত, দেরিতে হলেও তাঁদের শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে। দেরিতে হলেও তাঁরা দিদির ডাকে সাড়া দিয়েছেন। তাই তাঁদের ধন্যবাদ জানাব।” শওকত মুখ্যমন্ত্রীকে ফুরফুরা শরিফে যাওয়ার জন্যও ধন্যবাদ জানান। তাঁর এই মন্তব্যে বিশেষ ইঙ্গিত খুঁজে পাচ্ছেন অনেকে।

গত ১০ মার্চ, সোমবার হঠাৎ নওশাদের সাদা এসইউভি গাড়ি নবান্নে প্রবেশ করে। প্রায় ২২ মিনিট ধরে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। নবান্নের ১৪ তলায় এই আলোচনা চলাকালীন নিচে শুরু হয়ে যায় তুমুল রাজনৈতিক জল্পনা। অনেকে মনে করতে শুরু করেন, ২০২৬-এর নির্বাচনে আইএসএফ ও তৃণমূলের মধ্যে কোনও সমঝোতা হতে পারে। তবে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে নওশাদ নিজেই এই জল্পনায় জল ঢেলে দেন। তিনি জানান, তাঁর বিধায়ক তহবিলের (MLALAD) টাকা খরচ করতে বাধা আসছে, এই অভিযোগ নিয়েই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।

নওশাদ বলেন, “বিধানসভাতেও এই বিষয়টি তুলেছিলাম যে এমএলএ ল্যাডের টাকা পঞ্চায়েত সমিতি খরচ করছে না। ফেলে রাখছে। তাতে সাধারণ মানুষেরই ক্ষতি হচ্ছে। আমার আড়াই বছর নষ্ট করেছে। আমাকে কোনও কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না। এদিকে মুখ্যমন্ত্রী নিজেই বিধানসভায় দল নির্বিশেষে উন্নয়নমূলক কাজ করতে বলছেন।”

উল্লেখ্য, গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় ভাঙড়ে আইএসএফ ও তৃণমূলের দ্বন্দ্বের জেরে বারবার উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। মনোনয়ন জমা থেকে শুরু করে ফল প্রকাশ পর্যন্ত অশান্তি ছিল চরমে। তবে নবান্নে নওশাদের বৈঠক এবং ফুরফুরায় মমতার সফরের পর অনেকেই মনে করছেন, এই দ্বন্দ্ব হয়তো থামতে চলেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের ধারণা, ২০২৬-এর নির্বাচনে নতুন কোনও সমীকরণ গড়ে উঠতে পারে।

তবে নওশাদের তৃণমূলে যোগদানের জল্পনাকে এখনই সত্যি ধরে নেওয়া ঠিক হবে না। আইএসএফ বা তৃণমূল কোনও পক্ষই এখনও এমন কোনও স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয়নি। নওশাদ বারবার জোর দিয়েছেন যে তাঁর উদ্দেশ্য শুধু ভাঙড়ের মানুষের স্বার্থ রক্ষা করা। অন্যদিকে, শওকত মোল্লার মন্তব্য যে রহস্যময় ইঙ্গিত বহন করছে, তা অস্বীকার করার উপায় নেই।

এই পরিস্থিতিতে ২০২৬-এর নির্বাচনের আগে রাজ্যের রাজনৈতিক সমীকরণ কোন দিকে মোড় নেবে, তা নিয়ে সবার নজর এখন ফুরফুরা ও নবান্নের দিকে।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy