
জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় নিহত বাঙালি পর্যটক বিতান অধিকারীর স্ত্রী সোহিনী অধিকারী বৃহস্পতিবার তাঁর স্বামীর শেষকৃত্যের পর ঘটনার ভয়াবহ বিবরণ দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি জানান, জীবন হাতে নিয়ে স্বামী ও সন্তানকে বাঁচাতে তিনি জঙ্গিদের সামনে দাঁড়িয়েছিলেন, কিন্তু শত চেষ্টা করেও জঙ্গিদের হাত থেকে স্বামীকে বাঁচাতে পারেননি।
স্ত্রী সোহিনী ও ছেলে হৃদানকে নিয়ে কাশ্মীরে বেড়াতে গিয়েছিলেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার বৈষ্ণবঘাটার বাসিন্দা বিতান অধিকারী। বৃহস্পতিবার সপরিবারে তাঁদের কলকাতা ফেরার কথা ছিল। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে ঠিক তার একদিন আগেই, বুধবার রাতে কফিনবন্দি হয়ে কলকাতা পুরসভার গাড়িতে বৈষ্ণবঘাটার বাড়িতে এসে পৌঁছয় বিতানের নিথর দেহ। তাঁর শেষ যাত্রায় স্থানীয় শোকাহত প্রতিবেশী ছাড়াও সাংসদ সায়নী ঘোষ-সহ তৃণমূলের বেশ কয়েকজন নেতা-নেত্রী অংশ নেন।
বুধবার স্বামীর সৎকার সম্পন্ন হওয়ার পর বৃহস্পতিবার কাশ্মীরের ‘মিনি সুইজ়ারল্যান্ড’ হিসেবে পরিচিত বৈসরণের ভয়াবহ ঘটনা নিয়ে মুখ খোলেন সোহিনী অধিকারী। তিনি বলেন, “আমি ছেলে ও স্বামীকে নিয়ে সেখানে ঘুরছিলাম। হঠাৎই ওখানে কিছু আওয়াজ পাই। আমরা ভেবেছিলাম হয়তো আশেপাশে কোন পুলিশ ক্যাম্পে বন্দুক নিয়ে অনুশীলন চলছে। কিন্তু হঠাৎই আমার স্বামী ছেলেকে নিয়ে দৌড়াতে শুরু করেন। এমন পরিস্থিতিতে আমি পিছন ফিরতেই অবাক হয়ে যাই। দেখি আমার পিছনে একের পর এক পর্যটক জঙ্গিদের গুলি খেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ছেন।”
ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে কাঁদতে কাঁদতে নিহত বিতান অধিকারীর স্ত্রী বলেন, “ওই পরিস্থিতি দেখে আমরা ও আরও কয়েকজন পর্যটক দৌড়ে একটা জায়গায় বসে পড়ি। আমার ছেলে তখন আতঙ্কে চিৎকার করছিল। আমরা তো কখনও ভাবতে পারিনি সেখানে জঙ্গি হানা হবে। এর মধ্যেই জঙ্গিরা আমাদের সামনে চলে আসে। আমাদের এসে বলে যারা মুসলিম তারা সরে যান। সে সময় স্বামী ও সন্তানকে বাঁচাতে আমি জঙ্গিদের সামনে এসে দাঁড়িয়েছিলাম। কিন্তু ওরা শুধু পুরুষদেরই বেছে বেছে মারছিল। তখনই ওরা আমার স্বামীকে ২টো গুলি করে।”
সোহিনী জানান, গুলি লাগার পর বিতান অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু জঙ্গিরা সেখান থেকে চলে যাওয়ার পরই সোহিনী দেখেন তাঁর সব শেষ হয়ে গিয়েছে। সোহিনী সে দিনের ঘটনা প্রসঙ্গে আরও বলেন, “শত চেষ্টা করেও আমি আমার স্বামীকে বাঁচাতে পারিনি। ওখানে কোনও পুলিশ ছিল না। আমার পিছনে আরও যে সব পর্যটক ছিলেন, তাঁদের সবাইকে জঙ্গিরা জিজ্ঞাসা করছিল তাঁরা হিন্দু না মুসলিম? কেউ কিছু উত্তর না দেওয়ায় তাঁদেরও এক এক করে ওরা আমার চোখের সামনে মেরে ফেলল। আমি যেখানে ছিলাম সেখানে শুধুমাত্র দু’জন জঙ্গিই ছিল।”
এই ভয়াবহ ঘটনার দোষীদের কঠোরতম শাস্তির পাশাপাশি নিজের ও সন্তানের নিরাপত্তার দাবি জানিয়েছেন শোকস্তব্ধ সোহিনী অধিকারী। তাঁর এই বর্ণনা পহেলগাঁও হামলার ভয়াবহতার এক মর্মান্তিক চিত্র তুলে ধরেছে।