RUSHvsUKR: দনবাসে দুই শহরের যুদ্ধ পৌঁছেছে ‘ভয়ঙ্কর ক্লাইমেক্সে’, জানুন যুদ্ধের সর্বশেষ পরিস্থিতি

রাশিয়া সমগ্র দনবাস অঞ্চলকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে ব্যাপক বিমান ও কামান হামলা চালাচ্ছে, এমনটি জানিয়ে লড়াইয়ের ময়দানে রুশ বাহিনীর সমকক্ষতা অর্জনে মিত্রদেরকে তাদের প্রতিশ্রুত ভারি অস্ত্রশস্ত্র দ্রুত ইউক্রেইনে পাঠানোর তাগিদ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
জেলেনস্কির উপদেষ্টা ওলেকসি আরেস্তোভিচ বলেছেন, লুহানস্ক অঞ্চলে অবস্থিত জোড়া শহর সিয়েভিয়ারেোদোনেৎস্ক ও লিসিচ্যাংস্কের যুদ্ধ ‘ভীতিকর ক্লাইমেক্সে’ প্রবেশ করেছে।

লুহানস্ক প্রদেশ আর দোনেৎস্ক প্রদেশ মিলে গঠিত দনবাস অঞ্চল ইউক্রেইনের উৎপাদন শিল্পের প্রাণকেন্দ্র; রাশিয়ার লক্ষ্য পুরো অঞ্চলেরটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়া।

এদিকে বৃহস্পতিবার ব্রাসেলসে এক সম্মেলনে ইউরোপের নেতারা আনুষ্ঠানিকভাবে ইউক্রেইনকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্যপদ প্রাপ্তির দীর্ঘ পথে বরণ করে নিতে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

কিইভকে ইইউ’র প্রার্থী সদস্যপদ দেওয়া এই মুহূর্তের পরিস্থিতিতে প্রতীকি হলেও, এই পদক্ষেপ ইউক্রেইনীয় বাহিনীর মনোবল চাঙ্গা করতে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে; যারা চার মাস ধরে হাজারও মানুষের প্রাণ কেড়ে নেওয়া, লাখো মানুষকে বাস্তুচ্যুত ও শহরের পর শহর ধ্বংস করা যুদ্ধে রাশিয়ার বাহিনীগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করছে।

“আমরা অবশ্যই আমাদের ভূখণ্ডকে মুক্ত করবো এবং বিজয় অর্জন করবো। কিন্তু আরও তাড়াতাড়ি, তাড়াতাড়ি করতে হবে,” বৃহস্পতিবার এক ভিডিও বার্তায় ইউক্রেইনের ব্যাপক সংখ্যক ও দ্রুতগতির অস্ত্রের প্রয়োজনীয়তার কথা ফের তুলে ধরে বলেন জেলেনস্কি।

“দনবাসে ব্যাপক বিমান ও কামান হামলা হচ্ছে। দখলদারদের লক্ষ্য অপরিবর্তিত রয়েছে। তারা ধাপে ধাপে সমগ্র দনবাসই ধ্বংস করে দিতে চায়। এ কারণেই আমরা বারবার ইউক্রেইনে দ্রুত অস্ত্র সরবরাহে জোর দিয়ে যাচ্ছি। অতি দ্রুত যা দরকার, তা হচ্ছে দানবীয় বহরের অগ্রযাত্রা রুখতে এবং তাদেরকে ইউক্রেইনের সীমান্তের বাইরে পাঠিয়ে দিতে লড়াইয়ের ময়দানে সমকক্ষতা অর্জন করা,” বলেছেন তিনি।

রয়টার্স লিখেছে, দনবাসের সিয়েভিয়ারেোদোনেৎস্ক ও লিসিচ্যাংস্কে চলমান যুদ্ধ গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে পৌঁছেছে।

সিয়েভিয়ারেোদোনেৎস্কের রাসায়নিক কারখানায় কয়েকশ বেসামরিক আটকা পড়ে আছেন; বোমায় বিধ্বস্ত শহরটির নিয়ন্ত্রণ কার হাতে তা নিয়ে ইউক্রেইন ও রাশিয়ার ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য পাওয়া যাচ্ছে।

মস্কো বলছে, সিয়েভিয়ারেোদোনেৎস্কে যে ইউক্রেইনীয় সেনারা আছে তাদের চারদিক থেকে ঘিরে ফেলা হয়েছে। রুশ বাহিনী গত সপ্তাহে তাদেরকে আত্মসমর্পণ করতে নয়তো মৃত্যুকে বেছে নিতে বলেছিল।

অন্যদিকে লুহানস্কের আঞ্চলিক গভর্নর সেরহি হাইদাই বুধবার ইউক্রেইনের টেলিভিশনকে বলেছেন, সিয়েভিয়ারেোদোনেৎস্কে ‘এখনও যুদ্ধ চলছে’ এবং শহরটির ওপর ‘রুশ বাহিনীর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেই’।

রুশ সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের উদ্ধৃত করে বার্তা সংস্থা তাস জানিয়েছে, লিসিচ্যাংস্কের সঙ্গে সিয়েভিয়ারস্ক শহরকে সংযুক্ত করা একটি সড়ক বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দখলে যাওয়ার পর লিসিচ্যাংস্কের ইউক্রেইনীয় বাহিনী পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এবং রুশ সমর্থিতরা শহরটি পুরোপুরি ঘিরে ফেলেছে।

রয়টার্স তাৎক্ষণিকভাবে এ তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে পারেনি।

জেলেনস্কির উপদেষ্টা আরেস্তোভিচ বলছেন, ইউক্রেইনের সেনাদের হাতে রুশ বাহিনীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পর মস্কো সিয়েভিয়ারেোদোনেৎস্ক ও লিসিচ্যাংস্কে সেনাবাহিনীতে বাধ্য হয়ে যোগ দেওয়া স্বল্পস্তরের প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের মোতায়েন করেছে।

রুশ বাহিনীর ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে জেলেনস্কির উপদেষ্টার এই মন্তব্যের সত্যতা যাচাই করতে পারেনি রয়টার্স।

“এটা অনেকটা দুই মুষ্টিযোদ্ধার একে অপরের সঙ্গে ১৮তম রাউন্ডে হাতাহাতির মতো, যাদের কেউই সামনে অগ্রসর হতে পারছে না। এই অভিযান শুরু হয়েছে ১৪ এপ্রিল, আর প্রায় ৮০ দিন ধরে চলছে,” অনলাইনে এক ভিডিও পোস্টে বলেছেন আরেস্তোভিচ।

ইউক্রেইনকে ‘নাৎসিমুক্ত’ করতে ও রাশিয়ার নিরাপত্তা নিশ্চিতে ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে রাশিয়া তাদের ভাষায় ‘বিশেষ অভিযানে’ নেমেছে। ইউক্রেইন এবং পশ্চিমা দেশগুলো বলছে, রাশিয়া যুদ্ধের জন্য ভিত্তিহীন ভাষ্য দাঁড় করিয়েছে, যা ইউরোপে বিস্তৃত সংঘাতের আশঙ্কা সৃষ্টি করেছে। রাশিয়া দীর্ঘদিন ধরেই ইইউ ও নেটোর মতো পশ্চিমা জোটের সঙ্গে প্রাক্তন সোভিয়েত রাষ্ট্র ইউক্রেইনের ঘনিষ্ঠতায় আপত্তি জানিয়ে আসছে।

জেলেনস্কি বলেছেন, তিনি বুধবার ইইউ’র ১১ নেতার সঙ্গে ইউক্রেইনের প্রার্থী সদস্যপদের বিষয়ে কথা বলেছেন। বৃহস্পতিবার তিনি আরও নেতাদের সঙ্গে কথা বলবেন। তার বিশ্বাস, ইউরোপের এই জোটের ২৭টি দেশই তাদের প্রার্থী মর্যাদায় সমর্থন দেবে।

“আমাদের এটা প্রাপ্য,” আমস্টারডামে উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে ভিডিও লিংকের মাধ্যমে এমনটাই বলেছেন জেলেনস্কি।

ইউক্রেইনের ‘ত্যাগের’ স্বীকৃতি দিতে জোটের অবশ্যই কিছু না কিছু করা দরকার বলে ইইউ নেতারা বলে এলেও ইইউতে সদস্য হিসেবে যুক্ত হওয়ার শর্ত পূরণে কিইভের এক দশক বা তারও বেশি সময় লেগে যেতে পারে বলে ধারণা কূটনীতিকদের।

Related Posts

© 2024 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy