ওয়াশিংটনের ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গার ঘটনায় সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপর টুইটার যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল, তা প্রত্যাহার করে নিতে পারেন টুইটারের হবু মালিক টেসলার সিইও ইলন মাস্ক।
বুধবার (১১ মে) ‘ফিন্যান্সিয়াল টাইমস ফিউচার অব দ্য কার’ সম্মেলনে মাস্ক এ বিষয়ে কথা বলেন।
টুইটার কেনার জন্য গত মাসে চুক্তিতে উপনীত হয়েছেন বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলার প্রধান নির্বাহী মাস্ক। চলতি বছরের শেষ নাগাদ আনুষ্ঠানিক চুক্তি হওয়ার কথা। চুক্তি হলে ৪ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের বিনিময়ে টুইটারের মালিক হবেন বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি।
মাস্ক নিজেকে বাকস্বাধীনতার পক্ষের প্রকৃত সমর্থক দাবি করে আসছেন। তবে এ নিয়ে তিনি তার পরিকল্পনা কখনো নির্দিষ্ট করে জানাননি। টুইটারে পরিবর্তনের ক্ষেত্রে মাস্ক কত দূর যাবেন, তা দেখার বিষয়।
টুইটার কিনতে মাস্ক চুক্তিতে উপনীত হওয়ার পর ট্রাম্প জানিয়ে দেন, অ্যাকাউন্ট পুনর্বহাল করা হলেও তিনি আর এ প্ল্যাটফর্মে ফিরবেন না। তিনি তার নিজের ‘ট্রুথ সোশ্যাল’ মাধ্যমে থাকবেন।
তবে ট্রাম্প আশা করেন, মাস্ক টুইটার কিনে এ মাধ্যমের উন্নতি করবেন। কারণ, তিনি একজন ভালো মানুষ।
টুইটার কিনতে মাস্ককে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প উৎসাহিত করেছেন বলে সম্প্রতি খবর বের হয়। ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এর সিইও ডেভিন নুনেসকে উদ্ধৃত করে নিউইয়র্ক পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রাম্প চুপি চুপি মাস্ককে টুইটার কেনার জন্য উৎসাহিত করেছেন। তবে এ প্রতিবেদনকে মিথ্যা আখ্যা দেন টেসলার প্রধান। তিনি দাবি করেন, ট্রাম্পের সঙ্গে তার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোনো যোগাযোগ নেই।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফলকে কেন্দ্র করে গত বছরের ৬ জানুয়ারি ট্রাম্পের উগ্র সমর্থকেরা যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ভবনে রক্তক্ষয়ী হামলা চালান। এ হামলায় উসকানির অভিযোগে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে টুইটারে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করা হয়। টুইটারের পাশাপাশি ফেসবুক-ইনস্টাগ্রামেও নিষিদ্ধ হন ট্রাম্প।
ট্রাম্পকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত মিশ্র প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেয়। কেউ কেউ এ সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেন। কেউ করেন সমালোচনা।
ব্রিটিশ দৈনিক ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের এক সম্মেলনে মাস্ক বলেন, তিনি ও টুইটারের সহপ্রতিষ্ঠাতা জ্যাক ডরসি মনে করেন, টুইটারে কাউকে স্থায়ী নিষিদ্ধের বিষয়টি খুবই বিরল হওয়া উচিত। যারা স্প্যাম ছড়ায় ও বট চালায়, মূলত তাদের অ্যাকাউন্টই চিরতরে বন্ধ করা উচিত।
মাস্ক আরও বলেন, ভুল ও খারাপ টুইট মুছে ফেলা বা অদৃশ্য করে দেওয়া উচিত। সাময়িক সময়ের জন্য অ্যাকাউন্ট বাতিল করে দেওয়া যথোপযুক্ত হতে পারে।
মাস্ক বলেন, ‘আমি মনে করি, চিরতরে নিষিদ্ধের বিষয়টি টুইটারের ওপর আস্থা কমায়। কারণ, টুইটার এমন একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে সবাই মতপ্রকাশ করতে পারে।’
মাস্ক বলেন, ট্রাম্পকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তটি রাজনৈতিক অধিকারের বিষয়ে জনগণের মধ্যে তার দৃষ্টিভঙ্গিকেই প্রসারিত করেছে।
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে টুইটারের নিষেধাজ্ঞাকে নৈতিকভাবে ভুল ও বোধ-বুদ্ধিহীন সিদ্ধান্ত বলে অভিহিত করেন মাস্ক। তাই তিনি টুইটারের মালিক হলে এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবেন বলে জানিয়েছেন।
এদিকে মাস্কের এই দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সন্দিহান আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো। টুইটারের ওপর মাস্কের একচ্ছত্র আধিপত্য বাকস্বাধীনতার নামে বিদ্বেষ প্রচারের পথ ‘সুগম করবে’ বলেই তাদের অনেকের ধারণা।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, তারা এমন টুইটার দেখতে চায় না, যেখানে ব্যবহারকারীদের প্রতি সহিংস এবং নিপীড়নমূলক আচরণ ইচ্ছে করেই অগ্রাহ্য করা হয়।
সূত্র: সিএনবিসি