জ্বালানির অভাব শ্রীলঙ্কায়, গাড়ি ছেড়ে সাইকেলে ঝুঁকছেন লঙ্কানরা

কলম্বোর বাসিন্দা ডা. থুসিথা কাহাদুয়া নিজের গাড়ি গ্যারেজে রেখে সাইকেলে হাসপাতালে যাতায়াত করছেন গত দু’সপ্তাহ ধরে। হাসপাতালের পাশাপাশি ব্যক্তিগত চেম্বার ও অসুস্থ রোগীদের বাড়িতে রাউন্ড দেওয়ার বেলাতেও তার ভরসা এখন সাইকেল।

৪১ বছর বয়সী এই চিকিৎসক শ্রীলঙ্কার সেইসব অগণিত মধ্যবিত্তের মধ্যে একজন, যারা সপ্তাহের পর সপ্তাহ ধরে চলা তীব্র জ্বালানি সংকটের কারণে ব্যক্তিগত গাড়ি ছেড়ে দু’চাকার সাইকেলের ওপর আস্থা রাখতে বাধ্য হয়েছেন।

রয়টার্সের সঙ্গে আলাপচারিতার সময় কাহাদুয়া বলেন, ‘প্রথম দিকে পাম্পের সামনে জ্বালানির জন্য দুই থেকে তিন ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হতো; ধীরে ধীরে অপেক্ষার সময় বাড়তে থাকে এবং সর্বশেষ তিন সপ্তাহ আগে, আমাকে জ্বালানি তেলের লাইনে টানা তিন দিন অপেক্ষা করতে হয়েছিল।’

‘তারপরই সাইকেল কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বলতে পারেন, এক প্রকার হতাশা থেকেই নেওয়া হয়েছে এ সিদ্ধান্ত।’

স্বাধীনতার পর সবচেয়ে মারাত্মক আর্থিক সংকেট পড়া শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক রিজার্ভ বলে আর কিছু নেই। তাই দেশটি খাবার, ওষুধ ও জ্বালানির মত অতি জরুরি আমদানি প্রয়োজন মেটাতে পারছে না।

গত দুই সপ্তাহে দেশটিতে জ্বালানি তেলের কোনো চালান আসেনি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। জরুরি সেবার জন্যও জ্বালানি পাওয়া যাচ্ছে না। জ্বালানি তেলের অভাবে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বাড়িতে থেকে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। কবে পরবর্তী চালান আসবে, তারও কোনো ঠিক-ঠিকানা নেই।

ফলে রাজধানীসহ দেশজুড়ে সাইকেলের চাহিদা বাড়ছে। সব শহরে বেড়ে গেছে সাইকেলের চলাচল।

এদিকে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দাম বেড়ে গেছে সাইকেলেরও। আগের তুলনায় নতুন ও ব্যবহৃত সাইকেল ও সাইকেলের যন্ত্রাংশের দাম গত কয়েকদিনে রীতিমত দ্বিগুণ হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

ভিক্টর পেরেরা নামের এক ব্যবসায়ী রয়টার্সকে জানান, চলতি বছর জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত মাত্র ২০টি সাইকেল বিক্রি করতে পেরেছিলেন তিনি। কিন্তু গত দু’সপ্তাহে তার বিক্রি বেড়েছে অন্তত ১০গুণ।

কিন্তু এখানেও দিন দিন একটি সংকট প্রকট হয়ে উঠছে। কারণ, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাঁচাতে কয়েক মাস আগে অতি জরুরি পণ্য ব্যতীত যেসব পণ্যের আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল, সেসবের মধ্যে সাইকেলও রয়েছে।

এ কারণে বর্তমান পরিস্থিতিতে একদিকে দেশটিতে সাইকেলের মজুত কমে আসছে, সেই সঙ্গে এই যানের দামও বাড়ছে ব্যাপকভাবে।

ভিক্টর পেরেরা বলেন, ‘সাইকেল আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা থাকায় নতুন চালান আসছে না। বর্তমানে যে মজুত রয়েছে, তা দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে। এখন অনেক দোকানেই আর সাইকেল নেই।’

মঙ্গলবার শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে অবশ্য বলেছেন , তিনি আশা করেছেন আগামী অগাস্ট মাসের মধ্যে তার সরকার ঋণ পুনর্গঠন এবং স্থায়িত্ব সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ঋণদাতা সংস্থা আইএমএফের কাছে জমা দিতে পারবেন। যদি এই প্রতিবেদন আইএমএফের মনঃপূত হয়, সেক্ষেত্রে মিলবে ঋণ।

তবে ডা. কাহাদুয়া এ ব্যাপারে খুব একটা আশাবাদী নন। রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘যে বিপর্যয়ের মধ্যে আমরা পড়েছি, মনে হয় না খুব দ্রুত এই অবস্থা থেকে উদ্ধার মিলবে।’

Related Posts

© 2024 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy