
তেলঙ্গনার মুখ্যমন্ত্রী কে. রেভান্থ রেড্ডি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জাত নিয়ে একটি বিতর্কিত মন্তব্য করে রাজনৈতিক অঙ্গনে ঝড় তুলেছেন। হায়দরাবাদে কংগ্রেসের একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখার সময় রেভান্থ রেড্ডি দাবি করেন, প্রধানমন্ত্রী মোদী জন্মগতভাবে অগ্রসর শ্রেণির নন, বরং তিনি আইনিভাবে ধর্মান্তরিত হয়ে অগ্রসর শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। তাঁর এই মন্তব্যের পর থেকেই বিজেপি তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে এবং রেভান্থ রেড্ডির বিরুদ্ধে কড়া ভাষায় জবাব দিয়েছে।
রেভান্থ রেড্ডি তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেছেন তিনি অগ্রসর শ্রেণির। কিন্তু তিনি জন্মগতভাবে অগ্রসর শ্রেণির নন। তিনি আইনত অগ্রসর শ্রেণিতে রূপান্তরিত হয়েছেন। ২০০১ সালে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার আগে তাঁর জাত গুজরাতের উচ্চ বর্ণের মধ্যে ছিল। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে, তিনি সেই বর্ণটিকে অগ্রসর শ্রেণিতে তালিকাভুক্ত করেছিলেন। মোদী অগ্রসর শ্রেণিতে জন্মগ্রহণ করেননি। শংসাপত্রের ভিত্তিতে তিনি অগ্রসর শ্রেণির। তবে তাঁর মানসিকতা অবশ্যই অগ্রসর শ্রেণি বিরোধী।’
বিজেপির তীব্র প্রতিক্রিয়া
রেভান্থ রেড্ডির এই মন্তব্যের কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিজেপি। কেন্দ্রীয় কয়লা মন্ত্রী জি. কিষাণ রেড্ডি তেলঙ্গনার মুখ্যমন্ত্রীকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলেছেন, ‘রেভান্থ রেড্ডি অধৈর্য হয়ে এই ধরনের মন্তব্য করছেন। কারণ কংগ্রেস রাজ্য এবং সারা দেশে জনসমর্থন হারাচ্ছে। তিনি যদি এই দাবির পক্ষে প্রমাণ রাখেন, তাহলে তা উপস্থাপন করুন।’
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বান্দি সঞ্জয় কুমারও রেভান্থ রেড্ডির মন্তব্যের নিন্দা করেছেন। তিনি বলেন, ‘রেভান্থ রেড্ডি কি কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর জাত এবং ধর্ম সম্পর্কে জানেন? প্রধানমন্ত্রীর জাত নিয়ে কথা বলা কংগ্রেসের একটি মরিয়া কৌশল মাত্র, যাতে অগ্রসর শ্রেণিকে ৪২ শতাংশ সংরক্ষণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি থেকে জনগণের মনোযোগ সরানো যায়। রাহুল গান্ধী কোন বর্ণের? তাঁর ধর্ম কী? তিনি কি জানেন? তাঁর পিতামহ ছিলেন ফিরোজ জাহাঙ্গির গান্ধী। হিন্দু ঐতিহ্যে, বর্ণ পিতার বংশ অনুসরণ করে।’
সঞ্জয় কুমার আরও যোগ করেন, ‘রেভান্থ রেড্ডির গবেষণা এতটাই খারাপ যে তিনি এই সত্যটি ভুলে গিয়েছিলেন যে ১৯৯৪ সালে কংগ্রেস যখন ক্ষমতায় ছিল, তখনই প্রধানমন্ত্রী মোদীকে ওবিসি (অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি) হিসাবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল।’
রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ
রেভান্থ রেড্ডির এই মন্তব্য রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। বিজেপি নেতারা এই মন্তব্যকে কংগ্রেসের ‘হতাশাজনক রাজনীতি’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। অন্যদিকে, কংগ্রেস নেতারা এখনও এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি।
এই ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে, রাজনীতিতে জাত ও বর্ণের ইস্যু কতটা প্রাসঙ্গিক? রেভান্থ রেড্ডির এই মন্তব্য কি কংগ্রেসের রাজনৈতিক কৌশল, নাকি এটি একটি ব্যক্তিগত অভিমত? এই বিতর্কের পরিণতি কী হবে, তা এখন দেখার বিষয়। তবে এটা স্পষ্ট যে, এই মন্তব্য আগামী দিনগুলিতে রাজনৈতিক বিতর্ককে আরও উসকে দিতে পারে।