
কাশ্মীরে একের পর এক হিন্দু পর্যটককে লক্ষ্য করে চালানো ভয়াবহ জঙ্গি হামলার পর ভারত সরকার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করেছে, যার ফলে পাকিস্তান কার্যত প্রবল চাপের মুখে পড়েছে। এই উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে ভারতে অবস্থানরত বেশ কয়েকজন পাকিস্তানি নাগরিক তাদের দেশে ফিরতে শুরু করেছেন বলেও খবর পাওয়া যাচ্ছে।
পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে করে তুলে বৃহস্পতিবার পাকিস্তান ভারতীয় মালিকানাধীন এবং ভারত কর্তৃক পরিচালিত সমস্ত এয়ারলাইন্সের জন্য তাদের আকাশসীমা অবিলম্বে বন্ধ ঘোষণা করেছে। এছাড়াও, পাকিস্তানের মধ্য দিয়ে তৃতীয় কোনো দেশে যাওয়া বা সেখান থেকে আসা পণ্যসহ ভারতের সঙ্গে সমস্ত প্রকার বাণিজ্য স্থগিত করা হয়েছে। হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারত সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত রাখার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তারও তীব্র বিরোধিতা করেছে পাকিস্তান।
পাকিস্তান সরকার এক বিবৃতিতে বলেছে যে, পাকিস্তানকে বরাদ্দকৃত জলের প্রবাহে বাধা দেওয়া বা তা অন্য দিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হলে অথবা নিম্ন অববাহিকার রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তানের অধিকার লঙ্ঘন করা হলে, এটিকে ‘যুদ্ধের সমতুল্য’ হিসেবে বিবেচনা করা হবে। একইসঙ্গে, পাকিস্তান তাদের হাই কমিশনে নিযুক্ত ভারতীয় সামরিক উপদেষ্টাদের ৩০শে এপ্রিলের মধ্যে দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
উল্লেখ্য, বুধবার, কাশ্মীরের একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রে জঙ্গি হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার মাত্র একদিন পর ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে তার সম্পর্ক হ্রাস করার জন্য একাধিক পদক্ষেপ ঘোষণা করে। গত প্রায় দুই দশকের মধ্যে এটিই ছিল ভারতীয় অসামরিক নাগরিকদের উপর সবচেয়ে মারাত্মক হামলা। বিদেশ সচিব বিক্রম মিশ্রি এক সাংবাদিক সম্মেলনে জানান, নিরাপত্তা ক্যাবিনেটের বিশেষ বৈঠকে এই হামলার সঙ্গে সীমান্তপারের যোগসূত্র স্পষ্টভাবে উঠে আসে।
ভারত সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলির মধ্যে অন্যতম হলো সিন্ধু জল চুক্তি তাৎক্ষণিকভাবে স্থগিত করা। এই চুক্তিটি দুই দেশের মধ্যে সিন্ধু নদীব্যবস্থার জলবণ্টন নিয়ন্ত্রণ করে। বিদেশ সচিব আরও জানান যে, নয়াদিল্লিতে অবস্থিত পাকিস্তানি হাইকমিশনের প্রতিরক্ষা উপদেষ্টাদের ‘পার্সোনা নন গ্রাটা’ ঘোষণা করে ভারত ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও ঘোষণা করেন যে, ইসলামাবাদে ভারতীয় হাইকমিশনে কর্মী সংখ্যা ৫৫ থেকে কমিয়ে ৩০ করা হবে। মিশ্রি আরও জানান যে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে প্রধান সীমান্ত চেকপোস্টগুলি অবিলম্বে বন্ধ করে দেওয়া হবে এবং বিশেষ ভিসা ব্যবস্থার অধীনে পাকিস্তানি নাগরিকদের আর ভারতে ভ্রমণের অনুমতি দেওয়া হবে না।
কেন্দ্রীয় সরকারের ৪৮ ঘণ্টার সময়সীমা মেনে বৃহস্পতিবার অমৃতসরের আটারি-ওয়াঘা স্থলপথ দিয়ে বেশ কয়েকজন পাকিস্তানি নাগরিক তাদের দেশে ফেরা শুরু করেছেন। সামগ্রিকভাবে, এই ঘটনা দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা নতুন করে বৃদ্ধি করেছে।