“জঙ্গির হেলমেটে লাগানো ক্যামেরা…?”-পহেলগাঁও হামলায় জঙ্গিদের নিখুঁত প্ল্যান, মিললো চাঞ্চল্যকর তথ্য

কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে পর্যটকদের উপর চালানো ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় নিহত ২৬ জনের কফিনবন্দি দেহ দেখে স্তব্ধ গোটা দেশ। নিরুদ্দেশের ছুটি বা নতুন জীবনের শুরু, সবকিছুই থেমে গেছে জঙ্গিদের গুলিতে। এই নৃশংসতার তদন্তে নেমে পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনী একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য হাতে পাচ্ছে। প্রাথমিক তদন্তেই স্পষ্ট হচ্ছে যে এই হামলা ছিল সুপরিকল্পিত এবং বেছে বেছে পর্যটকদের ধর্মীয় পরিচয় জেনে হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছে।

তদন্তে উঠে আসা চাঞ্চল্যকর তথ্য:

পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর যে তথ্যটি উঠে আসছে তা হলো ধর্ম জেনে বেছে বেছে গুলি করার বিষয়টি। নিহতদের পরিবারের অনেকেই তাদের বক্তব্যে এই কথা উল্লেখ করেছেন। তাদের অভিযোগ, জঙ্গিরা প্রথমে পর্যটকদের নাম জিজ্ঞাসা করেছে, তাদের ধর্ম পরিচয় নিশ্চিত করেছে এবং হিন্দু জানতে পারার পরেই গুলি চালিয়েছে। এই বিষয়টি হামলার পেছনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে স্পষ্ট ইঙ্গিত দিচ্ছে।

হামলার প্রাথমিক তদন্তে আরও কয়েকটি হাড়হিম করা তথ্য সামনে আসছে। জানা যাচ্ছে, এই হামলায় পাকিস্তানি এবং স্থানীয় কাশ্মীরি সন্ত্রাসবাদীরা যৌথভাবে অংশ নিয়েছিল। তিন জন জঙ্গি পর্যটকদের এক জায়গায় জড়ো করে পুরুষ ও মহিলাদের আলাদা করে। এরপর তাদের পরিচয় জানার চেষ্টা করা হয়। কিছু লোককে তুলনামূলক দূর থেকে গুলি করা হয়েছিল, আবার কিছু লোককে খুব কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করা হয়। বেশিরভাগ লোক অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে মারা যান।

এক জঙ্গির একটি প্রাথমিক ছবি সামনে এসেছে, যেখানে তাকে ঘটনাস্থলে বন্দুক হাতে দেখা যাচ্ছে, যদিও মুখ স্পষ্ট নয়। জানা গিয়েছে, জঙ্গিরা হেলমেট লাগানো ক্যামেরা পরে ছিল, যাতে তারা পুরো ঘটনার ভিডিও করতে পারে।

কেন টার্গেট ছিল বাইসারান ভ্যালি?

সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর যে তথ্যটি জানা যাচ্ছে তা হল, উদ্ধারকাজে সময় লাগবে এবং হতাহতের সংখ্যা সর্বাধিক হবে জেনেই ইচ্ছাকৃতভাবে পহেলগাঁওয়ের বাইসারান ভ্যালিকে বেছে নেওয়া হয়েছিল বলে মনে করা হচ্ছে। এটি একটি বিখ্যাত পর্যটন স্পট, যা ‘মিনি সুইজারল্যান্ড’ নামে পরিচিত। বাইসারানকে আক্রমণের জন্য বেছে নেওয়ার অন্যতম কারণ ছিল এই নির্দিষ্ট এলাকায় কোনও নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন ছিল না।

অভিযান ও নতুন প্রযুক্তি:

এই হামলার পরপরই গোটা এলাকা ঘিরে ফেলে নিরাপত্তা বাহিনী। সেনাবাহিনী, সিআরপিএফ, স্পেশাল অপারেশন গ্রুপ (SOG) এবং জম্মু কাশ্মীর পুলিশ যৌথভাবে জঙ্গিদের খোঁজে ব্যাপক চিরুণি তল্লাশি অভিযান শুরু করেছে। এই অভিযানে হেলিকপ্টার এবং ড্রোন ব্যবহার করা হচ্ছে। জাতীয় তদন্ত সংস্থা (NIA) দল ইতিমধ্যেই শ্রীনগরে পৌঁছেছে এবং নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযান শেষ হওয়ার পর তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন। সেখানে ফরেনসিক দলও উপস্থিত থেকে তথ্য সংগ্রহ করছে। মুঘল রোডের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সিআরপিএফ এবং জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

জঙ্গিরা লুকানোর জন্য ঘন জঙ্গলে আস্তানা তৈরি করেছিল এবং স্থানীয় জঙ্গিদের সাহায্যে তারা সম্ভবত দ্রুত তাদের অবস্থানও পরিবর্তন করে ফেলেছে। এলাকায় সক্রিয় মোবাইল নম্বরগুলির সম্পূর্ণ বিবরণ জানতে পুলিশ টেলিকম কোম্পানিগুলির সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। পাল্টা হামলার জন্য বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। ঘন বন এবং পাহাড়ে জঙ্গিদের খুঁজে বের করার জন্য উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। উন্নত রাডার ব্যবহার করা হচ্ছে, যা ঘন বনে লুকিয়ে থাকা সন্ত্রাসবাদীদের গতিবিধি সহজেই শনাক্ত করতে পারে।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy