চাকরি না পেয়ে তন্ময় এখন ‘এমএ পাস লটারিওয়ালা’, টিকিট বিক্রি করে চলছে সংসার

রাস্তার পাশে ছোট টেবিলে থরে থরে সাজানো লটারির টিকিট। টেবিলের তিন দিকে বড়বড় করে লেখা ‘এমএ পাস লটারিওয়ালা তন্ময়’।

এ দৃশ্য মুর্শিদাবাদের নওদার আমতলা বাজারে। লটারির টিকিট বিক্রি করছেন তন্ময় চুনারি। তার বাড়ি নওদার সাঁকোয়া এলাকায়। স্নাতকোত্তর শেষ করেও চাকরি না পেয়ে লটারিওয়ালা হিসেবে ক্যারিয়ার গড়েছেন তন্ময়।

এ যুবক জানান, সপ্তম শ্রেণিতে ওঠার পরেই তার বাবার মৃত্যু হয়। বাড়িতে তখন মা, তিনি আর দাদা-বৌদি। দুই বেলা দুমুঠো খাবার জোগাড় করতে সাইকেলের দোকানে কাজ নেন কিশোর তন্ময়। পরে এক প্রকার স্কুলছুট হয়ে পড়েন। সংসারের হাল ধরতে তার দাদা জয়দেব চুনারি আমতলা বাজার এলাকায় টেবিল পেতে লটারির টিকিট বিক্রি শুরু করেন।

ফের স্কুলেও ভর্তি হন তন্ময়। ২০১১ সালে প্রথম বিভাগে মাধ্যমিক পাস করেন। তারপর সংসারের খরচ জোগাতে কখনো রাজমিস্ত্রি, কখনো রংমিস্ত্রির জোগালের (সহযোগী) কাজ করেছেন তিনি। অন্যের জমিতে দিনমজুরিও করতে হয়েছে তাকে। তবে এর মধ্যেই ২০১৮ সালে আমতলা যতীন্দ্র রাজেন্দ্র মহাবিদ্যালয় থেকে বিএ এবং ২০২১ সালে দূরশিক্ষায় বাংলা নিয়ে এমএ পাস করেন তন্ময়।

তন্ময় বলেন, ‘রাজ্য পুলিশের এসআই, কনস্টেবল, কেন্দ্রে সিআইএসএফ থেকে ব্যাংক, রেলসহ একাধিক পরীক্ষায় বসেছেন তিনি। অনেক পরীক্ষায় প্রথম ধাপের লিখিত, শারীরিক পরীক্ষায় পাস করার পরেও মেলেনি চাকরি।’

এদিকে, কয়েক মাস আগে হঠাৎ তার দাদা জয়দেব মারা যান। সংসারের পুরো ভার এসে পড়েছে তন্ময়ের ওপরে। অসুস্থ মায়ের চিকিৎসা, ভাতিজার পড়াশোনাসহ চারজনের সংসার চালাতে দাদার মতোই লটারির টিকিট বিক্রি শুরু করেন তন্ময়।

নওদার আমতলা বাজার এলাকায় একটি নতুন টেবিল তৈরি করিয়েছেন। তাতে লেখা ‘এমএ পাশ লটারিওয়ালা তন্ময়’। এরপরে তন্ময়কে নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে বাজারের আনাচে-কানাচে। কদিন থেকে ভিড়ও বেড়েছে তার টেবিলে।

লটারির টিকিট বিক্রির পেশা বেছে নেওয়ার কারণও জানিয়েছেন তন্ময়। তিনি বলেন, ‘চাকরির বাজারের যা অবস্থা, তাতে মিছিমিছি চাকরির পেছনে ছুটে বয়স নষ্ট হচ্ছে। টিউশন করে পকেট খরচই ওঠে না। তাছাড়া দোকান ঘর ভাড়া নিয়ে অন্য ব্যবসা করার মতো পুঁজি বা সামর্থ্য কিছুই নেই। লটারি বিক্রি সরকার স্বীকৃত। এতে পুঁজিও লাগে না।’

দিনভর লটারির টিকিট বিক্রি করে গড়ে ২৫০-৩০০ টাকা কমিশন পাচ্ছেন তিনি। তা দিয়েই কোনো রকমে চলছে চারজনের সংসার। তবে চাকরির জন্য হাল ছাড়েননি তন্ময়। পুলিশে বা সামরিক বাহিনীতে চাকরির জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে প্রতিদিন সকালে কসরত করেন তিনি। দোকানে বসে নিয়মিত বইয়ের পাতায় চোখ বুলিয়ে নেন তন্ময়।

Related Posts

© 2024 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy