গ্রীষ্মের তাপমাত্রা বাড়তেই ঝাড়গ্রামে শুরু হাতপাখা তৈরির কাজ, দুবড়ার হাতপাখার কদর রাজ্যের বাইরেও

গ্রীষ্মের তাপমাত্রা বাড়তেই ঝাড়গ্রামের দুবড়া গ্রামের চিত্র বদলে গেছে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সারা গ্রাম মেতে উঠেছে হাতপাখা তৈরির কাজে। ৮ থেকে ৮০—গ্রামের প্রায় সবাই ব্যস্ত তালপাতার হাতপাখা বানাতে। ফাল্গুন মাস এলেই এই ব্যস্ততা শুরু হয়, আর জ্যৈষ্ঠ মাস পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকে। কারণ, এই সময় যত বেশি হাতপাখা তৈরি করা যাবে, ততই বেশি লাভ হবে বলে মনে করেন গ্রামের মানুষ।

দুবড়া: ঝাড়গ্রামের ‘হাতপাখার গ্রাম’

ঝাড়গ্রাম জেলার জামবনি ব্লকের দুবড়া গ্রাম একপ্রকার ‘হাতপাখার গ্রাম’ বলেই পরিচিত। এই গ্রামের অধিকাংশ পরিবারই বছরের অন্য সময় বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকলেও গরমের সময় পুরোপুরি হাতপাখা তৈরির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।

গ্রামের প্রতিটি ঘরে একযোগে চলে হাতপাখা তৈরির কাজ। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলে তালপাতা কাটা, শুকানো, বাঁশের কাঠি লাগানো ও সুতলি দিয়ে বাঁধাই করার কাজে লেগে পড়েন।

দুবড়ার হাতপাখার কদর রাজ্যের বাইরেও

দুবড়ার তৈরি হাতপাখার চাহিদা শুধুমাত্র ঝাড়গ্রাম জেলাতেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং তা ছড়িয়ে পড়েছে ভিনরাজ্যেও। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন হাটবাজার ছাড়িয়ে ঝাড়খণ্ড, ওডিশা, বিহার, এমনকি দক্ষিণ ভারতের কিছু জায়গাতেও এই হাতপাখার চাহিদা রয়েছে। এখানকার হাতে তৈরি পাখাগুলি গুণগত মান ও টেকসই হওয়ার কারণে ক্রেতাদের কাছে বেশ জনপ্রিয়।

বংশপরম্পরায় চলছে এই শিল্প

দুবড়া গ্রামের মানুষরা বংশপরম্পরায় এই কুটির শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। আগের প্রজন্মের শেখানো কৌশল অনুসরণ করেই নতুন প্রজন্ম এই শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এই পাখা তৈরির কাজে তেমন আধুনিক যন্ত্রপাতির প্রয়োজন হয় না, শুধু তালপাতা, বাঁশের কাঠি, সুতো আর দক্ষ হাত থাকলেই হয়ে যায় সুন্দর হাতপাখা।

রুজিরোজগারের বড় সুযোগ, তবে সরকারি সাহায্যের দাবি

এই কুটির শিল্প থেকে গ্রামের বহু পরিবার আর্থিকভাবে লাভবান হয়। তবে সঠিক বিপণন ব্যবস্থা ও সরকারি সহায়তা পেলে এই শিল্প আরও বিকশিত হতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। সরকারি হস্তক্ষেপ থাকলে আরও বড় পরিসরে এই ব্যবসা ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হবে বলে মনে করছেন গ্রামের কারিগররা।

প্রতি বছর গ্রীষ্মে দুবড়া গ্রাম যেন একটি ছোট কারখানায় পরিণত হয়। এখানকার তৈরি তালপাতার হাতপাখা শুধু গরমের মধ্যে আরামই দেয় না, বরং বহু মানুষের জীবিকার সংস্থানও করে। তাই এই কুটির শিল্পকে রক্ষা করা ও প্রসারিত করা এখন সময়ের দাবি।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy