যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অনলাইন ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম ও প্রযোজনা সংস্থা নেটফ্লিক্স তাদের আরো ৩০০ কর্মী ছাঁটাই করার ঘোষণা দিয়েছে। গত এক দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো গ্রাহক (সাবস্ক্রাইবার) কমেছে সংস্থাটির।
এক বিবৃতিতে নেটফ্লিক্স বলেছে, মে মাসে ১৫০ জন কর্মীকে ছাঁটাইয়ের পর কোম্পানিটি আরো ৩০০ জন কর্মীকে ছাঁটাই করছে যা তাদের কর্মশক্তির ৪ শতাংশ। যার বেশিরভাগই যুক্তরাষ্ট্রের কর্মী।
তবে কোন বিভাগ থেকে কর্মী ছাঁটাই করা হচ্ছে, তা প্রকাশ করেনি নেটফ্লিক্স।
নেটফ্লিক্স বলেছে, ‘যদিও আমরা ব্যবসায় বিনিয়োগ চলমান রেখেছি, তারপরও রাজস্ব কমে যাওয়ায় আমাদের কর্মী ছাঁটাই করতে হচ্ছে। তবে অন্যান্য অঞ্চলে কর্মী নিয়োগও অব্যাহত আছে।’
সংস্থাটির সহপ্রধান নির্বাহী টেড সারানদোস বৃহস্পতিবার কানে এক সম্মেলনে বলেছেন, ‘নেটফ্লিক্স বিজ্ঞাপন অংশীদারত্বের জন্য অনেক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা করেছে। আমরা আসলে নেটফ্লিক্সে বিজ্ঞাপন যুক্ত করব না। যারা একটু অল্প খরচে বিজ্ঞাপনসহ নেটফ্লিক্স দেখতে চান, কেবল তাদের জন্যই এই বিজ্ঞাপন ব্যবহার করা হবে।’
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বব্যাপী নেটফ্লিক্সের ২২ কোটি গ্রাহক রয়েছে। এতসংখ্যক গ্রাহক নিয়ে স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মগুলোর মধ্যে শীর্ষে অবস্থান ছিল এ সংস্থার। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ডিজনি প্লাস, আমাজন প্রাইম ভিডিওসহ আরও কয়েকটি স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম বাজারে আসায় চরম প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে হয়েছে নেটফ্লিক্সকে। আর চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে সংস্থাটির গ্রাহকসংখ্যাও নিম্নমুখী দেখা যাচ্ছে।
চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে দুই লাখ গ্রাহক হারালে বড় ধরনের ধাক্কা খায় নেটফ্লিক্স। শুধু তা-ই নয়, জুনের মধ্যে আরও ২০ লাখ গ্রাহক কমে যাবে বলে তথ্য পায় স্ট্রিমিং পরিষেবাটি।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়া। এর প্রতিক্রিয়ায় একের পর এক দেশ মস্কোর ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে থাকে। অনেক কোম্পানি দেশটিতে তাদের কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে। ইউক্রেনে রুশ হামলার প্রতিক্রিয়ায় রাশিয়ায় কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় নেটফ্লিক্সও।
একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ গুরুত্বপূর্ণ বাজারগুলোয় দাম বাড়িয়ে দেয় কোম্পানিটি। নেটফ্লিক্স বলছে, রাশিয়ায় কার্যক্রম বন্ধের কারণে সাত লাখ গ্রাহক হারাতে হয়েছে তাদের।
এর আগে ১৫০ কর্মী ছাঁটাইয়ের পাশাপাশি সংস্থাটি নিজস্ব কনটেন্টও কাটছাঁট করেছে। ব্যয় কমানোর জন্য মেগান মার্কেল নির্মিত অ্যানিমেটেড সিরিজ ‘পার্ল’-এর পরবর্তী সিরিজ উন্নয়ন বাতিল করে দিয়েছে।
গত ১৯ এপ্রিল শেয়ারহোল্ডারদের কাছে লেখা এক চিঠিতে নেটফ্লিক্স আশঙ্কা জানিয়েছিল, মে থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত পরবর্তী তিন মাসে তাদের গ্রাহকসংখ্যা আরও ২০ লাখ কমতে পারে। এমন অবস্থায় পাসওয়ার্ড বিনিময়ের মাধ্যমে একই অ্যাকাউন্ট ভাগাভাগি করে ব্যবহারের ওপর কড়াকড়ি আরোপের ইঙ্গিত দেয় কর্তৃপক্ষ। নতুন সদস্যদের সাইনআপকে গুরুত্ব দিয়ে নজরদারি চালাবে তারা।
নেটফ্লিক্সের হিসাব অনুযায়ী, ১০ কোটির বেশি ব্যবহারকারী পাসওয়ার্ড বিনিময় করে নিয়ম ভঙ্গ করছে। এ ক্ষতি পুষিয়ে আনতে বিজ্ঞাপন দেখানোর চিন্তাভাবনাও করছে তারা। নেটফ্লিক্সের সহপ্রতিষ্ঠাতা রিড হাস্টিংস বলেছিলেন, ‘আমাদের যখন দ্রুত প্রসার হচ্ছিল, তখন অ্যাকাউন্ট ভাগাভাগি করে ব্যবহার বন্ধে আমরা খুব একটা গুরুত্ব দিয়ে কাজ করিনি। এখন আমরা অত্যন্ত কঠোরভাবে কাজটি করব।’