গ্যাস নিতে রাশিয়ার সঙ্গে সার্বিয়ার নতুন চুক্তি, জুনের শুরুতে স্বাক্ষর হতে পারে এই চুক্তি

ইউক্রেনে চলমান রুশ সামরিক অভিযানের কারণে পশ্চিমারা একের পর এক রাশিয়ার বিরুদ্ধে অবরোধ দিয়ে যাচ্ছে। এমন কি ইউরোপের রুশ গ্যাস নির্ভরতার পরেও পশ্চিমারা চেষ্টা করে যাচ্ছে রাশিয়াকে কোনঠাসা করার। এমন পরিস্থিতিতে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সার্বিয়ার সঙ্গে তিন বছরের প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ চুক্তি করতে যাচ্ছে রাশিয়া।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে টেলিফোনে আলাপের পর চুক্তির বিষয়টি জানিয়েছেন সার্বিয়ার প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার ভুসিক। যিনি রুশপন্থী ও অতি জাতীয়তাবাদি নেতা হিসেবে পরিচিত।

তিনি চুক্তির বিষয়ে রোববার সাংবাদিকদের বলেন, আমরা একটি তিন বছরের চুক্তি স্বাক্ষর করতে রাজি হয়েছি। আমি আপনাকে যা বলতে পারি তা হল যে আমরা প্রধান যেসব বিষয়গুলোতে একমত হয়েছি তা সার্বিয়ার পক্ষে খুবই অনুকূল।

পোল্যান্ড, বুলগেরিয়া ও ফিনল্যান্ডে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করার পর রাশিয়া এবার সার্বিয়ার সঙ্গে গ্যাস সরবরাহ চুক্তি করতে যাচ্ছে। এই তিন দেশে গ্যাস সরবরাহ বন্ধের কারণ দেশগুলো রাশিয়াকে রুবলে অর্থ পরিশোধ করতে অস্বীকার করেছে।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞার কারণে পশ্চিমা মুদ্রায় আস্থা হারিয়েছে ক্রেমলিন। এমন পরিস্থিতিতে বন্ধু নয় এমন দেশকে রুশ মুদ্রা রুবলেই জ্বালানির মূল্য পরিশোধ করতে হবে।

জুনের শুরুতে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ সার্বিয়ার রাজধানী বেলগ্রেড সফরে এলে এ চুক্তি স্বাক্ষর হতে পারে। সার্বিয়া বলছে, এ চুক্তিতে সবদিক থেকেই লাভ হবে দেশটির। এর আগে ইউক্রেনে রাশিয়া সামরিক অভিযান শুরু করলে পশ্চিমা চাপের পরেও সার্বিয়া রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিন্দা জানাতে অস্বীকার করে। সার্ব নেতারা রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞায় যোগ দিতে পশ্চিমা চাপের অভিযোগ এনেছেন।

সার্বিয়ার কর্মকর্তারা বলছেন, বলকান এই দেশটিকে অবশ্যই পশ্চিমা চাপ প্রতিহত করতে হবে, যদিও এর অর্থ ইইউতে যোগদানের লক্ষ্য পরিত্যাগ করা।

তবে সাধারণ সার্বিয়ানরাও ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগদানে খুব একটা আগ্রহী নয়। সাম্প্রতিক এক জরীপে দেখা গেছে, সার্বিয়ার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগদানের থেকে রাশিয়ার সঙ্গে কোনো একধরনের ইউনিয়নে যোগদানে আগ্রহী বেশি।

সার্বিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলেকজান্ডার ভুলিন বলেন, প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ভুসিকের করা চুক্তিটি প্রমাণ করে যে সার্বিয়ার রুশ-বিরোধী হিস্টিরিয়ায় অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত কতটা সম্মানজনক।

রুশপন্থী হিসেবে পরিচিত ভুলিন আরো বলেন, মুক্ত নেতা, মুক্ত জনগন সার্বিয়ার কল্যানে সিদ্ধান্ত নেয়, পশ্চিমাদের থেকে আদেশ গ্রহণ করে না।

যদিও সামগ্রিকভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন রুশ জ্বালানি নির্ভরতা কমাতে কাজ করছে। এখন ইউরোপীয় ইউনিয়ন যদি রুশ গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয়, তবে সার্বিয়া কিভাবে গ্যাস পাবে তা স্পষ্ট নয়। সার্বিয়া সম্পূর্ণভাবেই রাশিয়ার গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল।

এদিকে অস্ট্রিয়ার তেল ও গ্যাস কংলোমরেট ওএমভি জানিয়েছে, রুশ গ্যাসের মূল্য রুবলে পরিশোধের জন্য রাশিয়ার ব্যাংক গ্যাজপ্রমের সঙ্গে একটি অ্যাকাউন্ট খুলেছে প্রতিষ্ঠানটি।

যদিও ওএমভি দাবি করেছে, তাদের পদক্ষেপ মস্কোর বিরুদ্ধে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেয়া নিষেধাজ্ঞার লঙ্ঘন হবে না। অস্ট্রিয়া তার চাহিদার ৮০ শতাংশ গ্যাস রাশিয়া থেকে আমদানি করে।

রাশিয়ার মিত্র বেলারুশ এরই মধ্যে জানিয়ে দিয়েছে, রাশিয়ার জ্বালানির মূল্য তারা রুবলেই দেবে।

পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় রুবল শুরুতে দাম হারালেও পরে জ্বালানির ওপর ভিত্তি করে তা ঘুরে দাঁড়ায়। বর্তমানে ১ ডলারের বিপরীতে রুবলের দাম রয়েছে ৬৬.৫০।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy