গাজার একমাত্র ক্যানসার হাসপাতাল ধ্বংস করল ইসরায়েল, করিডর সম্প্রসারণের পরিকল্পনা

গাজা উপত্যকার একমাত্র ক্যানসার চিকিৎসার হাসপাতাল, তুর্কি ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল, বোমা হামলা চালিয়ে পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী। শুক্রবার (২১ মার্চ) সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা জানিয়েছে, হাসপাতালটি গাজাকে দুই ভাগে বিভক্ত করে তৈরি করা ‘নেতজারিম করিডরের’ কাছে অবস্থিত ছিল। গত সোমবার ইসরায়েলি সেনারা গাজায় নতুন করে স্থল হামলা শুরু করার সময় এই হাসপাতালটিকে নিজেদের কমান্ড সেন্টার হিসেবে ব্যবহার করেছিল।

২০১৭ সালে তুরস্কের অর্থায়নে ৩৪ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে পুনর্গঠিত এই হাসপাতালটি বছরে ১০ হাজার ক্যানসার রোগীর চিকিৎসা প্রদান করত। গাজার স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার জন্য এটি ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। কিন্তু ইসরায়েলি বাহিনী নেতজারিম করিডর সম্প্রসারণের পরিকল্পনা ঘোষণার পর এটি সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়েছে।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) হাসপাতালটি ধ্বংসের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তারা দাবি করেছে, হাসপাতালটি হামাসের কমান্ড সেন্টার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল এবং হামলার সময় সেখানে হামাসের কয়েকজন সদস্য উপস্থিত ছিলেন, যাদের হত্যা করা হয়েছে। আইডিএফ আরও জানিয়েছে, হাসপাতালটি সক্রিয় ছিল না। তবে এই দাবির স্বাধীন কোনো প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি।

নেতজারিম করিডর ও ইসরায়েলের পরিকল্পনা

নেতজারিম করিডর হলো গাজা উপত্যকাকে উত্তর ও দক্ষিণে বিভক্তকারী একটি সামরিক অঞ্চল, যা ইসরায়েলি বাহিনী গত বছর থেকে নিয়ন্ত্রণ করছে। এই করিডরের মাধ্যমে ইসরায়েল গাজার অভ্যন্তরে তাদের সামরিক উপস্থিতি জোরদার করছে। শুক্রবার ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি সেনাবাহিনীকে গাজার আরও অঞ্চল দখলের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, “যদি হামাস তাদের হাতে থাকা সব জিম্মিকে মুক্তি না দেয়, তাহলে গাজার আরও ভূখণ্ড দখল করা হবে এবং সেখানে স্থায়ীভাবে ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হবে।”

হাসপাতাল ধ্বংসে মানবিক সংকট

তুর্কি ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল গাজার ক্যানসার রোগীদের জন্য একমাত্র আশ্রয়স্থল ছিল। এটি ধ্বংস হওয়ায় হাজার হাজার রোগীর চিকিৎসা বন্ধ হয়ে গেছে। গত অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি হামলায় গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ইতিমধ্যে ভেঙে পড়েছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গাজার ৩৫টি হাসপাতালের মধ্যে ১৬টি এখন পুরোপুরি অকেজো, এবং ৫০টির বেশি প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেছে।

ইসরায়েলের দখলদারিত্বের ইতিহাস

১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর থেকে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের বিশাল অংশ দখল করে রেখেছে ইসরায়েল। বর্তমানে পশ্চিম তীরের অবশিষ্ট ভূমি এবং সমুদ্রতীরবর্তী গাজা উপত্যকার দিকে তাদের নজর পড়েছে। নেতজারিম করিডর সম্প্রসারণ এবং হাসপাতাল ধ্বংসের ঘটনা ইসরায়েলের এই দখলদারি নীতিরই অংশ বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

হাসপাতাল ধ্বংসের ঘটনায় তুরস্কসহ বিভিন্ন দেশ তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, “এটি গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর ইসরায়েলের পরিকল্পিত হামলার অংশ। এ ধরনের কাজ যুদ্ধাপরাধের শামিল।” জাতিসংঘও এই ঘটনার তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে।

গাজার বেসামরিক মানুষ এবং স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার ওপর ইসরায়েলি হামলা অব্যাহত থাকায় মানবিক সংকট আরও গভীর হচ্ছে। তুর্কি ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল ধ্বংসের এই ঘটনা ফিলিস্তিনিদের জন্য একটি বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে।

সূত্র: আলজাজিরা, টাইমস অব ইসরায়েল

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy