গর্ভপাতের অধিকারের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ ও সমাবেশ করেছে হাজার হাজার মানুষ। প্রায় ৫০ বছর ধরে বহাল থাকার পর গর্ভপাতের সাংবিধানিক অধিকার বাতিল করে শুক্রবার রায় দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট।
আদালতের এমন রায় গর্ভপাতের অনুমতির বিষয়টি অঙ্গরাজ্যগুলোর নিজেদের সিদ্ধান্তের উপর ন্যস্ত করেছে। এর মাধ্যমে রো বনাম ওয়েড নামক মামলার সিদ্ধান্তটি পাল্টে দেওয়া হয়। পুরনো রায়টি নারীদের জন্য গর্ভধারণের প্রাথমিক পর্যায়ে গর্ভপাতের অধিকারের নিশ্চয়তা দিয়েছিল।
সুপ্রিম কোর্টের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে নিউইয়র্ক, আটলান্টা, ডেট্রয়েট ও লস অ্যাঞ্জেলসসহ অন্যান্য শহরে সমবেত হয়ে বিক্ষোভ করেছে মার্কিনিরা।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বেশকিছু রাজ্য বলছে, সর্বোচ্চ আদালত কেড়ে নিলেও তারা নারীর গর্ভপাতের অধিকারের পক্ষেই থাকবে।
এ সুবিধা থাকলে অন্য রাজ্যের তুলনামূলক ধনী নারীরা চাইলেই যেসব রাজ্যে গর্ভপাত বৈধ সেখানে যেতে পারলেও দরিদ্ররা বিপাকে পড়বেন বলেই মনে করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সুপ্রিম কোর্টের আদেশে ‘স্তম্ভিত’ হওয়ার কথা জানিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট রো বনাম ওয়েড মামলায় আপিলের রায় দিয়েছিল ১৯৭৩ সালে। তার ৫ বছর পর ইতালিতেও ‘ল ১৯৪’ পাস হলে গর্ভপাত বৈধ হয়।
গর্ভপাত ইস্যুটি যুক্তরাষ্ট্রের মতো ইতালিতে এতটা গুরুত্বু না পেলেও সাম্প্রতিক সময়ে ক্যাথলিক গির্জাসংশ্লিষ্ট কট্টর-ডানপন্থি কিছু গোষ্ঠী বিষয়টি সামনে নিয়ে আসার চেষ্টা করছে। সে কারণে মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তে ইতালিকেও নড়েচড়ে বসতে হচ্ছে।
দেশটির বাম ও মধ্যপন্থি ঘরানার রাজনীতিকরা সমস্বরে মার্কিন আদালতের আদেশের নিন্দা জানাচ্ছেন।
বামপন্থি, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এমা বনিনো বলছেন, ইতালিও যে পেছন পানে হাঁটা শুরু করতে পারে এবং ‘স্থায়ী মনে হওয়া অনেক অর্জনই যে হাতছাড়া হতে পারে’ যুক্তরাষ্ট্রের আদালতের সিদ্ধান্ত তাই দেখাচ্ছে।
‘ল ১৯৪’ পাসের ক্ষেত্রে বনিনো দৃঢ় ভূমিকা রেখেছিলেন।
দেশটির ডান ঘরানার অনেকে অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তে আপ্লুত।“অসাধারণ বিজয়,” বলেছেন কট্টর ডানপন্থি লেগা নর্দের সিমন পিলন। তার চাওয়া, ইতালি ও ইউরোপও এখন যুক্তরাষ্ট্রের পথ অনুসরণ করুক।
তবে তার দলের নেতা মাতিও সালভিনি, যিনি আরও গোঁড়া রক্ষণশীল হিসেবে পরিচিত, তার সুর অন্যরকম।
“জীবনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকলেও গর্ভপাতের ক্ষেত্রে শেষ কথা নারীদেরই থাকা উচিত,” বলেছেন তিনি।
এ কারণে শিগগিরই ইতালিতে গর্ভপাতের ওপর নিষেধাজ্ঞা আসার সম্ভাবনা কম মনে হলেও ‘ল ১৯৪’ তে চিকিৎসকদের গর্ভপাতে আপত্তি জানানোর অধিকার দেওয়া রয়েছে। আর এ অধিকারকে কাজে লাগিয়ে দেশটির প্রায় ৭০ শতাংশ, কোথাও কোথাও ৯০ শতাংশ চিকিৎসকই এখন গর্ভপাতে আপত্তি জানাচ্ছেন বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
উঠোনে ভ্যাটিকান থাকায়, সমকামিতাসহ বিভিন্ন সংবেদনশীল ইস্যুতে ইতালি এখনও ইউরোপের অন্য দেশগুলোর মতো উদার নয়। ভ্যাটিকান গর্ভপাত নিয়ে মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে, যার প্রভাবে ইতালিতেও পড়তে পারে বলে অনেকে আশঙ্কা করছেন।