কোটি কোটি টাকার তিমির বমি পুলিশের হাতে তুলে দিল মৎস্যজীবীরা

শিরোনাম দেখে অনেকের চোখ কপালে উঠতে পারে। সমুদ্রের বিশাল এই প্রাণীর বমি, তার দাম আবার এত টাকা! অনেকেরই খটকা লাগতে পারে বিষয়টি নিয়ে। কিন্তু খটকা লাগার কিছু নেই। স্পার্ম হোয়েল নামে এক প্রজাতির তিমি মাছের বমি অ্যাম্বারগ্রিস এক কেজির দামই এক কোটি রুপি বলে গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে জানা গেছে।

ভারতের কেরালার ভিঝিনজামের একদল জেলে ২৮ কোটি রুপির তিমির বমি বা অ্যাম্বারগ্রিস খুঁজে পেয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি রোববার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে।

জেলেরা সাগরে ২৮ কেজি ৪০০ গ্রাম ওজনের অ্যাম্বারগ্রিস পেয়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় তীরে নিয়ে এসে উপকূলীয় পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।

উপকূলীয় পুলিশ শনিবার বার্তা সংস্থা পিটিআইকে জানিয়েছে, তারা আমাদের কাছে অ্যাম্বারগ্রিস হস্তান্তর করেছে। আমরা বন বিভাগকে জানিয়েছি এবং তারা আমাদের কাছ থেকে এটি গ্রহণ করেছে।

বন বিভাগ অ্যাম্বারগ্রিসকে রাজীব গান্ধী সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজিতে (আরজিসিবি) নিয়ে গেছে বলে এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

প্রশ্ন উঠতে পারে কেন এত দাম এই তিমির বমির? ফরাসি শব্দ অ্যাম্বার আর গ্রিস মিলে ইংরেজি অ্যাম্বারগ্রিস শব্দটি এসেছে। অবশ্য ‘ফ্লোটিং গোল্ড: এ ন্যাচারাল অ্যান্ড (আনন্যাচারাল) হিস্ট্রি অব অ্যাম্বারগ্রিস’ বইয়ের লেখক ক্রিস্টোফার কেমপ অ্যাম্বারগ্রিসকে তিমির বমি বলতে নারাজ। কারণ কোনো খাবার খাওয়ার পর হজম না হলে সাথে সাথে মুখ দিয়ে কোনো কিছু বের হলে তাকে বমি বলা হয়।

কিন্তু স্পার্ম তিমির পাকস্থলিতে অ্যাম্বারগ্রিস তৈরি হতে বছরের বেশি সময় লেগে যায়। স্পার্ম তিমি হাজার হাজার স্কুইড খায়। মাঝে মাঝে সেই স্কুইড পাকস্থলি ও অন্ত্রের মাঝখানে জায়গায় গিয়ে জমা হয়। আর সেটাই দীর্ঘদিন পর অ্যাম্বারগ্রিসে পরিণত হয়। পরে এক সময় স্পার্ম তিমি তা মুখ দিয়ে বের করে দেয়। অ্যাম্বারগ্রিস খানিকটা মোমের মতো পিচ্ছিল হয়।

তবে প্রথমে যখন তিমির মুখ থেকে বের হয় তখন সেটাতে কিছুটা বাজে গন্ধ থাকে। কিন্তু যখন তীরে আসার পর এটা আস্তে আস্তে শক্ত হয়, তখন এর দারুণ গন্ধ হয়। এজন্য সুগদ্ধি তৈরিতে ব্যাপক চাহিদা এই অ্যাম্বারগ্রিসের। বিশ্বের বিভিন্ন দামি সুগন্ধি ছাড়াও বিভিন্ন ওষুধ তৈরিতে ব্যবহার করা হয় এই অ্যাম্বারগ্রিস।

সুগন্ধি তৈরিতে এর ব্যাপক চাহিদা থাকায় আর সহজলভ্য না হওয়ার বাজারে অ্যাম্বারগ্রিসের এতো দাম বলে জানা গেছে। এতো দামের কারণে একে ফ্লোটিং গোল্ড বা ভাসমান সোনাও বলা হয়।

Related Posts

© 2024 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy