কাশীর জ্ঞানবাপী মসজিদ থেকে উদ্ধার হয়েছে ‘শিবলিঙ্গ’। এর মধ্যেই মসজিদের দুটি গম্বুজ, ভূগর্ভস্থ অংশ, পুকুরসহ সব জায়গার পুঙ্খানুপুঙ্খ সমীক্ষা এবং ভিডিওগ্রাফি করে সোমবার বারাণসীর আদালতে রিপোর্ট পেশ করেছে সমীক্ষক দল। এর পর আদালতের নির্দেশে ভূগর্ভস্থ ঘর বা তহখানা, ওজুখানা এবং আশপাশের এলাকা সিল করে দিয়েছে উত্তরপ্রদেশ প্রশাসন। এই গনগনে বিতর্কের মধ্যেই ঘি ঢাললেন তসলিমা নাসরিন।
এক টুইটে স্বেচ্ছা নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন প্রস্তাব করেছেন, ‘সবধর্মের প্রার্থনাস্থল হোক জ্ঞানবাপী মসজিদ’। টুইটে এই বিতর্কিত লেখিকা লেখেনে, ‘সকলের জন্য একটি বড় প্রার্থনাস্থল থাকা ভালো। প্রার্থনা গৃহে থাকবে ১০টি কক্ষ, হিন্দুদের জন্য ১টি (সকল বর্ণ), ১টি মুসলিম (সকল সম্প্রদায়), ১টি খ্রিস্টান (সকল সম্প্রদায়), ১টি বৌদ্ধ, ১টি শিখ, ১টি ইহুদি, ১টি জৈনদের জন্য, ১টি পার্সিদের জন্য। লাইব্রেরি, উঠোন, বারান্দা, শৌচালয়, খেলার ঘর থাকবে সকলের জন্য।’
লেখিকার টুইট ঘিরে প্রতিক্রিয়ার বন্যা বয়ে যাচ্ছে ভারতে। জবাবে এক ইউজার লিখেছেন, ‘হিন্দুদের কাছে মন্দির হলো প্রার্থনার ঘরের চেয়েও বেশি কিছু। এটি বাড়ি থেকে দূরে আরেকটি বাড়ি। তারা প্রার্থনা করে, নাচ করে, গান করে, খায়, কথা বলে, রান্না করে, ধ্যান করে, শিশুরা খেলা করে, বড়রা মন্দিরের পুকুরে স্নান করে, আঁকে, সাজায়। কোনও কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ নেই। যে কেউ ওপরের যে কোনটি করতে পারেন। একটি প্রার্থনা হল সেক্ষেত্রে কার্যকরী হবে না।’
আরেক ইউজার লিখেছেন, ‘ম্যাম সম্মানসহ জানাচ্ছি, এই ধরনের কৃত্রিম, ছিন্নভিন্ন ধর্মগৃহ পৃথিবীর কোথাও কাজ করেনি। একটি দৃঢ় চুক্তির সঙ্গে বিভিন্ন সম্প্রদায়কে পৃথক ব্যক্তিগত স্থান প্রদান করাই ভাল। এতে প্রত্যেকে অন্যের ব্যক্তিগত স্থানকে সম্মান করবে এবং তাদের গোপনীয়তার অধিকারকে আক্রমণ করবে না।’
আরেকটি টুইটে বলা হয়েছে, ‘না ধন্যবাদ। এটা পাকিস্তান ও বাংলাদেশে বাস্তবায়ন করা উচিত! আপনার সমাধান সূত্র ছাড়া ভারতীয়রা ভালোই আছে! ভারতে বসে আপনি এই ধরনের বিনামূল্যে পরামর্শ দিতে পারেন, অনুগ্রহ করে বাংলাদেশে বা পাকিস্তানে একই পরামর্শ দেওয়ার চেষ্টা করুন। ভোট ব্যাঙ্ক এবং রাজনীতির জন্য হিন্দুস্থানকে ধর্মনিরপেক্ষ করে তুলেছিলেন নেহরু।’
লেখিকাকে জবাব দেওয়ার সময় অনেকেই “#জ্ঞানবাপি মসজিদ” ব্যবহার করেছেন।
দীর্ঘদিন ধরেই কাশীর এই মসজিদ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। এই মসজিদ আগে হিন্দু মন্দির ছিল বলে দাবি গোঁড়া হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলোর। পরে, তা ভেঙে মসজিদ করা হয় বলেও দাবি তাদের। সেই বিতর্ককে মাথায় রেখেই হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো বহু বছর আগে থেকেই স্লোগান তুলছে, ‘অযোধ্যা পে ঝাঁকি হ্যায়, কাশী-মথুরা বাকি হ্যায়।’