কলকাতা থেকে বাংলাদেশেরর দূরত্ব এখন মাত্র ৪ ঘণ্টার, পদ্মা সেতুর সফল উদ্বোধন

উদ্বোধন হল পদ্মা সেতুর। উদ্বোধন করলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৬ কিমি এই সেতু দোতলা। একতলায় চলবে বাস। দোতলায় ট্রেন। এখন আপাতত সড়কপথেই চালু হচ্ছে পদ্মা সেতু। এর ফলে কলকাতা থেকে মাত্র ৪ ঘণ্টায় যাওয়া যাবে বাংলাদেশে।

অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, আগামী দুই থেকে তিন বছর পর মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনে মাত্র ৪ ঘণ্টার মধ্যে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ঢাকা থেকে কলকাতা যাওয়া যাবে। আর ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলা থেকে ঢাকা হয়ে কলকাতায় যাওয়া যাবে মাত্র ৬ ঘণ্টায়। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বন্ধুত্বের নিদর্শন স্বরূপ এ যাবত মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনটি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এবং যাত্রাপথে এটি যথেষ্ট নিরাপদ। এ ট্রেনে এখন ঢাকা থেকে সরাসরি কলকাতায় যাওয়া যায়। প্রায় ৪০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ পথ পাড়ি দিতে সময় লাগে অন্তত ১০ ঘণ্টা। ২০২৩ সালের শেষের দিকে অথবা ২০২৪ সালের মার্চের মধ্যে প্রমত্তা পদ্মা নদীর ওপর রেলসেতু চালু হবে।

এটি চালু হলে ঢাকা থেকে কলকাতা যাতায়াতে দুই-তৃতীয়াংশ সময় কমে আসবে। এ সময়ের মধ্যে আগরতলা-আখাউড়া দিয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের সঙ্গে যুক্ত হলে আগরতলা থেকেও ট্রেনে করে কলকাতা পৌঁছানো যাবে স্বল্প সময়ে। বর্তমানে ঢাকা-আগরতলা সরাসরি বাস সার্ভিস চালু রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এবং নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণ হচ্ছে পদ্মা সেতু। প্রায় ৩২ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে এই সেতু নির্মাণে।

শেষের দিকে বা করোনার জন্য এই ব্যয় কিছুটা হলেও বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পদ্মা সেতুর মূল কাঠামো ইতোমধ্যে দাঁড়িয়ে গেছে। সেতুটির ওপর দিয়ে চলবে ছোট-বড় যানবাহন আর নিচ দিয়ে চলবে ট্রেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন পদ্মা সেতু শুধু বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগই শুধু নয়, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যেও অভূতপূর্ব যোগাযোগ উন্নয়ন ঘটবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। করোনার কারণে বর্তমানে মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেন বন্ধ। পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হলে কলকাতা স্টেশন থেকে বনগাঁ জংশন হয়ে হরিদাসপুর সীমান্ত দিয়ে বেনাপোল হয়ে বাংলাদেশের যশোর, নড়াইল, ফরিদপুরের ভাঙ্গা হয়ে ঢাকা পৌঁছবে ট্রেনটি।

এ রুটের দূরত্ব হবে প্রায় ২৫১ কিলোমিটার, যা পার করতে মৈত্রী এক্সপ্রেসের গতিতে চার ঘণ্টার বেশি সময় লাগার কথা নয়। এদিকে সড়ক পথে ঢাকা-কলকাতা যেতে প্রায় সারাদিন লেগে যায়। বহু কাক্সিক্ষত পদ্মা সেতুর নির্মাণ শেষে এই দৃশ্যপট পাল্টে যাবে। সেতুর ওপর দিয়ে আগরতলা-কলকাতা পথের বাসগুলোও কম সময়ে চলাচল করতে পারবে। সেতুর নিচ দিয়ে হচ্ছে রেলপথ। রেলসেতু ও রেলপথ নির্মাণের পর ঢাকা-কলকাতা ও আগরতলা থেকে আখাউড়া হয়ে রেল যোগাযোগ চোখে পড়ার মতো অভাবনীয় উন্নয়ন দেখতে পাওয়া যাবে। পদ্মা সেতু প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সরকারের একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

রেলপথের ঢাকা-মাওয়া ও ভাঙ্গা-যশোর অংশের নির্মাণ কাজ ২০২৩ সালের মধ্যে শেষ করার কথা থাকলেও করোনার জন্য বিভিন্নভাবে কাজে ধীরগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। প্রকল্পের অধীনে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেলপথ নির্মাণ দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। ২০২৪ সালের ৩০ জুনের মধ্যে পদ্মা সেতুর রেলসংযোগ প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা। তবে ধীরগতিতে কাজ চলছে আখাউড়া-আগরতলা রেললাইন প্রকল্পে, যা দেখার কেউ নেই।

ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের জনগণ বাংলাদেশের পদ্মা সেতুর দিকে তাকিয়ে রয়েছে। সেতুটি নির্মাণ হলে পণ্য ও যাত্রী পরিবহনে নতুন দিগন্তের সূচনা হবে। পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে খুব অল্প সময়ে যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে ত্রিপুরা ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সহজেই জুড়ে যাবে। ভারত মনে করছে পদ্মা সেতু নির্মাণ হয়ে গেলে ত্রিপুরার পাশাপাশি বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলও খুব উন্নত হবে। রেলসংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে পারস্পরিক সমন্বয় আরো দৃঢ় হবে। বাণিজ্য বৃদ্ধির সঙ্গে যাত্রী পরিবহনেও নতুন নতুন দুয়ার খুলে যাবে। পদ্মা সেতু নির্মাণ হলে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য খুবই উপকৃত হবে। বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশের জন্য পদ্মা সেতু হতে যাচ্ছে এর ইতিহাসের একটি সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জিং নির্মাণ প্রকল্প। বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের অহংকার।

Related Posts

© 2024 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy