এবার বদলার পালা! কাশ্মীরে হামলার মূলচক্রী লস্কর জঙ্গিনেতা, জেনেনিন কে এই সইফুল্লাহ?

জম্মু ও কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলার জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র পহেলগামের বাইসারান মাঠে ভয়াবহ জঙ্গি হামলা চালানো হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটে নাগাদ এই হামলায় অন্তত ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে ২ জন বিদেশি পর্যটকও রয়েছেন। বহু পর্যটক ও স্থানীয় বাসিন্দা গুরুতর আহত হয়েছেন। গোয়েন্দা সূত্রে সন্দেহ করা হচ্ছে, নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তইবার শাখা ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (TRF) এই হামলা চালিয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ের অন্যতম ভয়াবহ সন্ত্রাসবাদী হামলা হিসেবে এটিকে গণ্য করা হচ্ছে।

সেনার পোশাকে হামলা:

সূত্রের খবর, হামলাকারীরা সেনাবাহিনীর ছদ্মবেশে এসেছিল। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটে নাগাদ জঙ্গিরা হঠাৎ করেই বাইসারান ঘাসের মাঠে ঢুকে পড়ে এবং পর্যটকদের লক্ষ্য করে নির্বিচারে গুলি চালাতে শুরু করে। পহেলগামের এই বাইসারান এলাকাটি তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য ‘মিনি সুইৎজারল্যান্ড’ নামে পরিচিত এবং এটি সাধারণত পর্যটকদের ভিড়ে মুখরিত থাকে। এই আকস্মিক হামলায় সেখানে চরম আতঙ্ক ছড়ায়। লোকজন প্রাণ বাঁচাতে দিগ্বিদিক ছুটতে থাকে। চারদিকে শুধু আর্তনাদ আর রক্তাক্ত দেহ ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। স্থানীয় বাসিন্দা এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা দ্রুত আহতদের উদ্ধারে এগিয়ে আসেন।

হামলার নেপথ্যে লস্কর নেতা সইফুল্লাহ কাসুরি:

গোয়েন্দা সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এই হামলার নেপথ্যে রয়েছে লস্কর-ই-তইবার শাখা সংগঠন ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (TRF)। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, হামলার মূল চক্রী লস্করের শীর্ষ নেতা সইফুল্লাহ কাসুরি এবং পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে (PoK) থাকা তার দুই সহযোগী। মনে করা হচ্ছে, হামলার কয়েকদিন আগেই তারা উপত্যকায় অনুপ্রবেশ করেছিল। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা আরও জানিয়েছেন, অন্তত পাঁচ থেকে ছয় জন জঙ্গি এই হামলায় সরাসরি অংশ নিয়েছিল। মনে করা হচ্ছে, হামলা চালানোর আগে জঙ্গিরা অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে এলাকাটি রেকি করেছিল।

প্রধানমন্ত্রী মোদী সফর বাতিল করে দেশে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শ্রীনগরে:

এই ভয়াবহ হামলার খবর পৌঁছতেই সারা দেশে শোকের ছায়া নেমে আসে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁর পূর্বনির্ধারিত সৌদি আরব সফর মাঝপথে বাতিল করে তড়িঘড়ি দেশে ফিরে আসেন। বিমানবন্দরে নেমেই তিনি জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের সঙ্গে একটি জরুরি বৈঠক করেন। প্রধানমন্ত্রী এই ‘জঘন্য কাজের’ তীব্র নিন্দা করে বলেছেন, যারা এর সঙ্গে যুক্ত, তারা কেউই রেহাই পাবে না, শাস্তি তাদের পেতেই হবে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বর্তমানে শ্রীনগরে অবস্থান করছেন। তিনি সেখানে নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিজে খতিয়ে দেখছেন এবং উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে লাগাতার বৈঠক করছেন।

বিরোধীদের তোপ, পর্যটনে আতঙ্ক:

এই ঘটনা নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোরও শুরু হয়েছে। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী এই হামলাকে ‘ভয়ঙ্কর’ আখ্যা দিয়েছেন এবং কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনা করে বলেছেন যে কাশ্মীরে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে আসার যে দাবি করা হচ্ছে, তা এই হামলার পরিপ্রেক্ষিতে সম্পূর্ণ মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।

এই হামলার পর পহেলগাম এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয় প্রশাসন অনির্দিষ্টকালের জন্য বনধ ঘোষণা করেছে এবং সমস্ত বেসরকারি স্কুল একদিনের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে। হামলার জেরে বহু পর্যটক আতঙ্কিত হয়ে দ্রুত কাশ্মীর ছেড়ে ফিরছেন। আহত এবং আটকে পড়া যাত্রীদের সহায়তার জন্য এয়ার ইন্ডিয়া এবং ইন্ডিগো-র মতো বিমান সংস্থাগুলি শ্রীনগর থেকে দিল্লি ও মুম্বইয়ের উদ্দেশ্যে অতিরিক্ত বিমান পরিষেবা চালু করেছে।

অভিযান চলছে:

এদিকে, হামলাকারীদের খোঁজে গোটা পহেলগাম এবং পার্শ্ববর্তী পাহাড়ি ও জঙ্গল এলাকায় ব্যাপক তল্লাশি অভিযান শুরু করেছে সেনাবাহিনী ও আধাসামরিক বাহিনী।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy