এখনই চাল রপ্তানি নিষিদ্ধের ‘পরিকল্পনা নেই’ ভারতের, জানিয়েছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের দুই কর্মকর্তা

গম-চিনির পর ভারত সরকার চাল রপ্তানিতেও বিধিনিষেধ আরোপ করতে চলেছে, এ ধরনের খবরগুলো ‘গুজব’ বলে জানিয়েছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের দুই কর্মকর্তা। বৃহস্পতিবার (২৬ মে) মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ, বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে ভারতীয় নিষেধাজ্ঞার পরবর্তী নিশানা হতে পারে চাল- এমন খবর প্রকাশিত হয়। তবে এর কিছুক্ষণ পরেই আরেক প্রভাবশালী দৈনিক দ্য হিন্দু বিজনেস লাইন জানায়, আপাতত এ ধরনের কোনো পরিকল্পনা নেই ভারত সরকারের।

সংবাদমাধ্যমটিকে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ভারতের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, চাল রপ্তানিতে আমাদের নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই। এতে সীমা বেঁধে দেওয়ার বিষয়েও কোনো চিন্তাভাবনা চলছে না।

সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আরেক কর্মকর্তাও বলেছেন, এখনই এমন (চাল রপ্তানি নিষিদ্ধ বা সীমিতকরণ) কোনো পদক্ষেপ আসছে না।

দেশটিতে চালের মজুত পর্যবেক্ষণ করছে কেন্দ্রীয় সরকার। এ বিষয়ে ‘তথ্যভিত্তিক’ ও ‘পরিমিত’ পদক্ষেপ নেবে দেশটি।

সূত্রগুলো বলেছে, দেশে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করাকে অগ্রাধিকার দিয়েছে সরকার। এর মাধ্যমে সরকারি বিতরণ ব্যবস্থার জন্য ‘বাফার স্টক’ নীতি মেনে চলা হবে। তবে এই মুহূর্তে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয় হলো মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে সরকারকে।

মজুত পর্যাপ্ত
সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের প্রথম সেই কর্মকর্তা বিজনেস লাইনকে বলেন, গত অর্থবছরে ভারত বাসমতিসহ ২ কোটি ১১ লাখ টন চাল রপ্তানি করেছিল। এরপরেও দেশে চালের পর্যাপ্ত মজুত ছিল। এ বছরও আমাদের রেকর্ড পরিমাণ ফসল উৎপাদন হবে।

সরকারি তথ্য মোতাবেক, চলতি বছরে গত ১ মে পর্যন্ত ফুড করপোরেশন অব ইন্ডিয়া (এফসিআই) রেকর্ড ৩ কোটি ৩২ লাখ ৭০ হাজার টন চাল ও ২ কোটি ৬৬ লাখ ১০ হাজার টন ধান মজুত করেছে, যা গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি।

গত সপ্তাহে কৃষি মন্ত্রণালয়ের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, চলতি কৃষিবর্ষের জুন মাস পর্যন্ত দেশটিতে রেকর্ড ১২ কোটি ৯৬ লাখ ৬০ হাজার টন চাল উৎপাদন হতে পারে। গত বছর এর পরিমাণ ছিল ১২ কোটি ৪৩ লাখ ৭০ হাজার টন।

প্রশ্নের মুখে বিশ্বাসযোগ্যতা
গত বুধবার (২৫ মে) অল-ইন্ডিয়া রাইস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি বিজয় সেতিয়া বলেছেন, অ-বাসমতি চাল রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার গুজব ভারতীয় রপ্তানিকারকদের বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

তিনি বলেন, বাণিজ্য মেলায় আমার সঙ্গে অনেক চাল আমদানিকারকের দেখা হচ্ছে। প্রত্যেকেই উদ্বেগ জানিয়েছেন, তারা ভারতীয় সরবরাহকারীদের কাছ থেকে জানতে পারছেন, কেন্দ্রীয় সরকার অ-বাসমতি চাল রপ্তানি নিষিদ্ধ করতে চলেছে, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। এ অবস্থায় কেন্দ্র কোনো নীতিগত ব্যাখ্যা না দিলে আমদানিকারকরা [ভারতের বদলে] নির্ভরযোগ্য সরবরাহকারী দেশের সন্ধান করবে।

রাজেশ পাহাড়িয়া জৈন নামে নয়াদিল্লি-ভিত্তিক এক রপ্তানিকারক বলেন, চাল রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার গুজব অনেক ছড়িয়ে পড়েছে। রপ্তানিকারকরা আচমকা নিষেধাজ্ঞার জন্য প্রস্তুত হতে ঋণপত্র (এলসি) খুলছেন, যেমনটা গমের ক্ষেত্রে হয়েছিল।

পরিকলিপত গুজব?
দিল্লি-ভিত্তিক বাণিজ্য বিশ্লেষক এস চন্দ্রশেখরন বলেছেন, এ ধরনের গুজব বিশ্ববাজারের মূল্যবৃদ্ধি ও বৈশ্বিক বাণিজ্যের ক্ষতি করার জন্য একটি নীলনকশা হতে পারে। তার মতে, খাদ্যের মূল্যস্ফীতি আরও বাড়িয়ে দিতে কিছু দেশীয় শক্তি চালের দাম বাড়ানোর চেষ্টা করছে কি না, সরকারের তা তদন্ত করে দেখা উচিত।

চাল উৎপাদনে ভারত বিশ্বে দ্বিতীয় এবং রপ্তানিতে প্রথম। ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশটি সুগন্ধি বাসমতি চাল রপ্তানি করেছিল মোট ৩৯ লাখ ৫০ হাজার টন। একই সময়ে তাদের অ-বাসমতি চাল রপ্তানির পরিমাণ ছিল প্রায় ১ কোটি ৭২ লাখ ৬০ হাজার টন। বিশ্বের ৪০ শতাংশ চাল একাই রপ্তানি করে ভারত। ফলে দেশটি চাল রপ্তানিতে সত্যি সত্যি কোনো বিধিনিষেধ আরোপ করলে বৈশ্বিক খাদ্য পরিস্থিতি আরও সংকটময় হয়ে ওঠার আশঙ্কা রয়েছে।

এর আগে, দেশীয় বাজারে দাম কমানোর কথা বলে গত ১৩ মে গম রপ্তানি নিষিদ্ধ করে ভারত। দেশটি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম গম উৎপাদক হলেও বৈশ্বিক রপ্তানিতে তাদের অংশ মাত্র এক শতাংশের মতো।

প্রতিবেশী ও খাদ্য সংকটের ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোকে গম রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত রেখেছে ভারত।

এছাড়া, আগামী ১ জুন থেকে চিনি রপ্তানি সীমিত করারও ঘোষণা দিয়েছে ভারত। গত ২৪ মে ভারতীয় খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ বছর চিনি রপ্তানির সীমা এক কোটি টন নির্ধারণের পরিকল্পনা নিয়েছে দেশটি।

চিনি উৎপাদনে বিশ্বে শীর্ষে ভারত, রপ্তানিতে তাদের অবস্থান কেবল ব্রাজিলের পেছনে।

Related Posts

© 2024 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy