
পেনশন ফান্ড রেগুলেটরি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (PFRDA) গত ১৯ মার্চ, ২০২৫ তারিখে ইউনিফায়েড পেনশন স্কিম (UPS)-এর জন্য কার্যকরী নিয়মাবলী জারি করেছে। এই স্কিম, যা গত বছর আগস্টে ঘোষণা করা হয়েছিল, আগামী ১ এপ্রিল, ২০২৫ থেকে কার্যকর হবে। পুরনো পেনশন স্কিম (OPS) এবং জাতীয় পেনশন সিস্টেম (NPS)-এর মিশ্রণে তৈরি এই নতুন স্কিমের মূল লক্ষ্য হলো কর্মচারীদের অবসরের পর নিশ্চিত পেনশনের মাধ্যমে আর্থিক স্থিতিশীলতা ও মর্যাদা প্রদান করা।
কে পাবেন এই স্কিমের সুবিধা?
PFRDA (UPS-এর কার্যকরীকরণ) রেগুলেশন ২০২৫ অনুযায়ী, বর্তমানে শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মচারীরা এই স্কিমের আওতায় আসবেন। এছাড়াও, যেসব কর্মচারী অবসর নিয়েছেন বা অবসরের আগে মারা গেছেন এবং ইউনিফায়েড পেনশন স্কিম (UPS)-এর জন্য আবেদন করার সুযোগ পাননি, তাঁদের আইনত বিবাহিত স্ত্রী বা স্বামীও এই স্কিমের সুবিধা পাবেন।
কীভাবে কাজ করবে এই স্কিম?
ইউনিফায়েড পেনশন স্কিম (UPS)-এর আওতায় কর্মচারীদের মাসিক অবদান হবে মূল বেতনের (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে নন-প্র্যাকটিসিং অ্যালাউন্স সহ) এবং মহার্ঘ ভাতার ১০ শতাংশ। এই অর্থ কর্মচারীর ব্যক্তিগত PRAN (পার্মানেন্ট রিটায়ারমেন্ট অ্যাকাউন্ট নম্বর)-এ জমা হবে। সরকারও সমান পরিমাণ অর্থ অবদান রাখবে।
গ্রাহকরা ডিফল্ট পেনশন ফান্ড এবং বিনিয়োগের ধরন বেছে নিতে পারবেন। তাঁদের কাছে ১০০ শতাংশ বন্ডে বিনিয়োগের বিকল্প থাকবে, অথবা আংশিক ইকুইটি বিনিয়োগের সুযোগ থাকবে—কনজারভেটিভ লাইফ সাইকেল ফান্ড (২৫% ইকুইটি) এবং মডারেট লাইফ সাইকেল ফান্ড (৫০% ইকুইটি)। যদি কেউ বিনিয়োগের ধরন বেছে না নেন, তবে PFRDA নির্ধারিত ডিফল্ট ধরনেই তাঁদের বিনিয়োগ হবে। গ্রাহকরা প্রতি আর্থিক বছরে একবার পেনশন ফান্ড এবং দুবার বিনিয়োগের ধরন পরিবর্তন করতে পারবেন।
কীভাবে আবেদন করবেন?
ইউনিফায়েড পেনশন স্কিম (UPS)-এ যোগ দিতে, ১ এপ্রিল, ২০২৫-এ চাকরিতে থাকা কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী, যিনি NPS-এর গ্রাহক, তাঁকে ফর্ম এ২ (শিডিউল ১)-এর মাধ্যমে ড্রয়িং অ্যান্ড ডিসবার্সিং অফিসার (DDO)-এর কাছে আবেদন জমা দিতে হবে। নতুন কর্মচারীদের ফর্ম এ১ (শিডিউল ১) জমা দিতে হবে। ইতিমধ্যে অবসরপ্রাপ্তদের ফর্ম বি২ এবং কেওয়াইসি নথি জমা দিতে হবে। কর্মচারীর মৃত্যুর ক্ষেত্রে তাঁর আইনি স্ত্রী বা স্বামী ফর্ম বি৬ এবং কেওয়াইসি নথি জমা দেবেন। আবেদন অনলাইনে বা সরাসরি জমা দেওয়া যাবে।
সরকারের অবদান বেড়েছে
ইউনিফায়েড পেনশন স্কিম (UPS)-এ সরকারের অবদান বাড়িয়ে ১৮.৫ শতাংশ করা হয়েছে, যা আগে ছিল ১৪ শতাংশ। তবে কর্মচারীদের অবদান মূল বেতন ও মহার্ঘ ভাতার ১০ শতাংশই থাকবে। মোট পেনশন কর্পাস দুটি ফান্ডে বিভক্ত হবে – ব্যক্তিগত পেনশন ফান্ড (কর্মচারী ও সরকারের সমান অবদান) এবং পৃথক পুল কর্পাস (শুধু সরকারের অতিরিক্ত অবদান)।
পেনশনের হিসাব
ইউনিফায়েড পেনশন স্কিম (UPS)-এ পেনশন গত ১২ মাসের বেতন, চাকরির মেয়াদ এবং অবসর কর্পাসের ভিত্তিতে গণনা করা হবে। সুবিধাগুলি হলো:
- পূর্ণ পেনশন: ২৫ বছর বা তার বেশি চাকরির জন্য গত ১২ মাসের গড় বেতনের ৫০ শতাংশ।
- আনুপাতিক পেনশন: ২৫ বছরের কম চাকরির জন্য আনুপাতিক হারে পেনশন।
- ন্যূনতম নিশ্চিত পেনশন: ১০ বছরের বেশি চাকরিতে মাসে ন্যূনতম ১০,০০০ টাকা।
কাদের জন্য সুবিধা?
- অবসর (সুপারঅ্যানুয়েশন): ১০ বছরের বেশি চাকরি সম্পন্ন করা কর্মচারীরা অবসরের দিন থেকে পেনশন পাবেন।
- FR 56(j)-এর অধীনে অবসর: সরকারি নিয়মে অবসরপ্রাপ্তরা (শাস্তি ছাড়া) অবসরের দিন থেকে সুবিধা পাবেন।
- স্বেচ্ছা অবসর: ২৫ বছরের বেশি চাকরির পর স্বেচ্ছা অবসরে গেলে সুপারঅ্যানুয়েশনের সময় থেকে পেনশন শুরু হবে।
তবে, যারা বরখাস্ত, অপসারিত বা পদত্যাগ করবেন, তারা ইউনিফায়েড পেনশন স্কিম (UPS)-এর জন্য যোগ্য হবেন না।
উপসংহার
ইউনিফায়েড পেনশন স্কিম (UPS) কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের অবসরের পর জীবনকে আরও নিরাপদ ও স্থিতিশীল করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই স্কিমের মাধ্যমে কর্মচারীদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি সরকারেরও একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। আগামী ১ এপ্রিল, ২০২৫ থেকে এই স্কিম কার্যকর হলে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের জন্য নতুন এক যুগের সূচনা হতে চলেছে।