যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত বুধবার মার্কিন সশস্ত্রবাহিনীর সাবেক লেফটেন্যান্ট জেনারেল কিথ কেলোগকে ইউক্রেন-রাশিয়ার জন্য বিশেষ দূত হিসেবে মনোনীত করেছেন। এরপর থেকেই আলোচনা শুরু হয়েছে, কিথ কেলোগ কীভাবে প্রায় তিন বছর সময় ধরে চলা এই যুদ্ধ বন্ধ করবেন। ট্রাম্পের এই দূত কীভাবে যুদ্ধ বন্ধ করবেন সে বিষয়ে কিছুটা ইঙ্গিত গত এপ্রিলে প্রকাশিত এক কৌশলপত্র থেকে অনুমান করা যায়।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের এপ্রিলে কেলোগ এবং যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি এনএসএ—এর সাবেক চিফ অব স্টাফ ফ্রেড ফ্লেইটজ একটি কৌশলপত্র প্রকাশ করেন। সেখানে তাঁরা যুক্তি দেন, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে যুদ্ধবিরতির জন্য আলোচনা করা।
এই কৌশলপত্রে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনকে ইউক্রেন যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য দায়ী করা হয়েছে। বিশেষত, ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহের সিদ্ধান্ত এবং রাশিয়ার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ব্যর্থ হওয়াকে দায়ী করা হয়েছে। এতে আরও অভিযোগ আনা হয়েছে যে, বাইডেন প্রশাসন ইউক্রেনের মাধ্যমে রাশিয়ার সঙ্গে একটি ছায়াযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে।
এই কৌশলপত্রটি প্রকাশ করেছে আমেরিকা ফার্স্ট পলিসি ইনস্টিটিউট (এএফপিআই। ২০২১ সালে তৎকালীন ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা এই থিংক ট্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন। কেলোগের পরিকল্পনায় ইউক্রেন যুদ্ধের বিষয়ে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে।
ইউক্রেনকে ভূখণ্ডের আশা ছাড়তে বলা সাবেক জেনারেলই ট্রাম্পের বিশেষ দূতইউক্রেনকে ভূখণ্ডের আশা ছাড়তে বলা সাবেক জেনারেলই ট্রাম্পের বিশেষ দূত
কেলোগের লেখায় উল্লেখ করা হয়েছে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের অনেক বক্তব্যের প্রতিধ্বনি করে, যে ‘রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিপরীতে একজন শক্তিশালী ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ প্রেসিডেন্ট থাকলে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার হামলা ঠেকানো যেত।’ তবে পুতিনের ইউক্রেন আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত বাইডেনকে দুর্বল মনে করার কারণে নেওয়া হয়েছিল, এমন প্রমাণ নেই—যা কেলোগ ও ফ্লেইটজ দাবি করেছেন।
কেলোগের পরিকল্পনায় যুক্তরাষ্ট্রকে যুদ্ধ শেষ করার একটি আনুষ্ঠানিক নীতি প্রণয়নের কথা বলা হয়েছে, যেখানে যুদ্ধবিরতি ও আলোচনার মাধ্যমে একটি সমাধান খোঁজার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এই পরিকল্পনার মূল বিষয়গুলো হলো—যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে আত্মরক্ষার জন্য অস্ত্র সরবরাহ অব্যাহত রাখবে। তবে ভবিষ্যতে এই সামরিক সহায়তা নির্ভর করবে ইউক্রেন রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি আলোচনায় অংশ নেবে কি না তার ওপর। পুতিনকে আলোচনায় রাজি করানোর জন্য ন্যাটো নেতারা ইউক্রেনের ন্যাটো সদস্যপদ প্রক্রিয়া সাময়িকভাবে স্থগিত রাখার প্রস্তাব দিতে পারেন।
কেলোগ-ফ্লেইটজের কৌশলপত্রে আরও যেসব মূল বিষয় তুলে ধরা হয়েছে সেগুলো হলো—রাশিয়া যদি একটি শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করে, তবে কিছু নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। এ ছাড়া, রাশিয়ার জ্বালানি বিক্রিতে শুল্ক আরোপ করে সেই অর্থ ইউক্রেন পুনর্গঠনের কাজে ব্যবহারেরও প্রস্তাব রাখা হয়েছে এই কৌশলপত্রে।