“ইউক্রেনে ফের হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করতে পারে রাশিয়া”- হুঁশিয়ারি আমেরিকার

ইউক্রেনকে লক্ষ্য করে ফের আরেকটি পরীক্ষামূলক হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করতে পারে রাশিয়া। যুক্তরাষ্ট্রের একটি গোয়েন্দা পর্যালোচনায় এমনই হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।

তবে এই অস্ত্র ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধের গতিপথ নির্ধারণ করতে পারবে বলে মনে করে না ওয়াশিংটন। বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম ভয়েস অব আমেরিকা।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে ইউক্রেনকে লক্ষ্য করে রাশিয়া আরেকটি পরীক্ষামূলক হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করতে পারে বলে যুক্তরাষ্ট্রের এক গোয়েন্দা পর্যালোচনায় বলা হয়েছে। তবে মার্কিন এক কর্মকর্তা বুধবার জানিয়েছেন, এই অস্ত্র প্রায় তিন বছর ধরে চলা যুদ্ধের গতিপথ নির্ধারণ করতে পারবে বলে ওয়াশিংটন মনে করে না।

এর আগে রাশিয়া গত ২১ নভেম্বর ইউক্রেনের দেনিপ্র শহরে প্রথমবার তাদের ওরেশনিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালায়। প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এই আক্রমণকে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের সরবরাহ করা দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাশিয়ার গভীরে ইউক্রেনের হামলার জবাব হিসেবে অভিহিত করেছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ওই কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, “আমাদের মূল্যায়ন অনুযায়ী, ওরেশনিক যুদ্ধক্ষেত্রে যুদ্ধের গতিপথ নির্ধারণ করতে পারবে না। এটা মূলত ইউক্রেনে ত্রাস সৃষ্টি করার আরেকটি রুশ প্রচেষ্টা, যেটা ব্যর্থ হবে।”

অবশ্য রাশিয়ার কাছ থেকে এ বিষয়ে তাৎক্ষনিক কোনও প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি।

প্রেসিডেন্ট পুতিন এর আগে বলেছিলেন, ইউক্রেন যদি দূরপাল্লার পশ্চিমা ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রুশ ভূখণ্ডে আঘাত হানতে থাকে, তাহলে রাশিয়া আবার ওরেশনিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করতে পারে, এবং সেটি সম্ভবত কিয়েভের “সিদ্ধান্ত গ্রহণের কেন্দ্রগুলো” লক্ষ্য করে।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, বুধবার সকালে ইউক্রেন রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর তাগানরোগে একটি সামরিক বিমান ঘাঁটি লক্ষ্য করে যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহ করা ছয়টি এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। তারা এই আক্রমণের জবাব দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে।

রাশিয়া বলছে, ওই ছয়টি ক্ষেপণাস্ত্রই ভূপাতিত করা হয়েছে তবে ক্ষেপণাস্ত্রের ধ্বংসাবশেষ মাটিতে আছড়ে পড়ার পর কয়েকজন আহত হয়েছেন।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট দাবি করেছেন, ওরেশনিক ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করা অসম্ভব। তিনি বলেন, এই ক্ষেপণাস্ত্রর ওয়ারহেডে সাধারণ বিস্ফোরক থাকলেও, তার ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা পারমাণবিক অস্ত্রের সাথে তুলনা করা যায়।

কিছু পশ্চিমা বিশেষজ্ঞ বলেছেন, ওরেশনিকের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে— এটা একসঙ্গে একাধিক ওয়ারহেড বহন করতে পারে, যেগুলো একই সময় ভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে, যেই সক্ষমতা সাধারণত দূরপাল্লার আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রর থাকে।

তিন সপ্তাহ আগে দেনিপ্রতে ওরেশনিকের আঘাতের দৃশ্য একটি নজরদারি ক্যামেরায় ধরা পড়লে ভিডিওতে দেখা যায়, বিশাল আগুনের কুণ্ডলী অন্ধকার ভেদ করছে এবং অসাধারণ গতিতে মাটিতে আঘাত হানছে।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তা এই ক্ষেপণাস্ত্রর কার্যকারিতা সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা দিয়ে বলেন, এগুলোর ধরন হচ্ছে “পরীক্ষামূলক” এবং “রাশিয়ার হাতে সম্ভবত গুটিকয়েক আছে”। তিনি আরও বলেন, এই ক্ষেপণাস্ত্রর বিস্ফোরক ক্ষমতা ইউক্রেনে রাশিয়ার ব্যবহার করা অন্য কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র থেকে কম।

যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, তারা ইউক্রেনের জন্য আরও আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পাঠাচ্ছে। তবে এরই মধ্যে রুশ বাহিনী পূর্ব ইউক্রেনে ক্রমাগত অগ্রসর হচ্ছে। সেটিও আবার এমন এক সময়ে যখন আর ছয় সপ্তাহ পর ডোনাল্ড ট্রাম্প পুনরায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছেন।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy