‘আমি যখন দুর্গাপুজো-কালীপুজো করি…’, ফুরফুরা শরিফ থেকে বড় বার্তা দিলেন মমতা?

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সোমবার হুগলির ফুরফুরা শরিফে পা রেখে সম্প্রীতি, শান্তি ও ঐক্যের বার্তা দিয়েছেন। প্রায় এক দশক পর এই পবিত্র দরগাহে তাঁর এই সফর ঘিরে যেমন উৎসাহ দেখা গেছে, তেমনই বিরোধীদের কটাক্ষের মুখেও পড়তে হয়েছে তাঁকে। তবে মমতা সেই সমালোচনার কড়া জবাব দিতেও ছাড়েননি।

মুখ্যমন্ত্রী এদিন মহান সুফি সাধক আবু বকর সিদ্দিকির মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং স্থানীয় ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন। এরপর তিনি ইফতারেও অংশ নেন। এই সফর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ফুরফুরা শরিফ আমার হৃদয়ের জায়গা। আমি এখানে আগেও বহুবার এসেছি।” কিন্তু বিরোধী দলগুলো তাঁর এই সফরকে “ভোটের রাজনীতি” বলে কটাক্ষ করেছে।

বিরোধীদের কটাক্ষের জবাবে মমতা

বিরোধীদের অভিযোগের জবাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমি এখানে আজ নতুন করে আসিনি। ফুরফুরা শরীফে আমি ১৫-১৬ বার এসেছি। আমি যখন কাশী বিশ্বনাথ বা পুষ্কর যাই, তখন কেউ প্রশ্ন তোলে না। দুর্গাপুজো, কালীপূজা, বড়দিন বা হোলিতে অংশ নিলে কোনও প্রশ্ন ওঠে না। তাহলে ফুরফুরা শরীফে এলে এত প্রশ্ন কেন?” তিনি আরও জানান, তাঁর এই সফর ধর্মীয় বিভেদ নয়, বরং সম্প্রীতির বার্তা বহন করে।

“বাংলা সম্প্রীতির মাটি”

ফুরফুরা শরিফের পবিত্র মঞ্চ থেকে মমতা বলেন, “আমাদের বাংলা সম্প্রীতির মাটি। এখানে হিন্দু, মুসলিম, শিখ, খ্রিস্টান – সবাই একসঙ্গে মিলেমিশে থাকে। আমি এখান থেকে শান্তি ও ঐক্যের বার্তা দিতে চাই।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, ধর্মের নামে বিভেদ সৃষ্টি করা বাংলার সংস্কৃতির পরিপন্থী।

বিরোধীদের অভিযোগ: “সংখ্যালঘু তোষণ”

বিরোধী দলগুলো, বিশেষ করে বিজেপি, মমতার এই সফরকে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে মুসলিম ভোট ব্যাংক টানার কৌশল বলে আক্রমণ করেছে। তাঁদের দাবি, এটি “ভোটের স্বার্থে সংখ্যালঘু তোষণ”। জবাবে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমি সব ধর্মকে শ্রদ্ধা করি। সকলের উৎসবে অংশ নিই। এটাই বাংলার সংস্কৃতি। যারা ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করে, তারাই এসব প্রশ্ন তোলে।”

রাজনৈতিক বার্তা না শান্তির আহ্বান?

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই সফর একদিকে মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি তাঁর আন্তরিকতা প্রকাশ করছে, অন্যদিকে বিজেপি ও অন্যান্য বিরোধী দলগুলোর সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানের ইঙ্গিত দিচ্ছে। ফুরফুরা শরিফের শান্তির বাতাস থেকে বাংলার রাজনীতিতে এবার কতটা ঝড় ওঠে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

এই সফরের মধ্য দিয়ে মমতা একদিকে ধর্মীয় সম্প্রীতির পক্ষে সওয়াল করেছেন, অন্যদিকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের কঠোরভাবে জবাব দিয়েছেন। ফুরফুরা শরিফের এই ঘটনা আগামী দিনে বাংলার রাজনীতিতে কী প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy