একবার ভালবাসলে মন ভালবাসার মানুষটিকে নিজের করে পেতে চায়। কিন্তু যদি শুনতে হয়, আপনার সঙ্গে প্রেমে পড়ার পরেও আপনার সঙ্গীর মনে জেগে রয়েছে ‘প্রাক্তন’-এর মুখচ্ছবি? তখন কী ভাববেন? আপনার সঙ্গী কি সত্যিই কি আপনাকে ভালবাসে? নাকি তার ভালবাসায় কোনও ফাঁক রয়ে গেছে। আসলে সম্পর্কের মধ্যে কোনও শর্ত থাকা উচিত নয়। হতেই পারে সঙ্গীর কোনও কোনও বিষয় আপনার পছন্দ নয়। তবুও আপনি তাকে ভালবাসেন। এটাই শর্তহীন ভালবাসা।
শর্তাধীন ভালবাসা আর শর্তহীন ভালবাসা— দু’টোর মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। শর্তাধীন ভালবাসায় থাকে অহংকার। আমি যেমন চাই তুমি ঠিক তেমনই থাকবে। তোমার ভাবনাচিন্তা, আচরণ সব হবে আমার মনের মতো। আমি সব সময় ঠিক আর তুমি ভুল। আমার মতো করেই তোমায় চলতে হবে। এই মনোভাব কাজ করে শর্তাধীন ভালবাসায়। যদি আপনার ভালবাসার মধ্যে এমন অহংকার লুকিয়ে থাকে, তাহলে বুঝতে হবে সে ভালবাসা শর্তহীন ভালবাসা নয়। হতে পারে না।
আসুন দেখা যাক একটা তালিকা। আপনার সম্পর্কে এগুলি নেই তো? বুঝে নিন আপনার ভালবাসা প্রকৃত চেহারা-
১। মনে রাখবেন কেউই নিখুঁত নয়। ভুল করা, মেজাজ হারানো— যে কোনও সম্পর্কের চেনা ছবি। কাউকে ভালবাসা মানেই তার চরিত্রের ত্রুটিবিচ্যুতিকেও গ্রহণ করা। উলটো ছবিটাও কিন্তু খেয়াল রাখবেন। সে কি আপনার খারাপগুলোকে অনায়াসে মেনে নেয়? উত্তর ‘না’ হলে কিন্তু বুঝতে হবে আপনার ভালবাসা শর্তাধীন ভালবাসা।
২। ভালবাসা মানে নিজেকেও ছাপিয়ে অন্যকে ভালবাসা। নিজের ইগোকে সরিয়ে রেখে অন্যকে গ্রহণ করা। আপনার সঙ্গী কি তেমনটাই করে? নাকি তার কাছে নিজের ইগোটাই বড় হয়ে উঠছে? এই চিহ্ন কিন্তু শর্তাধীন ভালবাসাকেই চিহ্নিত করছে।
৩। ভালবাসার মানুষটাকে সুখী দেখার চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কী হতে পারে? নিজের সুখের থেকেও তার সুখটাই বড় হয়ে ওঠে। এমনটাই আপনার ভালবাসাতেও হয় তো? যদি আপনার সঙ্গী আপনার সুখকে পাত্তা না দিয়ে নিজের সুখকেই প্রাধান্য দেয়, তাহলে বুঝতে হবে আপনার ভালবাসা শর্তাধীন ভালবাসা।
৪। একটি ছেলে ও একটি মেয়ের সম্পর্কের মধ্যে কেউ একজন যখন আধিপত্য দেখায়, তখনই কিন্তু সেই সম্পর্কে ফাটল ধরে।
৫। আপনার ভালবাসার মানুষ যেমন চায়, আপনি কি ঠিক তেমনই? হোক না হোক, সঙ্গীর এই প্রত্যাশা রয়েই যায়। প্রত্যাশা আপনারও থাকে। আসলে এ ব্যাপারে একটা ফ্যান্টাসি সকলের মধ্যেই কাজ করে চলে। কিন্তু সত্যি আর ফ্যান্টাসি কখনও এক বিন্দুতে মেলে কি?
৬। কাউকে সত্যি ভালবাসলে কেউ কখনও তার উপরে নিজের মতটা চাপিয়ে দিতে পারে না। সঙ্গীর মতটাকেও সমান গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
৭। সম্পর্কের মধ্যে প্রত্যাশা তো খাকবেই। সেটা ক্রমেই বেড়ে চলে। মানুষের স্বভাবই এই। অনেক সময়ই এমন হয়, আপনার কোনও আচরণ তাকে সন্তুষ্ট করল না। দেখতে হবে সেটাকে সে কীভাবে গ্রহণ করল।
৮। আপনার সঙ্গী কি আপনার আচরণকে দ্রুত বিচার করে নেয়? কেবল প্রেমের সম্পর্কই নয়, জীবনের কোনও কিছুকেই প্রথম দেখাতে বিচার করা ঠিক নয়। যে আপনাকে সত্যিই ভালবাসে, সে আপনার ভুলকে দ্রুততার সঙ্গে বিচার করবে না। অনেক কিছুকেই প্রাথমিক ভাবে যেমন মনে হয়, আসলে তা নয়। তাই ঠান্ডা মাথায় সেটাকে গ্রহণ করাই বাঞ্ছনীয়। যদি আপনার সঙ্গী আপনার কোনও আচরণকে তাড়াহুড়ো করে বিচার করে, তাহলে সেটা মোটেই কাঙ্ক্ষিত নয়।
৯। আপনি যেমন, ঠিক তেমনটা বলেই আপনাকে ভালবাসে তো আপনার সঙ্গী? নাকি আপনার চাকরি, আপনার রূপ— এগুলোই তাঁকে আপনার প্রতি আকৃষ্ট করেছে? উত্তর যদি হ্যাঁ হয়, তাহলে বুঝতে হবে আপনার প্রেম শর্তাধীন।
১০। নিজের প্রাক্তনের সঙ্গে বার বার তুলনা করা— অত্যন্ত খারাপ প্রবণতা। শর্তাধীন ভালবাসার সবথেকে বড় চিহ্ন কিন্তু এটাই।
ভালবাসার প্রকাশ ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে বদলে যায়। উপরে বলা লক্ষণগুলোর কিছু আপনার সঙ্গীর ক্ষেত্রে মিলে গেলেই তার ভালবাসাকে শর্তাধীন বলে মনে করে নেওয়াটাও তাই বোকামো। তাই দুম করে বিচার না করে ধীরে ধীরে তাকে বুঝতে চেষ্টা করুন। হতেই পারে, সে আপনাকে নিঃশর্ত ভালবাসে, কিন্তু সব সময় সেটা প্রকাশ করতে পারে না। কাজেই চোখ-কান খোলা রাখুন। ভালবাসাকে অনুভব করুন ধীরে ধীরে।