আঙুল ঢুকিয়ে নষ্ট করেন অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর চোখ, ভেঙে ফেলেন হাত-পা, গ্রেফতার স্বামী

যৌতুকের টাকা না পেয়ে ফেরার পথে থাপ্পর দিয়ে চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে ফেলে দেন। এরপর মাটিতে চেপে ধরে নিজের আঙুল দিয়ে নষ্ট করে দেন বাম চোখ এবং দুই হাত-দুই পা মুচড়ে ভেঙে ফেলেন। এতেও হননি ক্ষান্ত। মাথায় প্রচণ্ড আঘাত করে রক্তাক্ত করার পর মোটসাইকেলের গরম সাইলেন্সার পাইপের সঙ্গে চেপে ধরে পুড়ে ফেলেন বুক।
এভাবেই স্ত্রী মনি আক্তারের ওপর নৃশংস নির্যাতন চালান সুমন। এরপর ভর্তি করান হাসপাতালে। সেখানে ২৬ দিন চিকিৎসাধীন শেষে মারা যান আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা মনি আক্তার।

স্ত্রী হত্যার পর থেকে গত পাঁচ মাস ধরে বিভিন্ন এলাকায় পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন সুমন। শেষে শনিবার ভোরে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানার চন্দ্রনগর এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে র‍্যাব। একইদিন বিকেলে নগরীর চান্দগাঁও ক্যাম্পে সংবাদ সম্মেলন করে ঘটনার আদ্যোপান্ত তুলে ধরেন র‍্যাব-৭ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এমএ ইউসুফ।

গ্রেফতার সুমন ফটিকছড়ি উপজেলার ভুজপুর থানার বাদুরখিল বোছা মিয়ার বাড়ির আবুল কাশেমের ছেলে।

র‍্যাব জানায়, পূর্বের দুটি বিয়ের তথ্য গোপন করে দেড় বছর আগে মনি আক্তারের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তাকে বিয়ে করেন সুমন। বিয়ের পর থেকে যৌতুকের জন্য বিভিন্ন সময়ে মনি আক্তারের ওপর শারীরিক নির্যাতন চালাতেন তিনি। এ অবস্থায় নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে সংসার টিকিয়ে রাখতে স্বামীকে একটি মোটরসাইকেল ও ৫০ হাজার টাকা দেন মনি আক্তার। এরই মধ্যে তিনি আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা হন।

মনি আক্তারের বাবা চা বাগানে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। স্বামীর যৌতুকের চাহিদা মেটাতে মনি আক্তার নিজেও চা বাগানে কাজ করতেন। সেখানে কাজ করে যা টাকা পেতেন, স্বামীকে খুশি রাখতে সবই তুলে দিতেন তার হাতে। কিন্তু এতেও চাহিদা মেটতো না স্বামী সুমনের। একদিন বাবার বাড়ি থেকে যৌতুকের টাকা আনতে মনি আক্তারকে চাপ প্রয়োগ করে তার বাবার কর্মস্থল দাঁতমারা চা বাগানে পাঠিয়ে দেন।

পরে গত বছরের ৩১ অক্টোবর বন্ধু টিপুর মোটরসাইকেলে তাকে নিয়ে নিজেই শ্বশুরের কর্মস্থলে যান এবং টাকা চেয়ে ফের মনি আক্তারের ওপর চাপ প্রয়োগ শুরু করেন। ওই সময় মনি আক্তারের দরিদ্র বাবা টাকা দিতে না পারায় ক্ষিপ্ত হয়ে মনি আক্তারকে নিয়ে মোটরসাইকেলে সেখান থেকে রওনা হন।

মোটরসাইকেলে আসতে আসতে ‘কেন টাকা আনতে পারলো না’ এ নিয়ে গালিগালাজের একপর্যায়ে ভুজপুর থানার কালিকুঞ্জ এলাকায় এলে মনি আক্তারকে চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে ফেলেন দেন সুমন। এরপরই তার ওপর শুরু করেন নৃশংস নির্যাতন। ওই সময় বন্ধু টিপু তাকে সহযোগিতা করেন।

একপর্যায়ে মৃত্যু প্রায় নিশ্চিত জেনে মনি আক্তারকে প্রথমে নাজিরহাট সরকারি হাসপাতালে ও পরবর্তীতে অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করান। সেখানে ২৬ দিন চিকিৎসা শেষে ২৫ নভেম্বর আট মাসের গর্ভাবস্থায় মনি আক্তার মারা যান।

ওই ঘটনায় ভূজপুর থানায় মামলা করেন মনি আক্তারের ভাই মোহাম্মদ আব্বাস। মামলায় সুমনের সহযোগী টিপুকে গ্রেফতার করা হলেও পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন সুমন। আত্মগোপনে থেকে শুরু করেন ইটভাটায় হেলপারের কাজ।

র‍্যাব-৭ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এমএ ইউসুফ বলেন, সুমন আগে ফটিকছড়িতে চা বাগান এলাকায় মোটরসাইকেলে লোকজন আনা-নেওয়ার কাজ করতেন। সেই সূত্রে চা শ্রমিক মনি আক্তারের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। এরপর আগের দুটি বিয়ের কথা গোপন করে মনি আক্তারকে বিয়ে করেন তিনি। আগের স্ত্রীদের ওপরও শারীরিক নির্যাতন চালাতেন সুমন। বিয়ের পর সেই নির্যাতন নেমে আসে মনি আক্তারের ওপরও। একপর্যায়ে তা মাত্রা ছাড়িয়ে মনি আক্তারকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়।

র‍্যাবের এ কর্মকর্তা আরো বলেন, চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সুমনকে গ্রেফতারে গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রাখে র‍্যাব। এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার ভোরে বায়েজিদ বোস্তামী থানার চন্দ্রনগর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার বিষয় স্বীকার করেন সুমন। পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নিতে তাকে ভুজপুর থানায় হস্তান্তর করা হয়।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy