হাত-পা বাঁধা এক নারী পুকুরের জলে হাবুডুবু খাচ্ছেন, সম্প্রতি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে এমন দৃশ্য দেখা যায়। সেই ভিডিওতে অপর এক নারী বলছেন, ক্যামেরা রেডি অ্যাকশন। পুকুরের জল থেকে ঘাটে উঠলেই এক যুবক বাঁশের কঞ্চি দিয়ে বাড়ি দিচ্ছেন ওই নারীর শরীরে।
ছড়িয়ে পড়া ভিডিও সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নির্যাতনের শিকার গৃহবধূর নাম শিউলি আক্তার (১৯)। তিনি বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলার ঈশ্বরগঞ্জ ইউনিয়নের চরশিহারি গ্রামের রিকশাচালক সাইদুল ইসলামের মেয়ে।
শুক্রবার নির্যাতনের ঘটনাটি ঘটে নেত্রকোনা সদর উপজেলার আমতলী ইউনিয়নের ঝগড়াকান্দা গ্রামে। পরদিন শনিবার নির্যাতনের শিকার গৃহবধূকে তার বাবার বাড়ি ঈশ্বরগঞ্জে ফেলে রেখে যাওয়ায় সময় গৃহবধূর চিৎকারে স্থানীয়রা স্বামী রাজন মিয়া ওরফে রফিকুল ইসলামকে আটক করে পুলিশ সোপর্দ করেন।
এ ঘটনার পর রোববার দুপুরে নির্যাতনের স্বীকার গৃহবধূ শিউলি আক্তার বাদী হয়ে ঈশ্বরগঞ্জ থানায় মামলা করেন। ওই মামলায় আটক রফিকুল ইসলামকে আদালতের নির্দেশে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।
রাজন মিয়া ওরফে রফিকুল ইসলাম নেত্রকোনা সদর উপজেলার আমতলী ইউনিয়নের ঝগড়াকান্দা গ্রামের মৃত লালচান মিয়ার ছেলে।
ঈশ্বরগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জহিরুল হক মুন্না বলেন, মামলা দায়েরের পর গ্রেফতার রফিকুল ইসলামকে আদালতের নির্দেশে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অপর আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।
মামলার এজাহার ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর পারিবারিকভাবে শিউলি আক্তারের সঙ্গে রফিকুল ইসলামের বিয়ে হয়। বিয়ের সময় ৫০ হাজার টাকা যৌতুক দেওয়া হলেও রমজানের আগে থেকে আবারও যৌতুক চেয়ে শিউলির ওপর নির্যাতন শুরু করেন রাজন। শিউলির বাবা একটি মোবাইল কিনে দেন রাজনকে। এরপর ২০ হাজার টাকা ও ঘরের আসবাবপত্র যৌতুক হিসেবে চাইলে তা দিতে অস্বীকার করেন শিউলি। এরপরই শুরু হয় শিউলির ওপর নির্যাতন।
ঘটনার দিন শুক্রবার শিউলি আক্তারের স্বামী রাজন, শাশুড়ি জরিনা খাতুন ও জা রুমা আক্তার মিলে মারধর করেন। একপর্যায়ে শিউলির হাত-পা বেঁধে মারধর শেষে শরীরে মরিচের গুঁড়া ডলে দেন। এ সময় জল খেতে চাইলে মরিচের গুঁড়া মিশিয়ে জল দেওয়া হয় শিউলিকে। জল খেয়ে যন্ত্রণায় হাত-পা বাঁধা অবস্থায় হামাগুড়ি দিয়ে বাড়ির পাশে পুকুরের জলে পড়ে যান তিনি। ওই সময় ভিডিও ধারণ করা হয়।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী শিউলি আক্তার বলেন, আমাকে বেধড়ক মারধর করার পর, হাত-পা বেঁধে রাখা হয়। আমি জল চাইলে মরিচের গুঁড়া মিশিয়ে জল দেওয়া হয়। পরে যন্ত্রণায় হাত-পা বাঁধা অবস্থায় হামাগুড়ি দিয়ে বাড়ির পাশে পুকুরের জলে পড়ি। জল থেকে উঠতে চাইলে আমার স্বামী আমাকে আবারও মারধর করে। পরে সেই মারধরের ভিডিও আমার জা রুমা আক্তার তার ফোনে ধারণ করেন। আমার স্বামীসহ যারা আমাকে নির্যাতন করেছে আমি তাদের বিচার চাই।
