
চলচ্চিত্র শিল্পের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডস বা অস্কারের আয়োজক সংস্থা ‘অ্যাকাডেমি অফ মোশন পিকচার আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেস’ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে নির্মিত সিনেমার বিষয়ে নতুন নিয়ম জারি করেছে। অ্যাকাডেমি ঘোষণা করেছে যে, এখন থেকে এআই ও অন্যান্য ডিজিটাল টুলের ব্যাপক ব্যবহার সত্ত্বেও কোনো সিনেমা অস্কারের শীর্ষ পুরস্কারের জন্য মনোনীত হতে বা জিততে পারবে।
সোমবার নতুন নিয়মটি জারি করা হয়েছে। অ্যাকাডেমি জানিয়েছে, সিনেমায় এআই বা অন্য ডিজিটাল টুলের ব্যবহার কোনো সিনেমার “মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনায় সাহায্য বা ক্ষতি করবে না।” অর্থাৎ, প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে কোনো ছবি পুরস্কারের দৌড় থেকে বাদ পড়বে না।
তবে একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত যোগ করেছে অ্যাকাডেমি। তারা বলেছে, অস্কার বিজয়ীদের বাছাই করার সময় জুরিরা সিনেমায় মানুষের সম্পৃক্ততার বিষয়টিও বিশেষভাবে বিবেচনা করবে। এর অর্থ হলো, শুধুমাত্র প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি না হয়ে সেখানে মানুষের সৃজনশীলতা ও অবদান কতটা রয়েছে, তা পুরস্কারের মানদণ্ডে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হবে। অ্যাকাডেমির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কাউন্সিল জেনারেটিভ এআই টুল ব্যবহার করে তৈরি বিভিন্ন সিনেমার পুরস্কার দেওয়ার বিষয়টি সুপারিশ করেছিল।
সম্প্রতি হলিউডের বেশ কিছু সিনেমায় জেনারেটিভ এআইয়ের ব্যবহার দেখা গেছে, যা সাধারণ টেক্সট প্রম্পটের মাধ্যমে টেক্সট, ছবি, অডিও এবং ভিডিও তৈরি করতে পারে। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই বছরের মার্চে অনুষ্ঠিত অস্কারে পুরস্কৃত কিছু সিনেমাতেও এআই ব্যবহৃত হয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, অস্কারজয়ী অভিনেতা অ্যাড্রিয়ান ব্রডি ‘ব্রুটালিস্ট’ ছবিতে হাঙ্গেরিয়ান ভাষায় কথা বলার সময় তার উচ্চারণ উন্নত করতে জেনারেটিভ এআই ব্যবহৃত হয়েছিল। এছাড়াও, অস্কারজয়ী সংগীতশিল্পী এমিলিয়া পেরেজের গানের কণ্ঠ উন্নত করার জন্য একই ধরনের ভয়েস ক্লোনিং প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছিল। এই প্রযুক্তির ক্ষমতা এতটাই যে, এটি দ্রুত কোনো শিল্পীর সুর ও শৈলী পরিবর্তন বা সমন্বয় করতে পারে, এমনকি সূক্ষ্মভাবে কারও চেহারা পরিবর্তন এবং সংগীত ও সিনেমা নির্মাণের কাজেও এটি সহায়ক। এর ফলে প্রযোজনার জন্য এআই প্রযুক্তি ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
তবে সিনেমায় এআইয়ের ব্যবহার একটি বড় ধরনের বিতর্কও তৈরি করেছে। বিশেষ করে, এ ধরনের টুল প্রশিক্ষণে ব্যবহৃত ডেটা বা উপাদানের স্বত্ব এবং শিল্পী ও কর্মীদের জীবিকার ওপর এর সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন শিল্পী ও অভিনেতারা। ২০২৩ সালে হলিউডে ধর্মঘটের সময় অভিনয় শিল্পী ও চিত্রনাট্যকাররা এআইয়ের কারণে নিজেদের কাজ হারানোর আশঙ্কার কথা জোরালোভাবে তুলে ধরেছিলেন।
অস্কারজয়ী অভিনেত্রী সুসান সারানডন এ বিষয়ে তাঁর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, “আপনি যদি আমার মুখ, শরীর ও কণ্ঠস্বর নিতে পারেন এবং আমাকে এমন কিছু বলতে বা করতে বাধ্য করেন যার সম্পর্কে আমার কোনও ধারণা নেই বা এ নিয়ে আমার পছন্দ অপছন্দের কোনো মূল্য নেই, তবে কিন্তু কাজটি একদমই ভালো কিছু হলো না।” চিত্রনাট্যকাররাও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, বিভিন্ন স্টুডিও মানুষের বদলে গবেষণা, চিকিৎসা এবং স্ক্রিপ্ট লেখার মতো কাজে ওপেনএআইয়ের চ্যাটজিপিটির মতো এআই টুল ব্যবহার করে ব্যয় কমাতে ও সময় বাঁচাতে চাইতে পারে, যা তাদের কর্মসংস্থানকে প্রভাবিত করবে।
এদিকে, কিছু অভিনেতা আপাতদৃষ্টিতে এআই প্রযুক্তিকে গ্রহণ করলেও, বর্তমানে সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়া অভিনেত্রী স্কারলেট জোহানসন অনুমতি ছাড়া তাদের ভাবমূর্তি বা কণ্ঠস্বরের অপব্যবহারের বিষয়ে সতর্ক করেছেন।
সোমবারের এই ঘোষণার পাশাপাশি অ্যাকাডেমি আরও কিছু নিয়মে পরিবর্তন এনেছে। এর মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হলো, চূড়ান্ত রাউন্ডের ভোটে অংশ নিতে হলে অ্যাকাডেমি সদস্যদের এখন থেকে প্রতিটি বিভাগে মনোনীত সকল সিনেমা দেখতে হবে। তাদের এই ভোটই অস্কার পুরস্কার বিজয়ীদের চূড়ান্তভাবে বাছাই করবে।
সব মিলিয়ে, অ্যাকাডেমির নতুন নিয়ম প্রযুক্তির অগ্রগতিকে স্বাগত জানানোর ইঙ্গিত দিলেও, সিনেমায় মানুষের অপরিহার্য ভূমিকা এবং শিল্পী ও কর্মীদের অধিকার রক্ষার বিষয়টি নিয়েও আলোচনা জারি রাখছে।
সূত্র: বিবিসি