আসুস তাদের ল্যাপটপগুলোকে বিভিন্ন সিরিজে ভাগ করে বাজারজাত করে। এর মধ্যে তাদের জেনবুক সিরিজটি প্রিমিয়াম গ্রেডের ল্যাপটপের জন্য খুবই জনপ্রিয়। সাম্প্রতিক কালে তাদের হাই-এন্ড জেনবুকগুলোকে অনেকে ম্যাকবুক কিলার বলছেন। এর কারণ হলো, জেনবুক সিরিজের ল্যাপটপগুলোকে তারা এমনভাবে ডিজাইন করেছে যেন একটি পাওয়ারফুল মেইনস্ট্রিম ল্যাপটপ দিয়েই আপনি ট্যাবলেট বা হাইব্রিড নোটবুকের মত পোর্টেবিলিটি পান। এরকমই একটি ডিভাইস হলো আসুস জেনবুক ১৪ UX433 ল্যাপটপ।
ম্যাকবুকের উইন্ডোজ বিকল্প হিসেবে আসুসের জেনবুক সিরিজটি শিক্ষার্থী, শিক্ষক কিংবা কর্পোরেট জগতে ভালো সুনাম কুড়িয়েছে।
সম্প্রতি আসুস বাজারে তাদের জেনবুক সিরিজের লেটেস্ট ১৪ ইঞ্চি ল্যাপটপ Asus Zenbook 14 নামের UX433 মডেলের ল্যাপটপটি বাজারজাত শুরু করেছে। এই আর্টিকেলে ল্যাপটপটির সম্পূর্ণ একটি হ্যান্ডস-অন রিভিউ তুলে ধরবো যেন আপনারা খুব সহজেই বিবেচনা করতে পারেন ল্যাপটপটি আপনার কেনা উচিত কি না।
অঞ্চলভেদে UX433 মডেলটি বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন স্পেসিফিকেশনে এসেছে। এর বেইজ ভ্যারিয়েন্ট এর দাম শুরু হয়েছে ৮৬,০০০ টাকা থেকে। দেশজুড়ে পাওয়া যাচ্ছে আসুসের সব পার্টনার আউটলেটে। প্রথমেই চলুন এক নজরে দেখি এটা কী স্পেসিফিকেশন নিয়ে এসেছে।
আসুস জেনবুক ১৪ UX433 স্পেসিফিকেশন
- প্রসেসরঃ ইন্টেল ® কোর ™ i7-8565U/ i5-8265U
- ডিসপ্লেঃ ১৪ ইঞ্চি; ফুল এইচডি ১৯২০×১০৮০ পিক্সেল ন্যানোএজ ডিসপ্লে, ১৭৮° ওয়াইড ভিউ, ৭২% এনটিএসসি কাভারেজ
- গ্রাফিক্স কার্ডঃ ইন্টেল ® UHD Graphics 620 / এনভিডিয়া ® জিফোর্স ® MX150, ২ গিগাবাইট GDDR5
- মেমোরিঃ ৮ জিবি / ১৬ জিবি ২১৩৩ মেগাহার্টজ LPDDR3
- স্টোরেজঃ ১ টেরাবাইট PCIe ® 3.0 x4 এসএসডি / ৫১২ জিবি/২৫৬ জিবি PCIe ® 3.0 x2 এসএসডি
- ওয়্যারলেসঃ ডুয়াল ব্যান্ড 802.11ac গিগাবিট ওয়াইফাই, ব্লুটুথ ৫.০
- ক্যামেরাঃ থ্রিডি ইনফ্রারেড এইচডি সেন্সর
- পোর্টঃ ইউএসবি ৩.১ জেনারেশন ২ Type-C ™ (১টি), ইউএসবি ৩.১ জেনারেশন ১ Type-A (১টি), ইউএসবি ২.০ (১টি), এইচডিএমআই (১টি), মাইক্রো এসডি কার্ড রিডার (১টি), ৩.৫ মিমি কম্বো জ্যাক
- অডিওঃ হ্যারম্যান/কার্ডন স্টেরিও স্পিকার ও মাইক্রোফোন এরে
- ব্যাটারি ও পাওয়ারঃ ৫০Wh ৩ সেল লিথিয়াম পলিমার (১৪ ঘন্টা পর্যন্ত ব্যাকআপ), ৬৫W পাওয়ার এডাপ্টার
- আকারঃ ৩১.৯ সেমি x ১৯.৯ সেমি x ১.৫৯ সেমি
- ওজনঃ ১.০৯ কেজি
ডিজাইন ও বিল্ড কোয়ালিটি
ল্যাপটপটি হাতে নেয়ার পর আমার মনেই হচ্ছিল না এটি একটি মেইনস্ট্রিম ১৪ ইঞ্চি ল্যাপটপ। আগে না দেখে থাকলে লিড বন্ধ থাকা অবস্থায় আপনি একে ১২-১৩ ইঞ্চির একটি ছোট্ট হাইব্রিড উইন্ডোজ মেশিন ভেবে ভুল করবেন। আসলে এর কারণ হচ্ছে ডিভাইসটির প্রচণ্ড সরু বেজেল। অনেক কোম্পানি ল্যাপটপের ওজন কমানোর দিকে নজর দিলেও বেজেল নিয়ে খুব বেশি চিন্তা করতে দেখা যায় না। অনেকের মনে হয়তো আমার মতো প্রশ্ন ছিল যে স্মার্টফোন যদি সরু বেজেল থেকে শুরু করে একদম বেজেললেস হতে পারে তাহলে ল্যাপটপ কেন পারবে না? আসলে আসুস এই ল্যাপটপটিতে সেটিই করে দেখিয়েছে।
আসুস জেনবুক ১৪ UX433 ল্যাপটপের আইসিকল সিলভার ও রয়াল ব্লু নামক দুটি কালার ভ্যারিয়েশন এসেছে। আমার ইউনিটটি ছিল রয়্যাল ব্লু এবং এটার হিঞ্জ এর কাছে স্পিকার গ্রিল এর উপরে রোজ গোল্ড কালারের ট্রিম লাইন ছিল। দুটো কালারের কম্বিনেশনে এটাকে খুবই স্টাইলিশ ও এলিগেন্ট লাগে। আর দুটো কালার ভ্যারিয়েন্টই খুব স্ট্যান্ডার্ড যা ছেলে-মেয়ে এমনকি সব বয়সের মানুষের সাথেই ভালো মানাবে।
আসুসের সাম্প্রতিক মডেলগুলোতে ল্যাপটপের হিঞ্জ এর জন্য তারা নতুন একটি ডিজাইন উদ্ভাবন করেছে। আসুস এর নাম দিয়েছে “এর্গোলিফট” টেকনোলজি। এই ল্যাপটপটির হিঞ্জটিও নতুন এর্গোলিফট ডিজাইনে বানানো। যার ফলে আপনি ল্যাপটপটির লিড খুললে এটি ল্যাপটপটির কিবোর্ড সহ বেসটিকে প্রায় ৩ ডিগ্রি উপরে তুলে দেয়। এর ফলে বেসটি আর ভূমির সমান্তরালে থাকে না। আপনারা জানেন যে এক্সটারনাল কিবোর্ডগুলোর উপরের দিক ভূমি থেকে একটু উঁচু থাকে। এটাও অনেকটা সেরকম। আমার মতো যাদের ব্লগিং কিংবা বেশি বেশি টাইপ করতে হয় তাদের টাইপিংকে এই নতুন হিঞ্জ সিস্টেম আরো আরামদায়ক করবে।