জনপ্রিয় ভারতীয় গাড়ি প্রস্তুতকারক টাটা মোটরস তাদের বৈদ্যুতিক গাড়ির পোর্টফোলিওতে নতুন সংযোজন এনেছে – অত্যাধুনিক এসইউভি ‘টাটা হ্যারিয়ার ইভি’। আকর্ষণীয় ডিজাইন, উন্নত প্রযুক্তি এবং দীর্ঘ রেঞ্জের ক্ষমতা নিয়ে এই নতুন ইভি বাজারে আলোড়ন সৃষ্টি করতে চলেছে।
নিরাপত্তা ও প্রযুক্তির মেলবন্ধন: ৫৪০-ডিগ্রি সারাউন্ড ভিউ
টাটা হ্যারিয়ার ইভি-তে যুক্ত হয়েছে একটি ৫৪০-ডিগ্রি সারাউন্ড ক্যামেরা ভিউ, যা গাড়ির চালকদের জন্য নিরাপত্তা ও সুবিধার নতুন দিগন্ত খুলে দেবে। এই ক্যামেরা কোনো চাকা কার্বের খুব কাছাকাছি চলে এলে চালককে সতর্ক করতে সক্ষম, যা শহুরে ড্রাইভের জন্য অত্যন্ত কার্যকর।
বাহ্যিক ডিজাইন: চেনা ছকের নতুন রূপ
বাহ্যিক ডিজাইনের দিক থেকে হ্যারিয়ার ইভির স্টাইলিং ফেসলিফটেড হ্যারিয়ারের সঙ্গে অনেকটাই মিলে যায়। টাটা তাদের অন্যান্য ইভির সাথে সামঞ্জস্য রেখে এই মডেলটিকেও ডিজাইন করেছে। সামনের অংশে একটি নতুন ক্লোজড গ্রিল রাখা হয়েছে, যা এটিকে একটি আধুনিক ইভি লুক দিয়েছে।
পাশের দিকে, হ্যারিয়ার ইভিতে নতুন ১৯-ইঞ্চি অ্যারো-অপ্টিমাইজড অ্যালয় হুইল এবং সামনের দরজায় স্বতন্ত্র ‘ইভি’ ব্যাজিং রয়েছে। পিছনের দিকে ‘হ্যারিয়ার ইভি’ লেটারিং ছাড়া আর কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন নেই। আয়তনের দিক থেকে, এটি স্ট্যান্ডার্ড হ্যারিয়ারের চেয়ে ২ মিমি লম্বা, ২১০ মিমি চওড়া এবং ২২ মিমি উঁচু। তবে, এর হুইলবেস ২৭৪১ মিমি, অর্থাৎ একই রাখা হয়েছে।
অভ্যন্তরীণ বৈশিষ্ট্য ও উদ্ভাবনী প্রযুক্তি:
হ্যারিয়ার ইভির কেবিনও এর আইসিই-পাওয়ারড মডেল থেকে খুব বেশি ভিন্ন নয়, তবে কিছু উল্লেখযোগ্য সংযোজন একে আলাদা করেছে। ডুয়াল-টোন ড্যাশবোর্ডের উপরে রয়েছে বিশ্বের প্রথম স্যামসাং নিও কিউএলইডি (Neo QLED) ডিসপ্লে সহ ১৪.৫৩-ইঞ্চি ইনফোটেনমেন্ট স্ক্রিন, যা উন্নত মানের ছবি প্রদর্শন করবে। স্ক্রিনের ডানদিকে একটি ডিজিটাল ড্রাইভার ডিসপ্লে এবং এর ঠিক সামনে একটি ফোর-স্পোক স্টিয়ারিং হুইল রয়েছে, যার উপর একটি ইলিউমিনেটেড টাটা লোগো দেখা যাবে। গাড়ির বুট স্পেস ৫০২ লিটার, যা দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য যথেষ্ট।
অন্যান্য আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- টাচ-ভিত্তিক এইচভিএসি কন্ট্রোল প্যানেল
- রোটারি ড্রাইভ মোড সিলেক্টর
- ইলেকট্রনিক পার্কিং ব্রেক
- প্যানোরামিক সানরুফ
- অ্যাম্বিয়েন্ট লাইটিং
- ভেন্টিলেটেড এবং পাওয়ার্ড ফ্রন্ট সিট
- ডলবি অ্যাটমস ৫.১ সহ ১০ স্পিকার সাউন্ড সিস্টেম
- ভেহিকেল-টু-লোড (V2L) এবং ভেহিকেল-টু-ভেহিকেল (V2V) ফাংশনালিটি
- ইনফোটেনমেন্ট সিস্টেমের জন্য ওভার-দ্য-এয়ার (OTA) আপডেট
- কানেক্টেড কার টেকনোলজি
- চারটি ড্রাইভ মোড
- অল-ডিজিটাল ইনসাইড রিয়ারভিউ মিরর
- অটো পার্ক অ্যাসিস্ট
- সিক্স টেরেন মোড (Six Terrain Mode) এবং আরও অনেক কিছু।
পাওয়ার ও চার্জিং ক্ষমতা:
হ্যারিয়ার ইভির আরডব্লিউডি ৭৫ কিলোওয়াটআওয়ার (kWh) ভ্যারিয়েন্টটি একবার চার্জ দিলেই ৬২৭ কিলোমিটার পর্যন্ত চলতে পারে, যা ভারতীয় ইভি বাজারে একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন। চার্জিংয়ের ক্ষেত্রে, একটি ৭.২ কিলোওয়াট এসি চার্জার এই এসইউভিকে ১০.৭ ঘণ্টার মধ্যে ১০-১০০ শতাংশ রিচার্জ করতে পারে। অন্যদিকে, একটি ১২০ কিলোওয়াট ডিসি ফাস্ট চার্জার মাত্র ২৫ মিনিটের মধ্যে ব্যাটারিকে ২০-৮০ শতাংশ চার্জ করে দেবে, যা দ্রুত চার্জিংয়ের সুবিধা দেবে।
রঙ এবং দাম:
টাটা হ্যারিয়ার ইভি এম্পাওয়ার্ড অক্সাইড, নৈনিতাল নক্টার্ন, প্রিস্টিন হোয়াইট এবং পিওর গ্রে – এই চারটি আকর্ষণীয় রঙে উপলব্ধ। গাড়িটির বেস রিয়ার-হুইল ড্রাইভ ৬৫ কিলোওয়াট ভ্যারিয়েন্টটির দাম শুরু হচ্ছে ২১ লাখ ৪৯ হাজার রুপি (এক্স-শোরুম) থেকে। বাকি মডেল পোর্টফোলিওর দাম এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়নি।
টাটা হ্যারিয়ার ইভি ভারতের ইভি বাজারে নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে আশা করা হচ্ছে, বিশেষ করে যারা একটি শক্তিশালী, স্টাইলিশ এবং ফিচার-প্যাকড বৈদ্যুতিক এসইউভি খুঁজছেন।