এক সময়ের ইলেকট্রিক গাড়ির বাজারের অপ্রতিরোধ্য নেতা টেসলার ওপর আস্থা হারাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ। সাম্প্রতিক এক জরিপে উঠে এসেছে, মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্কের নেতৃত্বাধীন এই ব্র্যান্ডটি এখন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে কম বিশ্বস্ত ইলেকট্রিক গাড়ি নির্মাতা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। জনপ্রিয়তা এবং বিক্রিতে ব্যাপক পতনের মুখে পড়েছে টেসলা, যা কোম্পানিটির ইতিহাসে নজিরবিহীন বলে ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেন্ডেন্ট জানিয়েছে।

আস্থার সংকটে টেসলা:
‘ইলেকট্রিক ভেহিকল ইন্টেলিজেন্স’-এর জরিপ অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ টেসলার ওপর তাদের আগের বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের প্রায় অর্ধেকই বলেছেন যে তারা টেসলার ওপর ভরসা করেন না, এবং এক-তৃতীয়াংশের বেশি মানুষের টেসলা সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। বেশ কয়েকটি বড় দুর্ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য বড় ইলেকট্রিক গাড়ি কোম্পানির চেয়ে টেসলার গাড়িগুলোকে ‘সবচেয়ে কম নিরাপদ’ হিসেবে ধরা হচ্ছে।

মাস্কের রাজনৈতিক প্রভাব:
ইলন মাস্কের বিতর্কিত রাজনৈতিক ভূমিকা টেসলার ব্র্যান্ড খ্যাতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে বলে ইন্ডিপেন্ডেন্ট উল্লেখ করেছে। প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের শাসনামলে মাস্ক ‘ডিপার্টমেন্ট অফ গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি’ নামের একটি বিতর্কিত বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, যেখানে ফেডারেল কর্মী ও খরচ কমিয়ে আনার কাজটি তিনি করেছেন। মে মাসে মাস্ক ওই দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ালেও তার সঙ্গে ট্রাম্পের সম্পর্ক খারাপ হতে থাকে। তবে মাস্ক এখনও ইউরোপের কট্টর ডানপন্থী রাজনীতিবিদদের সমর্থন করে যাচ্ছেন এবং নতুন এক রাজনৈতিক দল ‘আমেরিকা পার্টি’ গড়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে থাকতে চান বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন।

‘ইলেকট্রিক ভেহিকল ইন্টেলিজেন্স’-এর রিপোর্ট বলছে, মনে করা হয়েছিল মাস্ক রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ালে ট্রাম্প সরকারের সময় টেসলার সুনাম যে ক্ষতি হয়েছে, তা ধীরে ধীরে কেটে যাবে। কিন্তু মাস্কের নতুন দল ঘোষণার পর টেসলার প্রতি মানুষের ইতিবাচক ধারণা এখনও ফেরেনি। জরিপে অংশগ্রহণকারী মাত্র এক চতুর্থাংশ মানুষ টেসলার প্রতি ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন।

বিক্রিতে রেকর্ড পতন:
মে মাসে ‘অ্যাক্সিওস হ্যারিস’ নামের এক আলাদা জরিপে উঠে এসেছে, ২০২২ সালে আমেরিকার বড়দের মধ্যে টেসলার ব্র্যান্ড সুনাম ‘খুব ভালো’ থাকলেও ২০২৫ সালে তা ‘খারাপ’ হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে টেসলা গাড়ি বিক্রি কমে যাওয়ার এটিই প্রধান কারণ। টেসলার সর্বশেষ আয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে টেসলার গাড়ির বিক্রি ১৪ শতাংশ কমে গেছে, যা টেসলার ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ পতন। এর ফলে টেসলা তাদের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী চীনা কোম্পানি বিওয়াইডি’র থেকেও পিছিয়ে পড়েছে।

কিছু বাজার বিশ্লেষক বলেছেন, টেসলার বিক্রি এবারও ভালো হবে না। ‘চেকপয়েন্ট রিসার্চ’-এর পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৫ সালে টেসলার বিক্রি আগের বছরের চেয়ে ১০ শতাংশ কমে যেতে পারে। গোটা বিশ্বে যেখানে ইলেকট্রিক গাড়ির চাহিদা ও বিক্রি বেড়েই চলেছে (ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি’র তথ্য অনুসারে, ইঞ্জিনে জ্বালানি না পোড়ানো এমন গাড়ির চাহিদা এখন রেকর্ড পরিমাণে বেড়েছে), সেখানে টেসলার বিক্রি কমে যাওয়া খুবই বিপরীত এক অবস্থা বলে ইন্ডিপেন্ডেন্ট প্রতিবেদনে লিখেছে। মাস্কের নেতৃত্বাধীন এই কোম্পানির ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চয়তার মুখে।