
বৈদ্যুতিক গাড়ির জগতে এক নতুন বিপ্লবের সূচনা হতে চলেছে! মাত্র ১৮ সেকেন্ডে পুরোপুরি চার্জ হওয়ার ক্ষমতাসম্পন্ন এক অত্যাধুনিক ইভি ব্যাটারি, যার নাম ‘ভারইভোল্ট’, এবার বাণিজ্যিক উৎপাদনের জন্য সবুজ সংকেত পেয়েছে ব্রিটিশ কোম্পানি আরএমএল গ্রুপ। গত ২রা জুন যুক্তরাজ্যের সরকারিভাবে ‘কনফরমিটি অব প্রোডাকশন’ (CoP) সনদ লাভ করার ফলে, আরএমএল এখন বৃহৎ পরিসরে এই ব্যাটারি উৎপাদন করতে এবং বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন ইভি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের কাছে সরবরাহ করতে পারবে।
আরএমএলের পাওয়ারট্রেইন বিভাগের প্রধান জেমস আর্কেল এক বিবৃতিতে এই অর্জনকে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, “এই সনদ প্রমাণ করে যে, আমরা শুধুমাত্র প্রোটোটাইপ এবং সীমিত উৎপাদনের পর্যায় থেকে বেরিয়ে এসে বড় আকারে উৎপাদনের জন্য সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত।”
গতি এবং ক্ষমতা: এক নতুন মানদণ্ড
ভ্যারইভোল্ট ব্যাটারিটি তার উচ্চ ক্ষমতা এবং চার্জিং গতির জন্য অতুলনীয়। এটি প্রতি কেজিতে ৬ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারে, যা প্রচলিত ব্যাটারির তুলনায় অনেক বেশি। আরএমএল বোর্ডের সদস্য মাইকেল ম্যালক ব্যাটারির এই ব্যতিক্রমী ক্ষমতা প্রসঙ্গে বলেন, “এই ব্যাটারি প্রচণ্ড দ্রুততার সঙ্গে এর সমস্ত শক্তি সরবরাহ করতে পারে।”
এই ব্যাটারির ‘সি রেটিং’ ২০০—যা অভাবনীয়। এর মানে হলো, এটি মাত্র ১৮ সেকেন্ডেই সম্পূর্ণ চার্জ বা ডিসচার্জ হতে সক্ষম। তুলনা করলে, বাজারে বিদ্যমান শক্তিশালী বৈদ্যুতিক গাড়ি পোরশে টাইকানের ব্যাটারির ‘সি রেটিং’ ৪ থেকে ৫-এর মধ্যে, যার ফলে সম্পূর্ণ চার্জ বা ডিসচার্জ হতে প্রায় ১২ থেকে ১৫ মিনিট সময় লাগে। ভ্যারইভোল্ট-এর এই দ্রুত চার্জিং সক্ষমতা বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যবহারিক অভিজ্ঞতায় এক আমূল পরিবর্তন আনবে বলে মনে করা হচ্ছে।
বহুমুখী ব্যবহার এবং ভবিষ্যতের পরিকল্পনা:
আরএমএল গ্রুপের সিইও পল ডিকিনসন জানিয়েছেন, ভ্যারইভোল্ট ব্যাটারিটির নকশা মডুলার হওয়ায় এটি বিভিন্ন ধরনের গাড়ির জন্য সহজেই কাস্টমাইজ করা সম্ভব। বর্তমানে কিছু ক্ষুদ্র পরিসরের গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান, যেমন যুক্তরাষ্ট্রের ‘সিঙ্গার ২১ সি’ হাইব্রিড হাইপার কার, এই অত্যাধুনিক ব্যাটারি ব্যবহার করছে। এই হাইপার কারটি পেট্রোল ইঞ্জিনের পাশাপাশি ভ্যারইভোল্ট ব্যাটারিতে সংরক্ষিত বিদ্যুৎ দিয়ে চলে।
আরএমএল গ্রুপ বর্তমানে সীমিত পরিমাণে ব্যাটারিটি তৈরি করলেও, ভবিষ্যতে এটি বড় পরিসরে উৎপাদন করার পরিকল্পনা রয়েছে। শুধু বিলাসবহুল হাইপার কারের জন্যই নয়, প্রতিষ্ঠানটি সাধারণ ইভিতেও এই ব্যাটারিকে ব্যবহারোপযোগী করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে।
এছাড়াও, আরএমএল গ্রুপ পুরনো মডেলের জনপ্রিয় হাইপার কার—যেমন লাফারারি বা ম্যাকল্যারেন পি১-এর ব্যাটারি আপগ্রেড করার জন্য একটি কিট তৈরির কাজও করছে। ম্যালক এই বিষয়ে বলেন, “এই গাড়িগুলোর জন্য আমরা একটি রিপ্লেসমেন্ট প্যাক দিতে পারি, যা রেঞ্জ (এক চার্জে গাড়ির চলার দূরত্ব) অনেক বাড়িয়ে দেবে। গাড়ির অন্যান্য হার্ডওয়্যার যদি সমর্থন করে, তাহলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতাও আট গুণ পর্যন্ত বাড়ানো যাবে।”
ভ্যারইভোল্ট ব্যাটারির বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরুর এই ঘোষণা ইভি শিল্পের জন্য এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে বলে মনে করা হচ্ছে। এটি কেবল চার্জিংয়ের সময় কমাবে না, বরং বৈদ্যুতিক গাড়ির কর্মক্ষমতা এবং ব্যবহারিক দিককেও বহুগুণ বাড়িয়ে দেবে।
তথ্যসূত্র: লাইভ সায়েন্স