
বর্ষা বাইকারদের জন্য এক চ্যালেঞ্জিং সময়। রাস্তা পিচ্ছিল হয়ে যায়, চারপাশে কাদা জমে এবং সবচেয়ে বড় কথা বৃষ্টির জল বাইকের গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশে পড়ে সমস্যা তৈরি করতে পারে। ইঞ্জিনে জল ঢোকা, মরিচা পড়া, ব্রেকিং সিস্টেমে সমস্যা বা ইলেকট্রিক সংযোগ নষ্ট হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা বর্ষায় খুব সাধারণ। তাই বর্ষাকালে বাইক ভালো রাখতে এবং নিরাপদে রাইডিং করতে হলে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে খেয়াল রাখা অত্যন্ত জরুরি। সঠিক যত্ন নিলে তা আপনার বাইকের আয়ু বাড়াবে এবং অপ্রত্যাশিত বিপত্তি এড়াতে সাহায্য করবে।
আসুন জেনে নেওয়া যাক বৃষ্টিতে বাইক চালানোর সময় বাইকের যন্ত্রাংশ ভালো রাখতে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যেসব বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে:
১. চেইন ও চেইনস্প্রকেটের যত্ন:
বৃষ্টির জলে বাইকের চেইনে জল ঢুকে গিয়ে খুব সহজেই জং ধরতে পারে, যা চেইনের কার্যকারিতা নষ্ট করে এবং আয়ু কমিয়ে দেয়। প্রতিবার বৃষ্টিতে বাইক চালানোর পর চেইন ভালোভাবে পরিষ্কার করে শুকিয়ে ফেলুন। নিয়মিত ভালো মানের চেইন লুব্রিকেটর ব্যবহার করুন। প্রতি ৫০০-৭০০ কিলোমিটার পর পর চেইন ভালোভাবে পরিষ্কার ও গ্রিজিং করা অত্যন্ত জরুরি।
২. ব্রেক সিস্টেম পরীক্ষা করুন:
বৃষ্টির কারণে ব্রেক প্যাড ও ডিস্ক ভিজে যেতে পারে, যার ফলে ব্রেকিং পারফরম্যান্স উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায় এবং পিচ্ছিল রাস্তায় ব্রেক কষতে সমস্যা হতে পারে, যা দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ে। ব্রেক প্যাড ভেজা থাকলে তা ভালোভাবে শুকিয়ে নিন। নিয়মিত ব্রেক সিস্টেম চেক করুন যাতে কাদা বা জল জমে না থাকে। ব্রেক ফ্লুইড লেভেল ঠিক আছে কি না তা পরীক্ষা করে নেওয়াও জরুরি।
৩. ইলেকট্রিক সংযোগ ও ব্যাটারির যত্ন:
বৃষ্টির জল ঢুকে বাইকের ইলেকট্রিক সংযোগে শর্ট সার্কিট হতে পারে বা ব্যাটারিতে সমস্যা তৈরি হতে পারে। এর ফলে বাইক স্টার্ট নিতে সমস্যা হতে পারে বা অপ্রত্যাশিতভাবে মাঝ রাস্তায় বন্ধ হয়ে যেতে পারে। বাইকের ইলেকট্রিক কানেকশনগুলো ভালো মানের টেপ বা সিলিকন দিয়ে সিল করুন যেন কোনওভাবেই জল ঢুকতে না পারে। ব্যাটারির টার্মিনালে গ্রিজ বা ভ্যাসলিন ব্যবহার করুন। দিনের শেষে বাইক পরিষ্কার করার সময় ব্যাটারির কানেকশনগুলো পরীক্ষা করুন।
৪. এয়ার ফিল্টার ও এক্সস্ট সিস্টেম সুরক্ষা:
বৃষ্টির সময় জল ঢুকে গেলে বাইকের এয়ার ফিল্টার নষ্ট হতে পারে এবং এর ফলে ইঞ্জিনে গুরুতর সমস্যা তৈরি হতে পারে। এয়ার ইনটেকে জল না ঢোকার জন্য ওয়াটারপ্রুফ কভার ব্যবহার করুন। এক্সস্ট পাইপের মুখে জল ঢুকে গেলে ইঞ্জিনের ক্ষতি হতে পারে। বাইক পার্ক করার সময় এক্সস্ট পাইপ ঢেকে রাখুন বা চালানোর পর মাফলার নিচে জল জমেছে কি না তা চেক করুন।
৫. টায়ারের অবস্থা ভালো রাখুন:
বর্ষার পিচ্ছিল রাস্তায় ভালো গ্রিপ না থাকলে খুব সহজেই স্কিড করে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। টায়ারের ভালো গ্রিপ বা পর্যাপ্ত ট্রেড বা খাঁজ আছে কিনা নিয়মিত পরীক্ষা করুন। টায়ারের সঠিক এয়ার প্রেসার বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। অতিরিক্ত পুরোনো বা মসৃণ হয়ে যাওয়া টায়ার হলে ঝুঁকি না নিয়ে দ্রুত পরিবর্তন করুন।
৬. ওয়াশিং ও ওয়াক্সিং:
বৃষ্টির কাদা ও জল বাইকের রঙ ও ফিনিশিং দ্রুত নষ্ট করে দেয়। জং পড়ার সম্ভাবনাও বাড়ে। বাইক নিয়মিত ধুয়ে কাদা ও ময়লা পরিষ্কার রাখুন। বাইকে ভালো মানের ওয়াক্সিং করে রাখলে জলের স্তর জমে না এবং জং পড়া থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
৭. রেইন কভার ব্যবহার করুন:
বাইক পার্ক করার সময় অবশ্যই রেইন কভার ব্যবহার করুন। এতে বাইকের ইলেকট্রনিক বা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অংশ বৃষ্টিতে সরাসরি ভেজা থেকে রক্ষা পাবে। দীর্ঘক্ষণ বৃষ্টিতে ভেজা বাইকের যন্ত্রাংশ দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়।
বর্ষার সময় বাইকের সঠিক যত্ন নিলে তা শুধু আপনার বাইকের আয়ু বাড়াবে না, বরং আপনাকে নিরাপদে রাইডিং করতেও সাহায্য করবে এবং অপ্রত্যাশিত খরচ থেকে বাঁচাবে। তাই বাইকারদের বর্ষায় এই বিষয়গুলো অবশ্যই খেয়াল রাখা উচিত।