
একটি চার চাকার গাড়িকে আমরা মূলত দুটি বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে সংজ্ঞায়িত করে থাকি – সেটি কী জ্বালানিতে চলে এবং তার চালক কি মানুষ? এই দুটি বৈশিষ্ট্যই বর্তমানে দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে, যা গাড়ির ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত উত্তেজনাপূর্ণ সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে।
বিদ্যুৎ চালিত গাড়ির যুগ:
গত শতাব্দীর তুলনায় বর্তমান সময়ে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হলো জ্বালানি হিসেবে বিদ্যুতের বিপুল ব্যবহার বৃদ্ধি। পেট্রোল এবং ডিজেল চালিত গাড়ির পরিবর্তে বৈদ্যুতিক গাড়ি (EV) বিশ্বজুড়ে দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করছে। বিশ্বব্যাপী ইভি প্রস্তুতকারকের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে; শুধুমাত্র চীনেই ১০০ টিরও বেশি কোম্পানি এই ক্ষেত্রে কাজ করছে। টেসলা (Tesla), জেনারেল মোটরস (General Motors), ভল্কসওয়াগন (Volkswagen), মার্সিডিজ (Mercedes)-এর মতো ঐতিহ্যবাহী অটোমোবাইল জায়ান্টরাও এই আধুনিক প্রবণতার সাথে তাল মিলিয়ে নিজেদের প্রস্তুত করছে।
ইভিগুলির বেশ কিছু সুস্পষ্ট সুবিধা রয়েছে। প্রথমত, এগুলি পরিবেশবান্ধব, কারণ চালানোর সময় এগুলো কোনো ক্ষতিকারক ধোঁয়া বা নির্গমন তৈরি করে না। দ্বিতীয়ত, এগুলি চালানো তুলনামূলকভাবে সস্তা, কারণ বিদ্যুৎ সাধারণত পেট্রোল বা ডিজেলের চেয়ে কম দামে পাওয়া যায়।
তবে ইভিগুলির কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো ব্যাটারির ‘রেঞ্জ’ বা একবার চার্জে কতটা দূরত্ব যাওয়া যায় সেই সীমাবদ্ধতা। বর্তমানে অনেক ইভি পেট্রোল বা ডিজেল গাড়ির তুলনায় একবার চার্জে কম দূরত্ব যেতে পারে। কিন্তু ব্যাটারি প্রযুক্তি খুব দ্রুত উন্নত হচ্ছে এবং এই সমস্যা সমাধানের পথেই রয়েছে।
স্বায়ত্তশাসিত বা চালকবিহীন গাড়ির উত্থান:
চার চাকার গাড়ির ক্ষেত্রে আরেকটি বড় পরিবর্তন হলো স্বায়ত্তশাসিত (Autonomous) ড্রাইভিং প্রযুক্তির বিকাশ। স্বায়ত্তশাসিত গাড়িগুলো মানুষের কোনো হস্তক্ষেপ ছাড়াই নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করতে এবং রাস্তা চিনে গন্তব্যে পৌঁছাতে সক্ষম।
এই প্রযুক্তি এখনও তার প্রাথমিক পর্যায়ে থাকলেও এটি দ্রুত গতিতে উন্নতি করছে। অনেক কোম্পানি ইতিমধ্যেই স্বায়ত্তশাসিত গাড়ির পরীক্ষামূলক মডেল (প্রোটোটাইপ) তৈরি করেছে এবং কিছু গাড়ি সীমিত আকারে বাজারেও এসেছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, স্বায়ত্তশাসিত গাড়িগুলোর পরিবহন ব্যবস্থাকে আমূল পরিবর্তন করার বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। এগুলি আরও নিরাপদ (মানুষের ভুলের কারণে দুর্ঘটনা কমবে), আরও দক্ষ (জ্বালানির সঠিক ব্যবহার এবং ট্র্যাফিক ব্যবস্থাপনায় উন্নতি), এবং আরও সুবিধাজনক হতে পারে (যাত্রার সময় অন্য কাজ করা সম্ভব)।
ভবিষ্যতের পথ:
সব মিলিয়ে চার চাকার গাড়ির ভবিষ্যৎ অত্যন্ত উজ্জ্বল দেখাচ্ছে। বিদ্যুৎ চালিত প্রযুক্তি এবং স্বায়ত্তশাসিত ড্রাইভিংয়ের বিকাশ গাড়িগুলোকে আরও পরিবেশবান্ধব, জ্বালানি সাশ্রয়ী এবং নিরাপদ করে তুলছে। এই প্রযুক্তিগুলো আমাদের পরিবহন ব্যবস্থা এবং আমাদের চারপাশের জগতকে মৌলিকভাবে পরিবর্তন করার ক্ষমতা রাখে, যা ভবিষ্যতের পথচলাকে আরও সুগম করে তুলবে।