
বাইক শুধু একটি বাহন নয়, এটি অনেকের কাছে প্রিয় সঙ্গী, কর্মজীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ, আবার কারো কারো কাছে নিজস্ব স্টাইল স্টেটমেন্ট। অথচ, প্রতিদিন বাইক চালালেও আমরা অনেকেই এর যত্নে কিছু সাধারণ ভুল করে থাকি। এই ছোট ছোট ভুলগুলোই একসময় বড় সমস্যার জন্ম দেয়—বাইকের পারফরম্যান্স কমে যায়, মেরামতের খরচ বাড়ে, এমনকি দুর্ঘটনার ঝুঁকিও বেড়ে যায়।
আপনার প্রিয় বাইকটির দীর্ঘায়ু এবং মসৃণ পারফরম্যান্স নিশ্চিত করতে সচেতন হওয়াটাই সবচেয়ে জরুরি। এই সাধারণ ভুলগুলো এড়িয়ে চলতে পারলে আপনার বাইক যেমন দীর্ঘমেয়াদে ভালো সার্ভিস দেবে, তেমনি আপনার বিশ্বস্ত সঙ্গী হয়ে থাকবে।
আসুন জেনে নেওয়া যাক বাইকের যত্নে সবচেয়ে বেশি করা আটটি সাধারণ ভুল এবং সেগুলো এড়ানোর উপায়:
১. ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তনে অবহেলা: ভুল: অনেকেই মাসের পর মাস ইঞ্জিন অয়েল না বদলে বাইক চালান। এতে ইঞ্জিনের ঘর্ষণ বেড়ে যায়, তাপমাত্রা বাড়ে এবং দীর্ঘমেয়াদে ইঞ্জিনের অপূরণীয় ক্ষতি হয়। সমাধান: প্রতি ১,০০০-২,০০০ কিলোমিটার পর (অথবা কোম্পানির নির্দেশনা অনুযায়ী) ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করুন। এটি ইঞ্জিনের আয়ু বাড়াবে।
২. চেইন পরিষ্কার ও লুব্রিকেট না করা: ভুল: চেইন ময়লা থাকলে বাইকের মাইলেজ ও পারফরম্যান্স কমে যায়। আবার অনেকে চেইন খুব বেশি টাইট করে দেন, যা গিয়ারবক্সে অতিরিক্ত চাপ ফেলে। সমাধান: প্রতি ৫০০-৭০০ কিলোমিটার পর চেইন পরিষ্কার ও লুব্রিকেট করুন। চেইনের টান সবসময় মাঝারি হওয়া উচিত, খুব বেশি টাইট বা ঢিলে নয়।
৩. ব্রেক প্যাড বা শু পরিবর্তনে দেরি: ভুল: ব্রেকে অদ্ভুত শব্দ শোনার পরও অনেকেই ভাবেন ‘আপাতত চলছে’। কিন্তু এই দেরি মারাত্মক বিপজ্জনক হতে পারে, বিশেষ করে জরুরি ব্রেকিং-এর সময়। সমাধান: ব্রেক প্যাড বা ব্রেক শু ৫,০০০-১০,০০০ কিলোমিটার পর পর চেক করুন। কোনো অস্বাভাবিক শব্দ বা কার্যকারিতায় সমস্যা হলে সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন করুন।
৪. টায়ার প্রেসার ঠিকমতো না দেখা: ভুল: টায়ারে অতিরিক্ত বা কম প্রেসার থাকলে মাইলেজ কমে যায়, টায়ার দ্রুত ঘষে যায় এবং রাইডিং কমফোর্টও নষ্ট হয়, পাশাপাশি দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ে। সমাধান: প্রতি সপ্তাহে একবার টায়ার প্রেসার চেক করুন এবং বাইকের ম্যানুয়ালে উল্লেখিত কোম্পানির গাইডলাইন অনুযায়ী প্রেসার বজায় রাখুন।
৫. বৃষ্টির দিনে বাইক শুকিয়ে না রাখা: ভুল: বৃষ্টিতে বাইক চালিয়ে বাড়ি এসে ভেজা বা কাদা অবস্থায় অনেকেই বাইকটি ফেলে রাখেন। বৃষ্টির জল বা কাদা বাইকে লেগে থাকলে ধীরে ধীরে মরিচা পড়ে যায় এবং পার্টস ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সমাধান: বৃষ্টির পর বাইকটি ভালোভাবে শুকিয়ে ফেলুন, প্রয়োজনে জল মুছে নিন এবং চেইনে লুব্রিকেন্ট দিন। এতে মরিচা পড়া আটকাবে।
৬. লোকাল বা নিম্নমানের পার্টস ব্যবহার: ভুল: অনেকে টাকা বাঁচাতে গিয়ে কমদামি বা নিম্নমানের পার্টস ব্যবহার করেন। দেখতে অরিজিনালের মতো মনে হলেও এগুলোর মান খারাপ হয় এবং ইঞ্জিন বা অন্যান্য যন্ত্রাংশের গুরুতর ক্ষতি করতে পারে। সমাধান: যতটা সম্ভব ব্র্যান্ডেড বা অরিজিনাল স্পেয়ার পার্টস ব্যবহার করুন। দীর্ঘমেয়াদে এটি বাইকের স্বাস্থ্য ও আপনার পকেটের জন্য ভালো।
৭. দীর্ঘদিন বাইক না চালিয়ে স্টোরেজে রেখে দেওয়া: ভুল: বাইক মাসের পর মাস না চালালে ব্যাটারি ডিসচার্জ হয়ে যায়, ট্যাঙ্ক খালি না রাখলে ফুয়েলে সমস্যা হতে পারে। সমাধান: দীর্ঘদিন বাইক ব্যবহার না করলে ব্যাটারি খুলে রাখুন। ফুয়েল ট্যাঙ্ক খালি করুন বা ফুয়েল স্ট্যাবিলাইজার ব্যবহার করুন যাতে ফুয়েল নষ্ট না হয়।
৮. সময়মতো সার্ভিসিং না করা: ভুল: অনেকেই বাইকে সমস্যা দেখা দিলে তবেই গ্যারেজে যান। অথচ নিয়মিত সার্ভিসিং করলে অনেক ছোট সমস্যা বড় আকার ধারণ করার আগেই ধরা পড়ে যায়। সমাধান: অন্তত ২-৩ মাস পর পর একবার বাইকের সার্ভিসিং করান, বিশেষ করে যদি আপনি প্রতিদিন বাইক ব্যবহার করেন। এটি আপনার বাইকের পারফরম্যান্স ভালো রাখবে এবং অপ্রত্যাশিত খরচ কমাবে।
এই সহজ টিপসগুলো মেনে চললে আপনার বাইকও আপনার প্রতি বিশ্বস্ত সঙ্গী হয়ে থাকবে, দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে প্রস্তুত!