বিশ্বে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বৈদ্যুতিক গাড়ি। জ্বালানি তেলের দাম এবার যতই বাড়ুক চিন্তার কিছু নেই। একবার চার্জ দিলে যেতে পারবেন মাইলের পর মাইল। একেক গাড়ির জন্য একেক রকম সুবিধা। বিশ্বের বড় বড় গাড়িনির্মাতা সংস্থা একের পর এক ই-কার আনছে বাজারে।
সেসব সংস্থার সঙ্গে টেক্কা দিতে ৬৭ বছরের এক বৃদ্ধ নিজের ঘরেই তৈরি করলেন ই-কার। বিভিন্ন নামিদামি সংস্থার ই-কার কেনার সামর্থ নেই তাতে কী। নিজেই নিজের জন্য তৈরি করলেন বৈদ্যুতিক গাড়ি। যা একবার চার্জ দিলে চলবে ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত। এতে খরচ হবে মাত্র ৫ টাকা।
কেরালার কোল্লাম জেলার বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব অ্যান্টনি জন। নিজের জন্য একটি বৈদ্যুতিক গাড়ি কেনার কথা ভাবছিলেন। তিনি পেশায় একজন ক্যারিয়ার কনসালটেন্ট। তার বাড়ি থেকে অফিসের দূরত্ব প্রায় ৩০ কিলোমিটার। প্রতিদিন এত পথ যাতায়াতের জন্য তিনি ব্যবহার করতেন একটি ইলেকট্রিক স্কুটার।
তবে একদিকে বয়স বাড়ছে, অন্যদিকে ঝড়-বৃষ্টির সময় এতটা পথ স্কুটার নিয়ে যাতায়াত করা বেশ ঝামেলার ব্যাপার। এ জন্যই নিজের জন্য এমন একটি গাড়ি চেয়েছিলেন, যা তাকে রোদ-বৃষ্টি-ঝড় থেকে বাঁচাতে পারে। মনস্থির করেন বৈদ্যুতিক গাড়ি কিনবেন। তবে বাজারে ইলেকট্রিক চার চাকার আকাশছোঁয়া দাম দেখে কিছুটা ভাটা পড়ে সেই ভাবনায়।
তখন অ্যান্টনি জনের মাথায় নতুন কিছু তৈরি করার ভাবনা জাগে। ২০১৮ সালে ইলেকট্রিক গাড়ি তৈরির কথা চিন্তা করতে থাকেন। শুরু করেন এ নিয়ে গবেষণা। কীভাবে ডিজাইন করা যায় এবং তার থেকেও বড় কথা হলো, গাড়িটির ইলেকট্রিক পার্টসের বাস্তবায়ন কীভাবে সম্ভব করা যায়।
গাড়ির বডি তৈরির জন্য যোগাযোগ করেন একটি গ্যারেজের সঙ্গে। যারা নিয়মিত বাসের বডি তৈরি করে থাকেন। অনলাইনে খুঁজে পাওয়ার পর অ্যান্টনি তার ইলেকট্রিক গাড়ির বডির ডিজাইনটি তুলে দেন গ্যারেজের লোকদের কাছে। তার ডিজাইন অনুযায়ী গাড়িটির বডিও তৈরি করে ফেলেন ওই গ্যারেজের কর্মীরা।
খুব ছোট্ট একটা গাড়ি তৈরি হয়, যেখানে দু’জন প্রাপ্তবয়স্কই বসতে পারেন। গাড়িটির পেছনেও একটি সিট আছে, তাতে কেবল একটি বাচ্চা বসতে পারে বা কোনো জিনিসপত্র রাখা যেতে পারে। অ্যান্টনি জানিয়েছেন, গাড়ির বডি গ্যারেজ তৈরি করলেও ইলেকট্রিক পার্ট সম্পূর্ণভাবে তারই হাতে তৈরি।
দিল্লির একটি ভেন্ডরের কাছ থেকে ব্যাটারি, মোটর এবং ওয়্যারিংয়ের জিনিসপত্র জোগাড় করেন অ্যান্টনি জন। তা দিয়েই ২০১৮ সালেই গাড়িটির কাজ শুরু করে দেন। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে তা পিছিয়ে যায়। যেহেতু অ্যান্টনি আগে কখনো ইলেকট্রিক গাড়ি তৈরি করেননি, তাই বারবার ভুলও হচ্ছিল। ত্রুটি দেখা গিয়েছিল তার তৈরি গাড়িতে।
ব্যাটারির ক্ষমতা সম্পর্কে ভুল হিসাব করেছিলেন তিনি, যে কারণে গাড়িটি তার প্রত্যাশা মতো ড্রাইভিং রেঞ্জ দিচ্ছিল না। তবে লকডাউন উঠে যাওয়ার পর তিনি চলে যান দিল্লিতে। সেখান থেকে ওই ভেন্ডরের কাছে আরও বড় ক্যাপাসিটির ব্যাটারি নিয়ে আসেন।
এরপর গাড়িতে নতুন ব্যাটারি লাগানোর পরে অ্যান্টনি লক্ষ্য করেন, তার হাতে তৈরি ইলেকট্রিক গাড়িটি সর্বাধিক ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত রেঞ্জ দিতে পারছে। অর্থাৎ একবার চার্জ দিলে তা ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত যেতে পারছে। তাতে তার কাজও হয়ে যাচ্ছিল। কারণ বাড়ি থেকে অফিস এবং অফিস থেকে বাড়ি আসতে তাকে ৬০ কিলোমিটার যাতায়াত করতে হতো। একবার বাড়িতে সম্পূর্ণরূপে গাড়িটি চার্জ করতে তার খরচ হয় মাত্র ৫ টাকা।
রোজ অফিসে যাওয়ার কাজ মাত্র ৫ টাকার ইলেকট্রিক বিল খরচ করেই হয়ে যাচ্ছিল অ্যান্টনি জনের। নিজের এ আবিষ্কার নিয়ে গর্বিত তিনি। এ ইলেকট্রিক গাড়িটি কেবল অ্যান্টনিই ব্যবহার করেন।
গাড়িটির এক্সটিরিয়র ডিজাইন খুব সাধারণ। ইন্টিরিয়রে রয়েছে বেঞ্চ সিট, স্টিয়ারিং, অ্যাক্সিলারেটর এবং একটি ব্রেক প্যাডেল। গাড়িটি খুবই ছোট, যে কোনো রাস্তায় যেতে পারে। এমন রাস্তায়ও এ গাড়ি যেতে পারে, যেখানে সাধারণ গাড়ি ঢুকতেও পারবে না। পুরো প্রজেক্টটি তৈরি করতে অ্যান্টনির খরচ হয়েছে সাড়ে চার লাখ টাকা।
এ মুহূর্তে তিনি আরও একটি ইলেকট্রিক গাড়ি তৈরির কাজে হাত দিয়েছেন। অ্যান্টনির তৈরি এ বৈদ্যুতিক গাড়িটির সবচেয়ে ভালো দিক হচ্ছে এর পাওয়ার রেটিং খুবই কম। গাড়িটির সর্বাধিক স্পিড ২৫ কিলোমিটারেরও কম। আর এ ধরনের গাড়ির ক্ষেত্রে কোনো রেজিস্ট্রেশন প্লেটও লাগে না।
সূত্র: লাইভমিন্ট