কখনো তিনি ‘পঞ্চায়েত’-এর সচিবজি, কখনো আবার ‘কোটা ফ্যাক্টরি’র জিতু ভাইয়া। দর্শকের কাছে দুই ভূমিকাতেই তার আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা। ভারতীয় ওয়েব সিরিজে নতুন মাত্রা যোগ করেছে এই দুটি সিরিজ। আর দুটি সিরিজেই কেন্দ্রীয় চরিত্রে আছেন তিনি।
নাম তার জিতেন্দ্র কুমার। অনেকে এখন তাকে ওয়েব দুনিয়ার কিং বা রাজা হিসেবে অভিহিত করেন। কেননা একের পর এক প্রশংসিত এবং জনপ্রিয় ওয়েব কনটেন্ট উপহার দিয়েছেন তিনি।
জানা যায়, রাজস্থানের এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জিতেন্দ্রর জন্ম। ছোটবেলা থেকেই ভীষণ মেধাবী তিনি। ভারতের কোটি কোটি ছাত্র যেই প্রতিষ্ঠানে পড়তে মরিয়া, সেই আইআইটি-তে পড়েছেন জিতু। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়ার পরও তিনি নিরাপদ চাকরি খুঁজে নেননি। বরং অভিনেতা হওয়ার স্বপ্নের পেছনে ছুটেছেন। অদম্য চেষ্টায় পেয়েছেন কাঙ্ক্ষিত সাফল্যও।
পড়াশোনার পাশাপাশি মিমিক্রি করতেন জিতেন্দ্র। দেখতেও সুদর্শন। ফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্ধুদের কাছে চমৎকার পরিচিতি তৈরি হয়। আইআইটিতে পড়াকালীন বিশ্বপতি সরকার নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে পরিচয় হয় তার। যিনি ইউটিউব চ্যানেল ‘দ্য ভাইরাল ফিভার’ বা টিভিএফ-এর ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর।
মূলত এই বিশ্বপতি ও টিভিএফ-এর সুবাদেই প্রতিভা প্রকাশের সুযোগ পেয়েছেন জিতেন্দ্র। ইঞ্জিনিয়ারিং শেষে বন্ধুরা যখন ভালো ভালো চাকরি নিচ্ছিল, জিতেন্দ্র তখন পা রাখল অভিনেতা হওয়ার অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে। টিভিএফের প্রথম দিকের কয়েকটি প্রজেক্ট যেমন ‘পারমানেন্ট রুমমেটস’, ‘ব্যাচেলরস’-এ কাজ করে প্রতিভার জানান দেন জিতেন্দ্র। ধীরে ধীরে তার পরিচিতি বাড়তে থাকে। এরপর ‘টিভিএফ পিচারস’ নামের ওয়েব সিরিজে কাজ করে দারুণ জনপ্রিয়তা লাভ করেন তিনি।
প্রথম দিকে স্বাভাবিকভাবেই ভালো সুযোগ কিংবা প্রতিক্রিয়া পাননি জিতেন্দ্র। যার কারণে কিছুটা হতাশ হয়ে মুম্বাই ছেড়ে বেঙ্গালুরুতে চলে যান তিনি। সেখানে একটি কনস্ট্রাকশন কোম্পানিতে যোগ দেন। কিছুদিন চাকরি করার পর উপলব্ধি করলেন, তার ভেতরে আসলে একজন অভিনেতাই বাস করছে। সেজন্য পুনরায় আবার টিভিএফে ফিরে আসেন এবং অভিনয়ে নিয়মিত হন।
২০১৯ সালে জিতেন্দ্র কুমারের ক্যারিয়ারে বড় মোড় আসে। এই বছর তিনি অভিনয় করেন ‘কোটা ফ্যাক্টরি’ ওয়েব সিরিজে। এটি ভারতের তরুণদের মাঝে তুমুল জনপ্রিয়তা পায়। পাশাপাশি আইএমডিবিতে ভারতের সর্বোচ্চ রেটিং পাওয়া সিরিজ হিসেবে জায়গা করে নেয়। সিরিজটিতে ‘জিতু ভাইয়া’ চরিত্রে জিতেন্দ্রর অসামান্য অভিনয় ভূয়সী প্রশংসা পায়।
২০২০ সালে নিজেকেই ছাড়িয়ে যান জিতেন্দ্র। ‘পঞ্চায়েত’ ওয়েব সিরিজে অভিষেক ত্রিপাঠি বা সচিবজির ভূমিকায় অভিনয় করেন তিনি। এই সিরিজটিও ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। শুধু ভারতে নয়, বাংলাদেশসহ পার্শ্ববর্তী আরও অনেক দেশেই এর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। সিরিজটিতে অনবদ্য অভিনয়ের জন্য তিনি ফিল্মফেয়ার ওটিটি পুরস্কারে সেরা অভিনেতার (কমেডি সিরিজ) পুরস্কার অর্জন করেন।
২০২০ সালকে বলা যায় জিতেন্দ্র কুমারের ক্যারিয়ারের সেরা বছর। কেননা এই বছর তিনি বলিউডেও একটি বড় সিনেমায় কাজ করেছেন। এর নাম ‘শুভ মঙ্গল জ্যায়াদা সাবধান’। এতে তিনি অভিনয় করেন আয়ুষ্মান খুরানার সঙ্গে। সিনেমাটি প্রশংসার পাশাপাশি বক্স অফিসেও সাফল্য পেয়েছিল। এছাড়া এ বছর তার অভিনীত ‘চামান বাহার’ সিনেমাটিও মুক্তি পায়। এখানেও জিতুর অভিনয় নজর কাড়ে দর্শক-সমালোচকদের।
সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে ‘পঞ্চায়েত’ সিরিজের দ্বিতীয় সিজন। বহুল প্রতীক্ষিত সিজনটি মুক্তির পরই দর্শক হুমড়ি খেয়ে পড়ছে দেখার জন্য। আগের মতো এবারও প্রশংসার ফুলঝুরি।
ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করে চাকরিতে যোগ দিলে হয়ত মাস শেষে ভালো বেতন পেতেন জিতেন্দ্র কুমার। কিন্তু তিনি সেই সহজ পথ বেছে নেননি। বরং ভরসা রেখেছিলেন নিজের প্রতিভার ওপর। আর অদম্য চেষ্টায় লেগে ছিলেন স্বপ্নের পথে। সেই চেষ্টাই তাকে এখন ওয়েব সিরিজের সফলতম অভিনেতায় পরিণত করেছে।