সংকটকালে শ্রীলঙ্কার নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন রনিল বিক্রমাসিংহে। বৃহস্পতিবার (১২ মে) স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টার দিকে তাকে শপথবাক্য পাঠ করান লঙ্কান প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে। ৭৩ বছর বয়সী অভিজ্ঞ এ রাজনীতিবিদ শ্রীলঙ্কার ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টির (ইউএনপি) নেতা।
ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে বিপর্যস্ত শ্রীলঙ্কা। দুই কোটি ২০ লাখ মানুষের দেশটিতে খাদ্য সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। একই সঙ্গে জ্বালানি তেল, ওষুধসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস হাতের নাগালের বাইরে চলে গেছে। কখনও কখনও দিনে ১৩ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকছে।
এসব সংকটের কারণে জনসাধারণের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে সাধারণ মানুষ। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র না পেয়ে তাদের মনে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। আর এই ক্ষোভ এখন তীব্র বিক্ষোভ আর সংঘাতে রূপ নিয়েছে। যার ফলে ইতোমধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছেন মাহিন্দা রাজাপাকসে। এমনকি প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে এবং তার মন্ত্রিসভাও নড়বড়ে হয়ে গেছে।
দেশটির নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে যাচ্ছেন রনিল বিক্রমাসিংহে। ৭৩ বছর বয়সী এই রাজনীতিবিদ দেশটির ইউএনপি দলের নেতা। ধারণা করা হচ্ছে, বৃহস্পতিবার (১২ মে) স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিটের দিকে তিনি শপথ নিতে পারেন। তার দল এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
গত বুধবার (১১ মে) প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন বিক্রমাসিংহে। বৃহস্পতিবারও তাদের দুজনের সাক্ষাত হতে পারে বলে কলম্বো পেজের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। মাহিন্দা রাজাপাকসের পদত্যাগের পর প্রধানমন্ত্রী পদ নিয়ে বেশ জল্পনা-কল্পনা চলছিল দেশটিতে। তাই সবার নজর এখন রনিল বিক্রমাসিংহের দিকে।
এ নিয়ে পঞ্চম বারের মতো তাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে যাচ্ছেন লঙ্কানরা। এর আগে আরও চারবার তিনি দেশটির প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। সর্বপ্রথম ১৯৯৩ সাল থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত তিনি দেশটির প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।
এরপর ২০০১ থেকে ২০০৪ সাল, ২০১৫ থেকে ২০১৮ সাল এবং ২০১৮ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্তও তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৮ সালের অক্টোবরে সে সময়কার প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা তাকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে বরখাস্ত করেন। কিন্তু এর দুই মাস পরেই তাকে আবারও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
১৯৪৯ সালের ২৪ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন রনিল বিক্রমাসিংহে। ১৯৭৭ সালে প্রথমবারের মতো দেশটির সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি। সে সময় তিনিই সবচেয়ে কম বয়সে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেন। ১৯৯৪ সালের পর থেকে তিনি ইউএনপির নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
বেশ কিছু রাজনৈতিক সূত্রের মতে, শ্রীলঙ্কার ক্ষমতাসীন পোদুজানা পেরামুনা (এসএলপিপি), প্রধান বিরোধী দল সামাগি জানা বালাওয়েগয়ার (এসজেবি) একটি অংশ এবং আরও কয়েকটি দল সংসদে বিক্রমাসিংহের পক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা দেখানোর বিষয়ে সমর্থন প্রকাশ করেছে।
ইউএনপির চেয়ারম্যান ভাজিরা আবেবর্দেনা বলেছেন, বিক্রমাসিংহে সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবেন বলে আশা করছেন তারা। শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে পুরোনো দল হিসেবে পরিচিত ইউএনপি। কিন্তু ২০২০ সালের নির্বাচনে দলটি মাত্র একটি আসন পায়।
এদিকে বুধবার রাতে জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে প্রেসিডেন্টের পদ থেকে সরে দাঁড়াতে অস্বীকৃতি জানান। তবে তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করা হবে।