মাঝরাতে হাড়হিম করা দুর্ঘটনা! কন্টেনারে ধাক্কা লেগে দাউদাউ করে জ্বলল বাস, জীবন্ত দগ্ধ শিশুসহ ৯

রাত তখন আনুমানিক ২টো। জাতীয় সড়কের নিস্তব্ধতা চিরে বেঙ্গালুরু থেকে গোকর্ণের দিকে ছুটে যাচ্ছিল ‘সি-বার্ড’ ট্রাভেলসের একটি যাত্রীবাহী স্লিপার বাস। ঠিক সেই সময় কর্নাটকের হিরিয়ুরের কাছে ঘটে গেল এক মর্মান্তিক বিপর্যয়। একটি মালবাহী কন্টেনারের সঙ্গে বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে মুহূর্তের মধ্যে দাউদাউ করে জ্বলে উঠল আগুন। এই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় একটি শিশুসহ অন্তত ৯ জন যাত্রীর মৃত্যু হয়েছে বলে আশঙ্কা করছে পুলিশ।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে খবর, বাসটি অত্যন্ত দ্রুত গতিতে কন্টেনারটিকে ওভারটেক করতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারায় এবং সরাসরি কন্টেনারের ডিজেল ট্যাঙ্কে ধাক্কা মারে। সংঘর্ষের তীব্রতায় জ্বালানি লিক হয়ে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই বাসে আগুন ধরে যায়। বাসের জানলা দিয়ে আসা আগুনের তাপে এবং ঘন ধোঁয়ায় নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয় যাত্রীদের। যেহেতু এটি একটি স্লিপার বাস ছিল এবং গভীর রাত, তাই অধিকাংশ যাত্রীই তখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ছিলেন। বিপদের গুরুত্ব বুঝে ওঠার আগেই অনেকে কেবিনের ভিতরে আটকে পড়েন।
প্রাণে বেঁচে ফেরা এক যাত্রী আতঙ্কে শিউরে উঠে জানান, “আগুনের শিখা এতটাই দ্রুত ছড়াচ্ছিল যে বাসের প্রধান দরজাটি খোলা যাচ্ছিল না। আমরা মরিয়া হয়ে জানলার কাচ ভেঙে বাইরে ঝাঁপ দিই। কেউ কেউ অন্যদের বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু আগুনের লেলিহান শিখার সামনে যাওয়া অসম্ভব ছিল।” পুলিশ জানিয়েছে, বাসের চালক, ক্লিনার ও কন্ডাক্টর অলৌকিকভাবে প্রাণে বাঁচলেও কন্টেনার লরির চালকের মৃত্যু হয়েছে।
উদ্ধারকারী দল এখনও পর্যন্ত ৫টি দেহ উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে। তবে আগুনের তীব্রতা এতই বেশি ছিল যে মৃতদেহগুলি চেনার উপায় নেই। মৃতদের পরিচয় সুনিশ্চিত করতে পুলিশ এখন ডিএনএ (DNA) টেস্টের সাহায্য নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে। আহত ২২ জন যাত্রীকে উদ্ধার করে নিকটবর্তী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে, যাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
পুলিশ সুপার রবিকান্তে গৌড়া জানিয়েছেন, প্রাথমিক তদন্তে মনে করা হচ্ছে লরিটি ডিভাইডারে উঠে গিয়ে বাসের তেলের ট্যাঙ্কে সজোরে ধাক্কা মারে। গোটা এলাকা এখন শোকস্তব্ধ। রাতের হাইওয়েতে বেপরোয়া গতির বলি হতে হলো নিরীহ প্রাণগুলোকে। পুলিশ পুরো ঘটনার বিস্তারিত তদন্ত শুরু করেছে।