ইতিহাসের বুকে সুরের মূর্ছনা! হায়দ্রাবাদের ৩০০ বছরের পুরনো কুয়োয় ফিরছে প্রাণের স্পন্দন।

হায়দ্রাবাদ মানেই চারমিনার আর নিজামের ইতিহাস। কিন্তু সেকেন্দ্রাবাদ জেলার ৩০০ বছরের পুরনো বাঁশিলালপেট স্টেপওয়েল (Bansilalpet Stepwell) এখন এক অন্য গল্পের সাক্ষী। একসময় যা ছিল অবহেলিত আর জরাজীর্ণ, আজ তা প্রতি সপ্তাহান্তে গান, কবিতা আর শিল্পের শব্দে মুখরিত হয়ে ওঠে। সৌজন্যে—”টাঙ্গি সেশনস” (Tangy Sessions) নামক একদল তরুণ শিল্পীর অনন্য উদ্যোগ।
অতীত ও বর্তমানের মেলবন্ধন: সাধারণ দিনগুলোতে এই স্থাপত্য শান্ত থাকলেও শনিবার এবং রবিবার সন্ধ্যার চিত্রটা বদলে যায়। বিকেল ৫:৪৫ থেকে রাত ৮:০০ টা পর্যন্ত চলে সুরের আসর। অস্তগামী সূর্যের সোনালী আলো যখন প্রাচীন পাথুরে সিঁড়িগুলোতে পড়ে, আর নিচ থেকে উঠে আসা শীতল হাওয়ায় বেহালা বা সুফি গানের সুর ভাসে, তখন এক আধ্যাত্মিক পরিবেশ তৈরি হয়। জলের আয়নায় আলোর প্রতিফলন আর পাথুরে দেওয়ালে সঙ্গীতের অনুরণন দর্শকদের এক মায়াবী জগতে নিয়ে যায়।
কেন এই উদ্যোগ? টাঙ্গি সেশনসের প্রতিষ্ঠাতা অর্জুনের মতে, কেবল স্মারক নির্মাণ করলেই ঐতিহ্য বাঁচে না, তার ভেতরে প্রাণের সঞ্চার করতে হয়। তিনি বলেন, “হায়দ্রাবাদে ঐতিহ্যের অভাব নেই, কিন্তু সেই স্থানগুলোর সঙ্গে সাধারণ মানুষের সংযোগ স্থাপনের জন্য সঙ্গীতের মতো মাধ্যম প্রয়োজন ছিল।” এখানে আসা মানুষগুলো এখন আর কেবল পর্যটক নন, তারা এই ঐতিহ্যের রক্ষক হয়ে উঠেছেন।
মঞ্চে যখন নক্ষত্রদের মেলা: এই প্রাচীন কুয়োর মঞ্চে পরিবেশিত হয় লোকসঙ্গীত, সুফি গান, কবিতা পাঠ, মুশাইরা এবং এমনকি আধুনিক র্যাপ। রাহাত ইন্দোরি থেকে শুরু করে সঞ্জিতা ভট্টাচার্য—বিখ্যাত তারকারা এখানে পারফর্ম করেছেন। আয়োজকরা ধ্বনিবিজ্ঞানের (Acoustics) দিকে কড়া নজর রাখেন, যাতে সঙ্গীতের তরঙ্গ প্রাচীন দেওয়ালের গাম্ভীর্যের সঙ্গে মিশে যায়।
আসন্ন আকর্ষণ: এই সপ্তাহান্তে (২৭ এবং ২৮ ডিসেম্বর) এক বিশেষ চমক অপেক্ষা করছে সঙ্গীতপ্রেমীদের জন্য। বিখ্যাত কাশ্মীরি গায়ক আলী সাফুদ্দিন সুরের জাদু ছড়াবেন এই স্টেপওয়েলে। কাশ্মীরি সুফি কবিতার সঙ্গে রক মিউজিকের সংমিশ্রণে আলীর স্বতন্ত্র শৈলী বিশ্বজুড়ে সমাদৃত। বাঁশিলালপেট স্টেপওয়েলের এই মডেল প্রমাণ করে দিয়েছে যে, সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি থাকলে প্রাচীন ঐতিহ্যকেও নতুন প্রজন্মের পছন্দের গন্তব্য করে তোলা সম্ভব।