১ কোটি অ্যাকাউন্ট ব্যান হয়েও কেন থামছে না প্রতারণা? কেন্দ্রের কড়া প্রশ্নের মুখে হোয়াটসঅ্যাপ

২০২৫ সালে ভারতের সাইবার অপরাধের মানচিত্র এক ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ১ কোটি (৯.৮ মিলিয়ন) ভারতীয় হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট নিষিদ্ধ বা ব্যান করা হয়েছে। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হলো, এত বিপুল সংখ্যক অ্যাকাউন্ট ব্লক করার পরেও স্ক্যামারদের রোখা যাচ্ছে না। কেন এই ব্যর্থতা? এই প্রশ্নই এখন ভারত সরকারকে ভাবিয়ে তুলেছে।

এক নজরে ২০২৫-এর হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট ব্যান রিপোর্ট (মিলিয়নে):

মাস ব্যান হওয়া অ্যাকাউন্টের সংখ্যা
মার্চ ১১.১ মিলিয়ন (সর্বোচ্চ)
মে ১১.২ মিলিয়ন
সেপ্টেম্বর ১০.০ মিলিয়ন
অক্টোবর ৯.১ মিলিয়ন

অ্যাকাউন্ট ব্যান সত্ত্বেও স্ক্যাম না থামার কারণ:

১. জাল সিম কার্ডের অপব্যবহার: স্ক্যামাররা সাধারণত ভুয়া পরিচয়ে নেওয়া (+91) মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে। একবার হোয়াটসঅ্যাপে অ্যাকাউন্ট ব্যান হলে, তারা সিম কার্ড ফেলে দেয় বা অন্য প্ল্যাটফর্মে চলে যায়।

২. টেলিগ্রামের যোগসূত্র: লক্ষ্য করা গেছে যে, হোয়াটসঅ্যাপ থেকে ব্যান হওয়া নম্বরগুলি প্রায়ই টেলিগ্রামে পুনরায় সক্রিয় হয়ে ওঠে। যেহেতু এই অ্যাপগুলি একবার রেজিস্টার হওয়ার পর সক্রিয় সিম ছাড়াই চলে, তাই অপরাধীদের ট্র্যাক করা অসম্ভব হয়ে পড়ে।

৩. ডেটা শেয়ারিংয়ে অনীহা: হোয়াটসঅ্যাপ তাদের কমপ্লায়েন্স রিপোর্টে সংখ্যা জানালেও, ব্যান করা নম্বরগুলির বিস্তারিত তথ্য সরকারকে দিচ্ছে না। সরকারের দাবি, এই নম্বরগুলির পরিচয় না জানলে জাল নম্বর শনাক্ত করা অসম্ভব।

ডিজিটাল অ্যারেস্ট ও নিরাপত্তা ঝুঁকি:

সরকারি কর্মকর্তাদের দাবি, ভারতে হওয়া প্রায় ৯৫% ‘ডিজিটাল অ্যারেস্ট’ স্ক্যাম এবং পরিচয় চুরির ঘটনা হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমেই সংঘটিত হচ্ছে। অপরাধীরা এনক্রিপশনের সুযোগ নিয়ে পুলিশের নজরদারি এড়িয়ে যাচ্ছে।

সরকারের দাবি ও হোয়াটসঅ্যাপের অবস্থান:

  • সরকারের অবস্থান: ভারত সরকারের ইলেকট্রনিক্স ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রক (MeitY) স্পষ্ট করেছে যে, তাদের ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত চ্যাট দেখার প্রয়োজন নেই। তারা শুধু ব্যান হওয়া মোবাইল নম্বরগুলির তালিকা চায় যাতে করে সেগুলোর KYC যাচাই করা যায়।

  • হোয়াটসঅ্যাপের অবস্থান: অন্যদিকে, হোয়াটসঅ্যাপ জানাচ্ছে তাদের ‘এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন’ নীতির কারণে অ্যাকাউন্ট স্তরের তথ্য শেয়ার করা আইনি ও প্রযুক্তিগতভাবে জটিল।


সতর্কতা: স্ক্যাম থেকে বাঁচতে কী করবেন?

  • অচেনা নম্বর (+91 বা আন্তর্জাতিক) থেকে আসা কোনো অডিও বা ভিডিও কল রিসিভ করবেন না।

  • নিজেকে পুলিশ বা সিবিআই পরিচয় দিয়ে কেউ ‘ডিজিটাল অ্যারেস্ট’-এর ভয় দেখালে আতঙ্কিত হবেন না। মনে রাখবেন, সরকারি সংস্থা এভাবে অনলাইনে কাউকে গ্রেফতার করে না।

  • আপনার হোয়াটসঅ্যাপে অবিলম্বে টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন চালু করুন।