বাংলাদেশে হু হু করে কমছে হিন্দুদের সংখ্যা, ‘আমরা তো জিন্দা লাশ’; বলছেন সনাতনীরা

অশান্ত বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের জীবন এখন চরম অস্তিত্ব সংকটে। কয়েকদিন আগেই যুবক দীপু চন্দ্র দাসকে পিটিয়ে হত্যার নৃশংস ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছিল বিবেককে। সেই রেশ কাটতে না কাটতেই চট্টগ্রামে হিন্দু জনবসতিতে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার মতো ঘটনা নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। দুষ্কৃতীরা সেখানে সাফ জানিয়ে দিয়েছে, তাঁদের কথা না শুনলে পরিণতি হবে ভয়াবহ। কিন্তু এই বিচ্ছিন্ন ঘটনাগুলো হিমশৈলের চূড়া মাত্র; পরিসংখ্যান বলছে ওপার বাংলায় হিন্দুদের ওপর অত্যাচারের মাত্রা এখন আকাশচুম্বী।
পরিসংখ্যানে শিউরে ওঠা তথ্য: ভারতের বিদেশমন্ত্রকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার হার অবিশ্বাস্যভাবে বেড়েছে। ২০২২ সালে যেখানে ৪৭টি আক্রমণের খবর নথিভুক্ত হয়েছিল, ২০২৪ সালে সেই সংখ্যা লাফিয়ে পৌঁছেছে ৩,২০০-তে। অর্থাৎ মাত্র দুই বছরে হামলা বেড়েছে কয়েকশ গুণ! বিদেশ প্রতিমন্ত্রী কীর্তি বর্ধন সিং সংসদে জানিয়েছেন, ২০২৪ সালের আগস্ট মাস থেকে পরবর্তী কয়েক মাসে ২৩ জন হিন্দুর মৃত্যু হয়েছে এবং ১৫২টি মন্দিরে হামলা চালানো হয়েছে।
জনসংখ্যা হ্রাসের করুণ চিত্র: হামলার পাশাপাশি বাংলাদেশে হিন্দুদের আনুপাতিক হারও উদ্বেগের বিষয়। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশে হিন্দু জনসংখ্যা ছিল মোট জনসংখ্যার ১৩.৫ শতাংশ। ২০২২ সালের আদমসুমারি অনুযায়ী, তা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৭.৯৫ শতাংশে। এর বিপরীতে মুসলিম জনসংখ্যা ৮৫.৪ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯১.০৮ শতাংশে। বিশ্লেষকদের মতে, দশকের পর দশক ধরে অর্থনৈতিক শোষণ এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের জমি দখলের ঘটনা এই সংখ্যাতাত্ত্বিক পরিবর্তনের অন্যতম কারণ।
ভয়ে থমথমে জনজীবন: বর্তমানে বাংলাদেশে হিন্দুরা যে কতটা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন, তা স্পষ্ট এক ভুক্তভোগীর বয়ানে। এক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “আমরা নামেই বেঁচে আছি, আসলে আমরা এক একজন জিন্দা লাশ। আজ রাতে ঘুমোলে কাল সকালে আর সূর্য দেখতে পাব কি না, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।” যদিও বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কিছু গ্রেফতারি ও তদন্তের কথা বলছে, কিন্তু সাধারণ হিন্দুদের মনে নিরাপত্তার লেশমাত্র নেই।