বেলুড় মঠে যীশু আরাধনা! সন্ন্যাসীদের কণ্ঠে ক্যারল আর কেক প্রসাদ, সম্প্রীতির অনন্য ছবি বেলুড়ে!

আজ ২৪ ডিসেম্বর, ক্রিসমাস ইভ। শহর থেকে শহরতলি যখন আলোকসজ্জা আর উৎসবের আমেজে মাতোয়ারা, তখন হাওড়ার বেলুড় মঠে ধরা পড়ল এক ভিন্ন আধ্যাত্মিক আবহ। প্রতি বছরের মতো এবারও রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সদর কার্যালয়ে মহাসমারোহে পালিত হলো যীশুখ্রীস্টের আরাধনা। দুর্গাপুজো বা জগদ্ধাত্রী পুজোর মতোই বেলুড় মঠের পঞ্জিকায় এই দিনটির গুরুত্ব অপরিসীম।
বুধবার সন্ধ্যারতির পর শ্রীরামকৃষ্ণের মূল মন্দিরের বাইরে একটি সুসজ্জিত অস্থায়ী মঞ্চে মা মেরি ও শিশু যীশুর ছবি স্থাপন করা হয়। প্রথা মেনে যীশুখ্রীস্টের প্রিয় কেক, পেস্ট্রি, ফল ও মিষ্টি নিবেদন করে চলে বিশেষ পূজা। এই অনুষ্ঠানের প্রধান আকর্ষণ ছিল সন্ন্যাসীদের কণ্ঠে যীশুখ্রীস্টের বন্দনা ও ক্যারল গান। পাশাপাশি উপস্থিত ভক্তদের সামনে বাইবেল পাঠ এবং যীশুর ত্যাগ ও সাহসিকতার জীবনী বর্ণনা করা হয়।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট: বেলুড় মঠে এই যীশু পুজোর সূচনার পিছনে রয়েছে এক গভীর ইতিহাস। ১৮৮৬ সালে শ্রীরামকৃষ্ণের মহাপ্রয়াণের পর স্বামী বিবেকানন্দ তাঁর আটজন গুরুভাইকে নিয়ে হুগলি জেলার আঁটপুরে স্বামী প্রেমানন্দের (বাবুরাম মহারাজ) বাড়িতে গিয়েছিলেন। ২৪ ডিসেম্বর রাতে একটি অগ্নিকুণ্ড (ধুনি) জ্বালিয়ে সন্ন্যাসীরা যখন ধর্মীয় আলোচনায় মগ্ন, তখন স্বামীজী যীশুখ্রীস্টের মহান আত্মত্যাগের কথা শোনান। সেই রাতে অনুপ্রাণিত হয়েই তাঁরা সন্ন্যাস ধর্ম গ্রহণের চূড়ান্ত সংকল্প করেছিলেন। পরে তাঁরা জানতে পারেন, সেই রাতটি ছিল খ্রীষ্টানদের পবিত্র ‘ক্রিসমাস ইভ’। সেই থেকেই এই দিনটি রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনে বিশেষভাবে পালিত হয়ে আসছে।
আজকের এই বিশেষ মুহূর্তে বেলুড় মঠের পাশাপাশি সাজানো হয়েছে ব্যান্ডেল চার্চ, চন্দননগর এবং কলকাতার পার্ক স্ট্রিটও। তবে বেলুড় মঠের এই উদযাপন কেবল একটি উৎসব নয়, এটি স্বামীজীর সেই ‘যত মত তত পথ’ এবং সর্বধর্ম সমন্বয়ের আদর্শেরই এক জীবন্ত প্রতিফলন।