রেললাইনে হাতি-সিংহ এলেই বাজবে অ্যালার্ম! ভারতীয় রেলে নয়া এআই-চমক, আর হবে না দুর্ঘটনা?

রেললাইন মানেই কি বন্যপ্রাণীদের মৃত্যুফাঁদ? এই অভিশাপ মুছতে এবার কোমর বেঁধে নামল ভারতীয় রেল। জঙ্গলের বুক চিরে চলে যাওয়া ট্রেনের ধাক্কায় একের পর এক হাতির মৃত্যুর ঘটনায় বারবার প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে রেল কর্তৃপক্ষকে। এবার সেই সমস্যার স্থায়ী সমাধানে অত্যাধুনিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) এবং ইনট্রুশন ডিটেকশন সিস্টেম (IDS)-এর ওপর ভরসা রাখছে রেল দপ্তর।

কীভাবে রুখবে দুর্ঘটনা? রেল সূত্রে খবর, রেললাইনের আশেপাশে হাতি বা অন্য কোনো বন্যপ্রাণীর গতিবিধি শনাক্ত করতে ব্যবহার করা হচ্ছে ডিস্ট্রিবিউটেড অ্যাকোস্টিক সিস্টেম (DAS)। এই সিস্টেমে যুক্ত এআই-ভিত্তিক ক্যামেরাগুলো লোকো পাইলটদের নির্দিষ্ট জায়গার অন্তত ০.৫ কিলোমিটার (৫০০ মিটার) আগে থেকে সতর্কবার্তা পাঠিয়ে দেবে। ফলে ট্রেন থামানোর বা গতি কমানোর পর্যাপ্ত সময় পাবেন চালক। রিয়েল-টাইম এই সতর্কতা পৌঁছে যাবে স্টেশন মাস্টার এবং কন্ট্রোল রুমেও।

সাফল্য ও সম্প্রসারণ: ইতিমধ্যেই উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলওয়ের ১৪১ কিলোমিটার অংশে এই ব্যবস্থা পরীক্ষামূলকভাবে সফল হয়েছে। প্রযুক্তিটি অত্যন্ত কার্যকর হওয়ায় এবার সারা ভারত জুড়ে আরও ৯৮১ কিলোমিটার রেলপথে এটি স্থাপনের জন্য টেন্ডার ডাকা হয়েছে। সব মিলিয়ে মোট ১,১২২ কিলোমিটার এলাকা এই ডিজিটাল সুরক্ষা বলয়ের আওতায় আসবে।

কেন বারবার রেললাইনে হাতির মৃত্যু? বিশেষজ্ঞদের মতে, বাসস্থানের অভাব এবং প্রাচীন করিডোরগুলো অবরুদ্ধ হয়ে যাওয়ার কারণেই হাতিরা রেললাইনে উঠে আসে। কুয়াশা বা রাতের অন্ধকারে লোকো পাইলটদের পক্ষে হাতি দেখা অসম্ভব হয়ে পড়ে, যার ফলে ঘটে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। উত্তরবঙ্গে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে সাফল্য মিললেও দক্ষিণবঙ্গে এখনও কিছু জায়গায় উদ্বেগ জারি রয়েছে। এমনকি সাম্প্রতিককালে ‘রাজধানী এক্সপ্রেস’-এর ধাক্কায় হাতি মৃত্যুর ঘটনা রেলের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে।

নিরাপত্তার নতুন দিগন্ত: রেল আধিকারিকদের দাবি, এই এআই সিস্টেম শুধু প্রাণীদের জীবনই বাঁচাবে না, বরং ট্রেনের ইঞ্জিন বা বগির ক্ষয়ক্ষতি এবং ট্রেন চলাচলে বিঘ্ন ঘটার মতো সমস্যাও রুখে দেবে। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ এবং নিরাপদ ট্রেন চলাচলের মেলবন্ধনে এটি ভারতীয় রেলের একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।