মনরেগা অতীত, এল ‘জিরামজি’! নাম থেকে বাদ গান্ধীজি, বিরোধীদের প্রবল বিক্ষোভের মধ্যেই সংসদে পাশ ঐতিহাসিক বিল

২০ বছরের পুরনো ‘মহাত্মা গান্ধী জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান গ্যারান্টি আইন’ বা MGNREGA-কে ইতিহাস বানিয়ে দিল মোদী সরকার। বৃহস্পতিবার লোকসভার পর শুক্রবার মধ্যরাতে বিরোধীদের তুমুল হই-হট্টগোলের মধ্যেই রাজ্যসভায় পাশ হয়ে গেল নতুন গ্রামীণ কর্মসংস্থান বিল— ‘বিকশিত ভারত গ্যারান্টি ফর রোজগার অ্যান্ড আজীবিকা মিশন’, সংক্ষেপে যা জিরামজি (G-RAM-G) বিল নামে পরিচিত।
কী আছে এই নতুন বিলে? সরকারের দাবি, এই বিল গ্রামীণ অর্থনীতিতে আমূল পরিবর্তন আনবে। এর প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি হলো:
কাজের দিন বৃদ্ধি: বছরে ১০০ দিনের পরিবর্তে এখন থেকে ১২৫ দিনের কাজের আইনি গ্যারান্টি দেওয়া হবে।
স্থায়ী সম্পদ সৃষ্টি: শুধু গর্ত খোঁড়া নয়, বরং জল সংরক্ষণ, গ্রামীণ পরিকাঠামো এবং জলবায়ু পরিবর্তন রুখতে পারে এমন স্থায়ী সম্পদ তৈরির ওপর জোর দেওয়া হবে।
ডিজিটাল স্বচ্ছতা: বায়োমেট্রিক হাজিরা এবং এআই (AI) চালিত অ্যানালিটিক্স-এর মাধ্যমে দুর্নীতি রোখার ব্যবস্থা।
অর্থ বরাদ্দ: কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে খরচের অনুপাত হবে ৬০:৪০ (উত্তর-পূর্ব ও পাহাড়ি রাজ্যের জন্য ৯০:১০)।
বিরোধীদের আপত্তির কারণ কী? বিলটি পাশ হওয়ার সময় তৃণমূল কংগ্রেস, কংগ্রেস-সহ বিরোধী সাংসদরা ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখান। তাঁদের প্রধান অভিযোগগুলি হলো: ১. গান্ধীজির নাম বাদ: প্রকল্পের নাম থেকে মহাত্মা গান্ধীর নাম সরিয়ে দেওয়াকে ‘জাতির জনকের অপমান’ বলে দাবি করেছেন বিরোধীরা। ২. রাজ্যের ওপর চাপ: প্রকল্পের ৪০ শতাংশ খরচ রাজ্যকে বহন করতে হবে, যা যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর ওপর আঘাত বলে মনে করছে তৃণমূল। ৩. ভোটের রাজনীতি: মহুয়া মৈত্র এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো নেতারা অভিযোগ করেছেন, নাম বদলে ‘রাম’ নাম জুড়ে দিয়ে বিজেপি ধর্মীয় মেরুকরণের চেষ্টা করছে।
সংসদ চত্বরে রাতভর বিক্ষোভ: বিলটি পাশের প্রতিবাদে সংসদ ভবনের বাইরে সংবিধান সদনের সামনে তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদরা ১২ ঘণ্টার প্রতীকী ধরনায় বসেন। ডেরেক ও’ব্রায়েন ও মহুয়া মৈত্ররা অভিযোগ করেন, নিয়ম ভেঙে মধ্যরাতে বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করে এই বিল পাশ করানো হয়েছে।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান অবশ্য পাল্টা দাবি করেছেন যে, গান্ধীজির আদর্শ কেবল নামে নয়, কাজের মাধ্যমেই বাস্তবায়িত করছে এনডিএ সরকার।